সৌদি আরবের মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় দেখা মিলছে বিরল দৃশ্যের। মরুভূমির বিশাল অঞ্চল ছেয়ে গেছে গাছপালায়। স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ পাহাড়-পর্বতজুড়ে সবুজের সমারোহ।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে সৌদি আরবে। যা চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। আর এ বৃষ্টির কারণে দেশটির পূর্বাঞ্চলের মরুভূমির ধূসর পাহাড়গুলো সবুজ হয়ে গেছে। সবুজ গাছ, ঘাস ও লতাপাতায় ছেয়ে গেছে মরুর পাহাড়। আর এই দৃশ্য স্পষ্ট দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার স্যাটেলাইট থেকেও।
২০২১ সালের শেষ দিকেও বৃষ্টিপাত হয়েছিল। কিন্ত ২০২২ সালের শেষ দিকে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তা অন্য বছরের তুলনায় বেশি ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরাবিয়াওয়েদার।
আরাবিয়াওয়েদার আরও জানিয়েছে, সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চল অন্যান্য অঞ্চলগুলোর তুলনায় একটু উষ্ণ। এই উষ্ণ আবহাওয়া এবং বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ছেদ করে বেরিয়ে এসেছে সবুজ গাছপালা।
মরু অঞ্চলের এমন পরিবর্তনকে ঐতিহাসিক বলছেন বিশ্লেষকরা। স্থানীয়রাও বেশ উপভোগ করছেন সবুজ মরভূমি। খবর রিসার্চ গেট ও ওয়েদার ডটকমের।
মরুভূমির ধুসর রঙ বদলে গেছে সবুজে। সৌদি আরবের মক্কা, মদিনা ও জেদ্দার বেশকিছু অঞ্চল ছেয়ে গেছে গাছপালায়। ধূ-ধূ বালুর রাজ্যের এই অভূতপূর্ব পরিবর্তন টের পাওয়া যাচ্ছে মহাশূন্য থেকেও।
কীভাবে ধূসর মরুভূমি আর পাহাড়-পর্বত ঢেকে গেছে সবুজের সমারোহে, সেই ছবি ধরা পড়েছে স্যাটেলাইট ছবিতে। অল্প সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তনের সেই পার্থক্যটাও বেশ স্পষ্ট।
সৌদি আরবের শুষ্ক মরুভূমির সবুজ রঙ বদলে যাওয়া বেশ আলোড়ন তুলেছে সামাজিক মাধ্যমে। বিরল এই দৃশ্য বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে অনেকের মাঝে। স্থানীয়রাও উপভোগ করছেন প্রকৃতির এই পরিবর্তন। বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে গাছাপালা জন্মানোর ঘটনাকে ঐতিহাসিক ও বিরল বলছেন বিশ্লেষকরা। জানিয়েছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবেই মরু অঞ্চলের এমন পরিবর্তন।
গেল বছরের ডিসেম্বর থেকেই দফায় দফায় ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে সৌদিতে। চলতি মাসের টানা বৃষ্টিতে কয়েকটি এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে বন্যার, তলিয়ে গেছে সড়কও। দেশটিতে এমন বৃষ্টির ঘটনা বিরল।
অনেকেই বলছেন, এমন বর্ষণের ফলেই আরবের পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মরুভূমিতে জন্ম নিয়েছে গাছপালা। তবে বেশকয়েক বছর ধরেই, মরুভূমিতে সবুজায়নের নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সৌদি সরকার। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গাছ লাগানোর বিশাল এই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সৌদি আরব।
সূত্র মতে, গত বছরের শুরুর দিকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণ কমানো, ভূমির ক্ষয় সহনীয় পর্যায়ে রাখতে দেশজুড়ে লাগানো হবে এক হাজার কোটি গাছ। ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চায় রিয়াদ। পাশাপাশি ‘মিডলইস্ট গ্রিন ইনিশিয়েটিভ’ বা মধ্যপ্রাচ্য সবুজায়ন প্রকল্পের আওতায় আরব বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে আরও ৪ হাজার কোটি গাছ লাগানো হবে।
এমনকি কৃত্রিম পদ্ধতিতে বালুকণা-যুক্ত মাটির উর্বরতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে, অনেক জায়গায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে গাছপালাও লাগানো হচ্ছে।
সৌদি আরবসহ আরবের অন্য দেশগুলোতে মরুভূমির প্রাধান্য থাকায় পানির জোগান খুবই কম। উৎস কম থাকায় পানির চাহিদা মেটাতে আরবের অন্য দেশগুলোর মতো সৌদি আরবও সমুদ্রের পানিকে লবণমুক্ত করে পানযোগ্য করতে বেশ কয়েকটি প্ল্যান্ট পরিচালনা করছে।
সৌদি আরবে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ব্যবহারের বড় অংশই হয় বিদ্যুৎ খাত এবং পানি লবণমুক্ত করার প্রকল্পে।
এসডব্লিউএসএস/১৬১৫
আপনার মতামত জানানঃ