সাংবাদিকতা পেশা হিসেবে এমনিতেই চ্যালেঞ্জের। এছাড়া প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সংবাদ সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে নানা ধরনের ঝুঁকিও বিদ্যমান। তদুপরি সাংবাদিকরা এই চালেঞ্জকে মোকাবিলা করেই পেশাগত কাজ করেন। কিন্তু বিশ্বজুড়ে যদি একের পর এক সাংবাদিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতেই থাকে, তবে তা কতটা উদ্বেগজনক বলার অপেক্ষা রাখে না।
মেক্সিকোর সাংবাদিকদের জন্য ২০২২ সালটা ভালো কাটেনি। গত বছর রেকর্ড পরিমাণ মেক্সিকান সাংবাদিক হয়রানি, নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন। গণমাধ্যম নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার মেক্সিকান সাংবাদিকদের ঘটনাগুলো ২০০৭ সাল থেকে পর্যবেক্ষণ করছে আর্টিকেল নাইনটিন। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত সংগঠনটির সবশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ৬৯৬ জন মেক্সিকান সাংবাদিক হয়রানি, নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
২০০৭ সাল থেকে সংগ্রহ করা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২২ সালে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সাংবাদিক হয়রানি, নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এমনকি এ বছর দেশটিতে প্রতি ১৩ ঘণ্টায় একজন করে সাংবাদিক হয়রানি, নির্যাতন ও সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মেক্সিকোয় সাংবাদিকদের হত্যা করা হয়েছে। অহরহ তাঁদের হয়রানি করা হয়েছে, ভয় দেখানো হয়েছে, চুপ করানো হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের মুখোমুখি হতে হয়েছে দেশটির সাংবাদিকদের। মূলত মুখ বন্ধ করার জন্য সাংবাদিকদের ওপর এমন খড়্গ নেমে আসে।
মেক্সিকোয় ২০২২ সালে ১২ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে আর্টিকেল নাইনটিন। এর আগে ২০১৭ সালেও দেশটিতে একই সংখ্যক সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছিলেন। গত বছর মেক্সিকান সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভয় দেখানোর ১৮১টি ঘটনা চিহ্নিত করেছে সংগঠনটি।
আটিকেল নাইনটিন-এর পরিচালক লিওপোলদো মালদোনাদো বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে দেশটির সরকারের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সাংবাদিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারও সংকুচিত হয়ে এসেছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে ‘কার্যত অস্তিত্বহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ম্যানুয়েল লোপেজের অম্লমধুর সম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়। এ জন্য সমালোচিত হয়েছেন তিনি। এমনকি আন্দ্রেজ ম্যানুয়েল লোপেজের প্রশাসনের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিকসহ ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর ইসরায়েলি পেগাসাস প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় অবৈধ নজরদারির অভিযোগও উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে-ই সুযোগ পাচ্ছে সে-ই সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন করছে৷ সেটা যে শুধু সরকারি দলের লোক তা নয়, ব্যবসায়ীরা করছে, অর্থশালীরা করছে৷ আসলে সাংবাদিকদের খবরটি যাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, তারাই এটা করছে৷
তারা মনে করেন নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তি হলে বারবার নির্যাতনের ঘটনা ঘটতো না৷ তারা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী৷ বিচারের জন্য বছরের পর বছর ঘুরতে হচ্ছে৷
সংশ্লিষ্টরা জানান, যাদের বিরুদ্ধে খবর হচ্ছে, তারাই হামলা করছে৷ যারা অন্যায় করে, দখল করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, তারাই হামলাকারী৷ আবার নির্দিষ্ট কোনো পেশার সবাই কিন্তু এটা করেন না৷ এই খারাপ মানুষগুলোই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কথা বলেন৷ আমাদের এখন থেকে শক্তভাবে প্রতিবাদ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছর বিশ্বে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ৬৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট (আইজেএফ) ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে কর্মরত অবস্থায় সাংবাদিকদের হতাহতের এক তালিকা প্রকাশ করেছে। ২০২১ সালে ৪৭ জন জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হন।
আইএফজে বলছে, গত বছর অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় ইউক্রেনে যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। এই নিহতের সংখ্যা মোট ১২ জন।
এসডব্লিউএসএস/১৬৩০
আপনার মতামত জানানঃ