গত শুক্রবার (২১ এপ্রিল) আফগানিস্তানে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে দেশটির দুটি প্রদেশে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করেছে তালেবান। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
শুক্রবার একই স্টাইলে লেখা পৃথক দুটি নির্দেশনায় বলা হয়, ‘ঈদুল ফিতরের দিনগুলোতে নারীদের দলবেঁধে বাইরে বের হওয়া নিষিদ্ধ।’ এই নির্দেশ শুধুমাত্র তাখার ও বাগলান প্রদেশে জারি করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মাসের শুরুতে তালেবান কর্তৃপক্ষ আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে বাগান ও সবুজে ঘেরা রেস্টুরেন্টগুলোতে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। হিজাব না পরা এবং নারী-পুরুষ একসঙ্গে মেলামেশা করায় আপত্তি জানানোর পর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
২০২১ সালের আগস্টে তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পর থেকে নারীদের দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জিমনেসিয়াম ও জনসমাগম এলাকায় তাদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে তালেবান কর্তৃপক্ষ আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে বাগান ও সবুজে ঘেরা রেস্টুরেন্টগুলোতে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নানগারহার প্রদেশে নারী ত্রাণ কর্মীদের কাজ নিষিদ্ধ করেছে। ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও জাতিসংঘে নারীদের কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে আফগানিস্তানে রেস্তোরাঁয় নারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালেবানরা। ১০ এপ্রিল মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ জানায়, এ নিষেধাজ্ঞা কেবল হেরাত প্রদেশে খোলা মাঠসহ রেস্তোরাঁগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
ফক্স নিউজ জানায়, খোলা মাঠসহ রেস্তোরাঁগুলোতে নারী-পুরুষের মেলামেশা নিয়ে অভিযোগ করার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তালেবান কর্মকর্তারা।
এদিকে হেরাতের আফগানিস্তানের নৈতিকতা বিষয়ক বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা বাজ মোহাম্মদ নাজির জানান, হেরাতের যেসব রেস্তোরাঁ ও খোলা মাঠে পুরুষের প্রবেশাধিকার রয়েছে, সেগুলোতেই নারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
হেরাতে নৈতিকতা বিষয়ক বিভাগের প্রধান আজিজুর রহমান আল মুহাজির বলেন, ‘এসব জায়গা আসলে পার্কের মতো। এগুলোকে রেস্তোরাঁ নাম দিয়ে চালানো হচ্ছে। সেখানে নারী ও পুরুষ একসঙ্গে কাজ করছেন। এখন এগুলোর নাম সংশোধন করা হয়েছে। নারী ও পুরুষ একসঙ্গে যান এমন পার্কগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
এছাড়া আফগানিস্তানে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নারীদের পরিচালিত একমাত্র রেডিও কেন্দ্র। অভিযোগ পবিত্র রমজান মাসে সংগীত পরিবেশন করা হয়েছিল এই কেন্দ্রটি থেকে। তবে কেন্দ্রটির প্রধান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি এটিকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন।
রেডিও কেন্দ্রটির নাম ‘সদাই বানোয়ান’। এর অর্থ নারীদের কণ্ঠ। ১০ বছর আগে এটি চালু হয়েছিল। এটিতে আটজন কর্মী কাজ করেন, যার ছয়জনই নারী।
আফগান ইনডিপেনডেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখল করার পর থেকে অনেক সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন। তহবিলের অভাবে বা কর্মীরা দেশ ছেড়ে যাওয়ায় অনেক গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যায়।
যেসব গণমাধ্যমকর্মী তালেবান নীতির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেননি, তাদের গ্রেপ্তার হতে হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেককে আবার মুক্তি পাওয়ার পর নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
তালেবান দেশটিতে নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এমনকি পঞ্চম শ্রেণির ওপর মেয়েদের পড়াশোনাও বন্ধ করে দিয়েছে। তবে গানবাজনার ওপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি।
১৯৯০–এর দশকে তালেবান তাদের শাসনকালে দেশটির বেশির ভাগ টেলিভিশন, রেডিও ও পত্রিকা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।
তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে আফগানিস্তানে নারীদের পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ ছাড়াও তালেবানরা ষষ্ঠ শ্রেণির পর নারীদের পড়াশোনার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের পড়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এসডব্লিউএসএস/১৩৩৫
আপনার মতামত জানানঃ