ভারতে ‘মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন’-এর অভিযোগ এনে শিশুদের খৎনা নিষিদ্ধ করার আবেদন করা হয়েছে আদালতে। উল্লেখ্য, মুসলিম শিশুদের ওপর খৎনা প্রথা নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে কেরালা হাই কোর্টে আদেবন জমা করেছে ধর্ম ত্যাগ করা একটি দল।
কেরালার এ দলটির নাম ‘নন রিলিজিয়াস এসোসিয়েশন।’ গত সপ্তাহের সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) কেরালার উচ্চ আদালতে এই আবেদনটি করা হয়।
আবেদনে বলা হয়েছে, ১৮ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগে শিশুদের খৎনা করা তাদের মৌলিক অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। পাশাপাশি এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন করারও সামিল। এ সংগঠনটি মুসলিমদের খৎনা করাকে নিষ্ঠুর, অমানবিক ও বর্বর বলে অভিহিত করেছে।
আবেদনে বলা হয়েছে যে ১৮ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগে শিশুদের খৎনা করা তাদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। এবং এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও সামিল।
পাশাপাশি আবেদনে দাবি করা হয়েছে, খৎনা এমন কোনও অপরিহার্য ধর্মীয় অনুশীলন নয়, যা পালন করা না হলে ধর্মের অবমাননা হবে।
অভিভাবকের ইচ্ছা অনুসারে ছোট্ট শিশুদের ওপর খৎনা প্রথা নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে কেরল হাই কোর্টে আদেবন জমা পড়েছে। জানা গিয়েছে গত ৬ ফেব্রুয়ারি এই আবেদনটি জমা পড়েছে উচ্চ আদালতে।
আবেদনে খৎনাকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি এটিকে অজামিনযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করারও দাবি জানানো হয়েছে। একটি অ-ধর্মীয় নাগরিকদের সাংস্কৃতিক সংগঠন এই আবেদন দায়ের করেছে বলে জানা গিয়েছে।
আবেদনে বলা হয়েছে যে ১৮ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগে শিশুদের খৎনা করা তাদের মৌলিক অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এবং এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও সামিল।
খৎনা বা লিঙ্গাগ্রচর্মচ্ছেদনের প্রকিয়া এক ধরনের অস্ত্রপাচার। এর মাধ্যমে যৌনাঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া অপসারণ করা হয়। প্রায়শই ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কারণে নবজাতক ও শিশুদের ওপর এই ধরনের অস্ত্রপচার করা হয়।
অনেক রিপোর্ট অনুযায়ী, খৎনার কারণে লিঙ্গের সংবেদনশীলতা কমে যায়। পাশাপাশি এর কোনও উপকারিতা নেই বলে দাবি করা হয়। শুধু তাই নয়, এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ প্রথা হিসেবেও বিবেচিত করেন অনেকেই।
অবশ্য এটি একটি প্রাচীন প্রথা যা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অংশ। ইসলামে এটি বাধ্যতামূলক মনে করা হয়। ইহুদিদের মধ্যেও এই প্রথাকে অপরিহার্য বলে মনে করা হয়ে থাকে।
তবে আদালতে দায়ের করা আবেদনে বলা হয়েছে, শিশুদের খৎনা করানোর জেরে তাদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা এবং ঝুঁকির সম্মুখীন হয় তারা। পাশাপাশি শিশুরা এই প্রথার পক্ষে বা বিপক্ষে বলার কোনও পরিস্থিতিতেই থাকে না।
তাদের হয়ে তাদের মা-বাবারাই এই সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। যার জেরে এই প্রথাকে ‘শারীরিক গোপনীয়তা লঙ্ঘন’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে আবেদনে। তাছাড়া দাবি করা হয়েছে, এটি ধর্মীয় ভাহে অপরিহার্য নয়।
আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, এই প্রথার জেরে পরবর্তীকালে সেই শিশুর যৌন ক্ষমতা খর্ব হতে পারে। এই প্রথাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে দাবি কার হয়েছে, এর জেরে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
আবেদনটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনভেনশনের কথা উল্লেখ করেছে, যাতে শিশুদের অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের শিশু অধিকার সনদ এবং রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের দ্বারা গৃহীত নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তিরও উল্লেখ করা হয়েছে আবেদনে।
তাতে মামলাকারীর তরফে বলা হয়েছে, ‘উল্লেখিত চুক্তিগুলি বলে, কোনও শিশুকে নির্যাতন করা যাবে না বা তাদের সঙ্গে কোনও নিষ্ঠুর, অমানবিক আচরণ বা শাস্তি দেওয়া হবে না।
তবে এই প্রথার জেরে চুক্তিতে স্বীকৃত ব্যক্তি অধিকার বা স্বাধীনতা লঙ্ঘন করা হচ্ছে।’ পাশাপাশি আবেদনে দাবি করা হয়েছে, খৎনা এমন কোনও অপরিহার্য ধর্মীয় অনুশীলন নয়, যা পালন করা না হলে ধর্মের অবমাননা হবে।
এসডব্লিউএসএস/০৭৪০
আপনার মতামত জানানঃ