চীনের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, চাঁদের মাটিতে এক ক্ষুদ্র কাঁচের অংশে পানি থাকার অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। এসব কাঁচের পুঁতি তখন তৈরি হয় যখন মহাকাশের সাথে চাঁদের পৃষ্ঠের সংঘর্ষ ঘটে। পূর্বের গবেষণার মাধ্যমে চাঁদে পানির উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছিল।
তবে এ পানি কোথায় জমা হয় এবং কীভাবে সেখানে পৌঁছেছে এসব অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। চীনের বিজ্ঞানীরা কয়েক সপ্তাহ জুড়ে চন্দ্রপৃষ্ঠ হতে বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করছে। কাঁচের পুঁতিতে যে জল পাওয়ার কথা বলা হয়েছে সেটি গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রাখবে।
এটি চন্দ্রের পানির চক্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পানির কিছু অংশ আবার মহাকাশে বিলীন হয়ে যেতে পারে। প্রতিটি কাঁচের পুঁতি প্রায় দুই হাজার মাইক্রগ্রাম পর্যন্ত জল ধরে রাখতে সক্ষম।
সিগনেচার এনালাইসিস এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন যে, কাচের পুঁতিগুলি মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে পানি ধরে রাখতে পারে। চাঁদের মিশনটি সফল হওয়ার জন্য পানি সম্পর্কিত এই গবেষণাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
চন্দ্রপৃষ্ঠে এরকম বড় জলাধার থাকলে দীর্ঘ সময় ধরে এখানে বসবাস করা আরো সহজ হয়ে যাবে। রিসার্চ টিম বলছে যে, চাঁদের মত অন্যান্য ’বায়ুবিহীন দেহ’ তাদের স্তরে একই পদ্ধতিতে জল সঞ্চয় করতে পারে। এখানে ’বায়ুবিহীন দেহ’ বলতে ধুমকেতু এবং গ্রহাণুকে বোঝানো হয়েছে।
একই পদ্ধতিতে গ্রহণু এবং ধূমকেতু জল সঞ্চয় করতে পারে এবং এটিকে আবার মহাকাশে ছেড়ে দিতে সক্ষম। চাইনিজ একাডেমি অফ সাইন্সেস এর ভূ-পদার্থবিদ এবং গবেষক এ কথা বলেছেন।
চন্দ্রপৃষ্ঠ হতে পাওয়া নমুনাগুলি বিশ্লেষণ করে আরও চমৎকার তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। চন্দ্রপৃষ্ঠের পানি চক্রের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে মহাকাশ অনুসন্ধান এবং দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, এক সময় মনে করা হতো, চাঁদ সম্পূর্ণ শুকনো। সামান্য পানিও সেখানে নেই। কিন্তু এগারো বছর আগে প্রথম নাসার এক বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন, চাঁদেও পানি আছে।
২০২০ সালে ‘নেচার অ্যাসট্রনমি’ পত্রিকায় বিজ্ঞানীরা জানান, প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ পানি আছে চাঁদে। এতো দিন বিজ্ঞানীরা তা বুঝতে পারেননি কারণ, চাঁদের যে অংশে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, সেখানে বরফের আকারে জমে আছে অনেক পানি। কয়েক কোটি বছর ধরে ওই পানি ওই ভাবে জমে থাকার কারণে বিজ্ঞানীরা তা বুঝতে পারেননি।
যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির গ্রহ বিজ্ঞান এবং অনুসন্ধানের অধ্যাপক মহেশ আনন্দ এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেসকে (এএফপি) জানিয়েছেন, যখন রোদ থাকে তখন জলের অণুগুলি ‘চন্দ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠতে’ দেখা যায়।
নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণার সহ-লেখক আনন্দ বলেছেন, ‘তবে ঠিক কোথা থেকে পানি আসছে তা জানা যায়নি।’
প্রসঙ্গত, প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে সৌরজগতের বাইরে থেকে আসা থিয়া নামের একটি নবীন গ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর মুখোমুখি সংঘর্ষে জন্ম হয় চাঁদের। আর এবার থিয়া-পৃথিবীর সংঘর্ষ, চাঁদের জন্ম ও পৃথিবীতে পানির আবির্ভাব নিয়ে নতুন এক তথ্য হাজির করেছেন তারা।
তাদের ভাষ্য, থিয়া পৃথিবীকে আঘাত করায় যেমন চাঁদের জন্ম হয় তেমনি পৃথিবীতে পানির আবির্ভাব হয়। গ্রহ দুইটির সংঘর্ষ না ঘটলে পৃথিবীতে পানিও হয়তো থাকত না। আর প্রাণেরও আবির্ভাব ঘটত না।
জার্মানির মুনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল জীবাশ্ম বিজ্ঞানীর এমন দাবি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ন্যাচার অ্যাস্ট্রোনমি সাময়িকীতে। বিজ্ঞানীদের দাবি, পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময়েই সৌরজগতের বাইরে থেকে আসা থিয়া গ্রহটি আমাদের প্রিয় গ্রহে পানি এনে দিয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৫০
আপনার মতামত জানানঃ