৫ থেকে ৭ হাজার বছর আগের মানুষ অস্ত্রোপচার করত বলে অনুমান রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক একটি আবিষ্কার বলছে ৫ থেকে ৭ হাজার বছর আগে নয় বরং তারও অন্তত ২৪ হাজার বছর অর্থাৎ অন্তত ৩০/৩১ হাজার বছর আগেও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার মানুষ চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার করেছে। প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও—যা স্থানীয়ভাবে কালিমানতাং নামে পরিচিত—পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারস্থল। সম্প্রতি সেখানে অভিযান চালান অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। প্রাগৈতিহাসিক যুগ সম্পর্কে ইতিহাসবিদদের ধারণাই বদলে দিয়েছে এই নতুন আবিষ্কার। ইন্দোনেশিয়ার এই কঙ্কালের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘নেচার’-এ।
সেখানেই বলা হয়েছে, আজ থেকে ১০ হাজার বছর আগে কৃষিকেন্দ্রিক যে সমাজ গড়ে উঠেছিল, সেখানে রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে মানুষ সচেতন হয়ে উঠছিলেন। সেই প্রেক্ষিতেই বদল এসেছিল চিকিৎসা ব্যবস্থায়।
উপদ্বীপে অবস্থিত গুহা লিয়াং তেবোতে একটি প্রাচীন সমাধির খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া প্রাচীনতম সমাধি বলেই ধারণা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীর বলছেন, তারা ৩১ হাজার বছরের পুরোনো মানবদেহের যে কঙ্কালটি খুঁজে পেয়েছেন তার বাম পা এবং বাম পায়ের আরও একটি অংশ অনুপস্থিত ছিল।
এই অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে গবেষকেরা মনে করছেন অস্ত্রোপচার করেই পা কেটে ফেলা হয়েছিল। কারণ, অস্ত্রোপচারের যাবতীয় লক্ষণ সেই পায়ের সংশ্লিষ্ট অংশে বিদ্যমান। ফলে আগের রেকর্ড অনুসারে সর্বশেষ অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল যত বছর আগে তার চেয়েও অন্তত ২৪ হাজার বছর আগে প্রথম অস্ত্রোপচার হয়েছিল।
২০২০ সালের শুরুর দিকে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার অধ্যাপক ও লিয়াং তেবো গুহায় অভিযান পরিচালনাকারী দলের প্রধান ইন্ডিয়া এলা ডিকস-হল এবং সহকর্মীরা গুহার ক্যাথেড্রালের মতো দেখতে একটি চেম্বারের মেঝে খনন করে ২০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির কঙ্কাল খুঁজে পান।
গবেষকদের ধারণা, ওই ব্যক্তিকে খুবই যত্ন করে সমাহিত করা হয়েছিল। ওই ব্যক্তির মুখের একপাশে লালচে–হলুদ বর্ণের একটি মুদ্রা রাখা ছিল। এই মুদ্রার উপস্থিতি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বোর্নিও প্রাচীনকাল থেকেই পাথরে নকশা করার জন্য বিখ্যাত।
এদিকে, নেচারে লিখিত গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক টিমোথি ম্যালোনি বলেছেন, ‘বাম পায়ের টিবিয়া ও ফিবুলার পুনরুদ্ধার করা অংশগুলোতে হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখতে পাওয়া গেছে। যা ইচ্ছাকৃতভাবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হাড় কেটে ফেলার ক্লিনিক্যাল দৃষ্টান্তের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলে যায়।’
এ ছাড়া, হাড়ের উপরিভাগ আরও ইঙ্গিত করে যে—ওই ব্যক্তির শৈশবেই অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল এবং অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ার পরও ওই ব্যক্তি আরও অন্তত ৬–৯ বছর বেঁচে ছিলেন। গবেষকদের ধারণা, ওই ব্যক্তি অস্ত্রোপচারের পর ভালোভাবেই সেরে উঠেছিলেন।
এই বিষয়টি নিশ্চিত করে যে, ওই সময়ে স্পষ্টতই অস্ত্রোপচার ব্যবস্থা বেশ উন্নতি লাভ করেছিল। ফলে, সংগত কারণে এই বিষয়টিও ধারণা করা হচ্ছে, এ ধরনের অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য মানুষের শরীর বিষয়ে বিশদ জ্ঞানও ওই সময়ের মানুষেরা অর্জন করেছিলেন।
টিমোথি ম্যালোনি আরও বলেছেন, ‘এই বিষয়টি প্রমাণ করে যে, এই সম্প্রদায়গুলো অ্যান্টিসেপটিক ও অণুজীব প্রতিরোধী ব্যবস্থাপনার বিষয়ে দারুণভাবে জ্ঞাত ছিল। সম্ভবত, তারা এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের সুবিধা দারুণভাবেই গ্রহণ করেছিল।’
যা হোক, সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার আগের অনুমানগুলোকে উল্টে দেয়। আগে যেমনটা ধারণা করা হতো যে, অত্যাধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আজ থেকে প্রায় ৭ হাজার বছর আগে ইউরোপে শুরু হয়েছিল। কিন্তু এই আবিষ্কারের পর, এটি এখন অনুমান করা যেতেই পারে যে, মানুষ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষেরাও ইউরোপেরও অনেক আগে অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি জানত।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩০৫
আপনার মতামত জানানঃ