ব্যাপক জনবল সংকটের মধ্যেও প্রায় আট হাজার অস্থায়ী কর্মীকে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যদিও বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার জনবল সংকট নিয়ে চলছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
প্রসঙ্গত, গত ১ জানুয়ারি অস্থায়ী শ্রমিকরা থাকছে না মর্মে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তাদের বেতন-ভাতাও।
রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, সংকট কাটাতে সমপরিমাণ কর্মী আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে।
শ্রমিক নেতারা বলছেন, জনবল সংকটের কারণে ট্রেনের চাকা সচল রাখতে গত ১৫ বছরে প্রায় আট হাজার অস্থায়ী জনবল নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত এক যুগ বন্ধ ছিলো রেলের নিয়োগ, ফলে অস্থায়ী এ শ্রমিকরাই ছিল রেলের ভরসা।
তারা আরও বলেন, গেটকিপার, কারখানার যন্ত্র উৎপাদনকারী, ইঞ্জিন মেকানিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের অস্থায়ী শ্রমিকদের কেউ কেউ কাজ করছেন ১৫-১৬ বছর ধরে। সুষ্ঠু রেল পরিচালনায় পারদর্শী হয়ে উঠেছেন তারা। এখন তাদের ছাঁটাই করলে দক্ষ জনবল হারাবে রেলওয়ে। আর আউটসোর্সিংয়ে অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, আউটসোর্সিংভিত্তিক অদক্ষ জনবল আরও বেশি সংকট সৃষ্টি করবে। রেলের মতো কারিগরী প্রতিষ্ঠান এমনিতেই দক্ষ লোকবল সংকটে মুখ থুবড়ে পড়েছে। তার ওপর বিপুল পরিমাণ দক্ষ শ্রমিক বাদ দিলে ব্যহত হবে সার্বিক রেলব্যবস্থা।
তবে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন আউটসোর্সিংয়ের পক্ষে মত দিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে দ্রুতই উদ্যোগ নেয়া হবে।
জনবল সংকটে রেলসেবায় বিপর্যয়ের শঙ্কা
রেলওয়েতে বর্তমানে কর্মরত আছেন ২৪ হাজার ৯৩৩ জন, যা চাহিদার তুলনায় ৪৮ শতাংশ কম। জনবল সংকট সামাল দিতে গত ১০ বছরে টেম্পোরারি লেবার রিক্রুটমেন্ট (টিএলআর) পদ্ধতিতে ৬ হাজার ৮২৯ হাজার কর্মচারীকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয় রেলওয়ে। নিয়ম অনুযায়ী, ৩ বছরের অধিক অভিজ্ঞতার শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করার নিয়ম থাকলেও উল্টো চলতি মাস (৩১ ডিসেম্বর) থেকে তাদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে।
রেল কর্মকর্তারা বলছেন, টিএলআর কর্মীরা অস্থায়ী হলেও গত ১০ থেকে ৮ বছর ধরে কাজ করে তারা রেলের বিভিন্ন দপ্তর ও অপারেশনাল কাজ পরিচালনায় প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করেছে। এ অবস্থায় পুরনো ও দক্ষ টিএলআর কর্মীদের বাদ দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষায়িত সেবা বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
জানতে চাইলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘রেলে এমনিতেই কর্মচারীর ঘাটতি রয়েছে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। কারা কিভাবে শ্রমিক সরবরাহ করবে তাও স্পষ্ট নয়। এ অবস্থায় বিপুল সংখ্যক অস্থায়ী শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতির কারণে রেলের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটবে।’
একই মত দেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার।
তারা বলেন, ‘রেলওয়ে একটি বিশেষায়িত খাত। পুরনো ও দক্ষ কর্মীদের ছাঁটাই করা হলে রেলের দৈনন্দিন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটবে।’
রেলের এই কর্মকর্তারা জানান, বিশেষত রেলওয়ের ওয়ার্কশপ, মেকানিক্যাল, সিগন্যাল ইলেকট্রিক্যাল, ট্রান্সপোর্টস, গেটকিপার, পোর্টার, অপারেটিং পরিচালনার কাজে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন; আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল পাওয়া না গেলে বিপর্যয় নেমে আসবে পুরো রেল খাতে।
উল্লেখ্য, আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা ২০১৮ এর ৩(৩) ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, গোপনীয়তা ও সরকারি স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে কিংবা আউটসোর্সিং এর সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে দক্ষ বা বিশেষায়িত সেবা বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি অতিমাত্রায় বিদ্যমান, এরূপ সেবা সমূহ অর্থ বিভাগের সম্মতি সাপেক্ষে আউটসোর্সিং নীতিমালার আওতায় বহির্ভূত রাখা যাবে।
জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান বলেন, ‘আউটসোর্সিং এর সিদ্ধান্তটা সরকারের। তাই এর লাভ বা ক্ষতি সরকারই নির্ধারণ করবে। আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে জনবল নিয়োগ করতে আরও দুই থেকে তিনমাস সময় লাগবে। আপাতত অস্থায়ী শ্রমিকদের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে পুরোনো শ্রমিকরাই যেন নিয়োগ পায়।’
এসডব্লিউএসএস/১১৩৫
আপনার মতামত জানানঃ