অস্বাস্থ্যকর যৌনজীবন, নেই সুরক্ষার ধারণা, প্রতিদিন প্রায় ১০০ শিশু জন্মাচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে। রোহিঙ্গা শিবির মানেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একই জায়গায় একসঙ্গে অগুণতি মানুষের বাস। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে কোনক্রমে জীবন যাপনের চিত্র।
অসহায় হয়ে নিজের দেশ ছেড়ে অচেনা কোনও দেশের এককোণে পড়ে থাকা একঝাঁক মানুষ। বাংলাদেশের অসংখ্য সমস্যার মধ্যে মায়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কট বড় সমস্যা হয়ে উঠছে।
মায়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বাস বাংলাদেশের কক্সবাজারে। অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন এবং অশিক্ষার অন্ধকারে থাকা মানুষগুলোর পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে কোনও ধারণাই নেই।
তথ্য বলছে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৯৫ টি শিশু জন্মগ্রহণ করে এই শরণার্থী শিবিরে।
ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশন ফর রিফিউজির এক তথ্যে জানা গেছে, কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে রোহিঙ্গা সংখ্যা ৯,৫৪,৭০৭ জন। মোট পরিবারের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ।
সুতরাং হিসেব বলছে, গড়ে প্রতি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৮ জন। আশ্রয় শিবিরগুলিতে রোহিঙ্গাদের ৫২ শতাংশই হল শিশু। সকলের বয়স ১৭ বছরের কম। এই তথ্যই চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়, জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তেমন ভাবনা নেই। এমনকি কন্ডোম বা গর্ভনিরোধক বড়ি সম্বন্ধে কোনও ধারণাই নেই সেখানকার মানুষদের।
রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে পরিস্থিতি সামাল না দিলে শিশু জন্মহার বৃদ্ধির পরিণতি খুব একটা সুখকর হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ সরকার। কারণ, এভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা ১২-১৩ লক্ষে পৌঁছে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী তিন মাসে মিয়ানমারে সেনা নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা নারী গর্ভবতী অবস্থায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এই উদ্বাস্তু জীবনেও থেমে নেই তাদের বিয়ে-শাদির মতো সামাজিক অনুষ্ঠান।
এর আগে থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত ছিল প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা। নতুন করে প্রবেশের পর গত ৫ বছরে শিবিরগুলোতে জন্ম নিয়েছে প্রায় দেড় লাখ শিশু। তবে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বয়ের অভাবে সঠিক তথ্য নেই।
প্রসঙ্গত, অসুরক্ষিত যৌনতার জন্য রোহিঙ্গা শিবিরে নানান রকম রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এইচআইভি, ডিপথেরিয়ার মতো রোগের বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে শরণার্থীশিবিরে।
সিভিল সার্জন অফিস ইউএনএইচসিআরের বরাত দিয়ে জানিয়েছে গত ৫ বছরে ১ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয়েছে।
বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের জানিয়ে কক্সবাজার সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, নতুন নতুন রোহিঙ্গা শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার তথ্য মূলত পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কাছে থাকার কথা। আমাদের হাতে মূলত এসব তথ্য থাকে না।
বর্তমানেও সন্তান সম্ভাবা রয়েছে হাজারও রোহিঙ্গা নারী। ফলে বিষয়টি নিয়ে প্রবল উদ্বেগ ও আতঙ্কে রয়েছে প্রশাসন ও স্থানীয় অধিবাসীরা। তাদের মতে যে হারে রোহিঙ্গা শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। যেকোনোভাবে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে অচিরেই প্রাকৃতিক বৈচিত্র, খাদ্য, চোরাচালান, শ্রমবাজার দখলসহ বিভিন্ন সমস্যায় কক্সবাজারে জনবিস্ফোরণ ঘটবে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ক্যাম্পগুলোতে প্রতিদিন গড়ে জন্ম নিচ্ছে শতাধিক শিশু। বিপুল এই জনস্রোতের পরিসেবা জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। আর ক্রমাগত অপরাধে জড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের কারণে নানাভাবে আন্তর্জাতিক পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রভাব পড়েছে। তারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় কক্সবাজারে আতঙ্কে সময় কাটছে পর্যটকদের।
এসডব্লিউএসএস/১৩৫০
আপনার মতামত জানানঃ