সিরিয়ার বার্তা সংস্থার খবর অনুযায়ী দেশটিতে অবৈধ মার্কিন বাহিনী স্থানীয় তেল ও গম চুরি করছে। খবরে বলা হয়, গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ৩৬টি ট্যাংক ট্রাক দিয়ে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে তেল চুরি করে।
পরে মাহমুদি ক্রসিং পয়েন্ট দিয়ে উত্তর ইরাকের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে তা পাঠানো হয়। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাঁজোয়া গাড়ি ২৪টি ট্রাক ও তেল ট্যাংক পাহারা দিয়ে সিরিয়া থেকে চুরি করা গম ও তেল ওয়ালিদ ক্রসিং পয়েন্ট দিয়ে অবৈধভাবে পরিবহন করেছে।
জানা গেছে, বর্তমানে সিরিয়ায় অবৈধ মার্কিন বাহিনী ও এর সমর্থিত বিদ্রোহী গ্রুপগুলো উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার বিশাল ভূমি দখল করে রেখেছে। তারা সিরিয়ার প্রধান তেলক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তেল ও খাদ্য চোরাচালান করছে। ফলে সিরিয়ায় গুরুতর জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে এবং সিরিয়ায় মানবিক বিপর্যয় বেড়ে গেছে।
সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনাদের তেল ও গম চুরির নিন্দা জানিয়েছে চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাউ লিজিয়ান বলেন, শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য মার্কিন সেনারা সম্প্রতি নতুন করে সিরিয়া থেকে তেল চুরি করেছে। খবর সানা ও সিনহুয়ার।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে গত বৃহস্পতিবার একদিনেই অন্তত ৫৪টি ট্যাংকার বোঝাই করে তেল উত্তর ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে পাঠানো হয়েছে।
ঝাউ লিজিয়ান বলেন, সিরিয়ায় মার্কিন সেনা মোতায়েন অবৈধ। এসব সেনা সিরিয়া থেকে যেসব তেল এবং খাদ্যশস্য নিয়ে যাচ্ছে তাও অবৈধ। মার্কিন সেনা সিরিয়ার ওপর যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে আছে সেটিও অবৈধ।
তিনি সিরিয়া সরকারের দেয়া তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ২০১১ সাল থেকে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মার্কিন সেনারা যে সম্পদ চুরি করেছে তার মূল্যমান ১০ হাজার কোটি ডলার।
চীনা মুখপাত্র বলেন, আমেরিকা আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছে অথচ তারা নিজেদেরকে আন্তর্জাতিক আইনশৃঙ্খলা মেনে চলার ব্যাপারে চ্যাম্পিয়ন দাবি করে। বাস্তবতা হচ্ছে আমেরিকা যখন আইনের কথা বলে তখন তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার এবং বলদর্পিতা অব্যাহত রাখার অজুহাত খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে।
আমেরিকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জেরার্ড অরাডের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আমেরিকা প্রকৃতপক্ষে যা খুশি তাই করে এবং আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী কাজও তারা করে কিন্তু যখন তারা সেটি করে তখন তাকে নানা কায়দায় বৈধতা দেয়। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অন্ধ নয় এবং তারা এ বিষয়ে সজাগ রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, এর আগেও জ্বালানি চুরির অভিযোগ ওঠে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে। জানা যায়, সিরিয়া থেকে জ্বালানি চুরি করছে মার্কিন সেনারা। জাতিসংঘের কাছে এমনটাই অভিযোগ জানিয়েছে দামেস্ক। এমনকি সিরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বহু বছরের দখলদারিত্বের কারণে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির তেল ও গ্যাস খাতে ১০৭ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সেই সময়ে জাতিসংঘ মহাসচিব ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে লেখা অভিন্ন চিঠিতে এই অভিযোগ জানানো হয়।
বলা হয়, মার্কিন সেনারা যেমন তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো থেকে জ্বালানি চুরি করছে, তেমনি তাদের ছত্রছায়ায় সিরিয়ায় তৎপর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোও তেল-গ্যাস চুরি করে বিদেশে পাচার করছে।
দেশটির তেল ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, তেল, গ্যাস এবং খনিজসম্পদ চুরির ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটির সরাসরি ক্ষতির পরিমাণ ২৪.২ বিলিয়ন ডলার। আমেরিকার মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) মিলিশিয়া উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় উপস্থিত আমেরিকান বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় এ চুরির ঘটনা ঘটে বলে জানায় সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সিরিয়ার তেল, গ্যাস এবং খনিজসম্পদ আহরণ, চোরাচালান এবং অবৈধ বাণিজ্যের ফলে এই বছরের প্রথমার্ধের শেষ পর্যন্ত এই ক্ষতির আনুমানিক মূল্য ১৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। এখনো সিরিয়ার তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ অবৈধ বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে এসডিএফ মিলিশিয়ারা।
এর আগেও বিভিন্ন প্রতিবেদনে সিরিয়া বলেছে, মার্কিন বাহিনী এবং তাদের মিত্র এসডিএফ জঙ্গিরা প্রায় প্রতিদিনই দেশটির বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল পাচার করে আসছে। শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সিরিয়ার তেল, গ্যাস এবং খনিজসম্পদ উত্তোলনের পর পরিবহণের নাশকতা এবং চুরির কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশটি।
উল্লেখ্য, মার্কিন সরকার ও তার সহযোগীরা সিরিয়ায় তৎপর আইএস জঙ্গিদের নির্মূল করার অজুহাতে ২০১৪ সালে ইরাকে সেনা মোতায়েন করে। অথচ এই কাজে জাতিসংঘের অনুমোদন বা দামস্কের অনুমতি নেওয়া হয়নি। এ কারণেই নিজ ভূখণ্ডে মার্কিন উপস্থিতিকে তার আইনের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন বলে মনে করে দামেস্ক।
অতীতে অনেকবারই সিরিয়ায় মার্কিন সেনা উপস্থিতির নিন্দা জানিয়ে তাদের প্রত্যাহারের আর্জি তোলে সিরিয়া। তবে পেন্টাগনের দাবি, ওই অঞ্চলের তেলক্ষেত্রগুলোকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যেই সেখানে সেনা মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এসডব্লিউএসএস/১৩৪০
আপনার মতামত জানানঃ