অ্যাডলফ হিটলার যে অ্যাপার্টমেন্টে জন্ম হয়েছিল সেটি ধ্বংস করে দেয়া হবে। জার্মানির এই স্বৈরাচার ও যুদ্ধবাজ নেতার জন্মস্থানটি নিও নাৎসীদের কেন্দ্র হয়ে উঠছে বলে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রয়াত জার্মান এই স্বৈরশাসক ও নাৎসি বাহিনীর প্রধান নেতা হিটলারের জন্মস্থান নিয়ে বহু বছর ধরেই আলোচনা চলছে। এর আগেও কয়েকবার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও হয়নি বাস্তবায়ন।
উল্লেখ্য, ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করা হিটলার তার জীবনের প্রথম তিনটি বছর কোন জায়গায় কাটিয়েছিলেন তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুনতে শুনতে ক্লান্ত অস্ট্রিয়ার ব্রাউনাউ আম ইন শহরের বাসিন্দারা। শহরের এই অন্ধকার অতীতের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিশাপ থেকে বাঁচতে শহরের নাম পরিবর্তন করার কথাও ভাবছেন বাসিন্দারা!
তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে হিটলারের অ্যাপার্টমেন্টটি গুড়িয়ে দেওয়ার পর সেখানে নতুন আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হবে, যেটির সাথে আগের ভবনের কোনো মিল থাকবে না। কিন্তু ইতিহাস যতই অপ্রীতিকর হোক না কেন, সহজে তা মুছে দেওয়াও তো সম্ভব না!
এখন প্রশ্ন হিটলারের জন্মস্থান ভেঙে দেওয়ার পর নতুন বাড়িতে কী বা কারা থাকতে পারে? এই মুহূর্তে ভবনটি বেসরকারি মালিকানায় রয়েছে, কিন্তু সম্পত্তির মালিক এখনও বাড়িটি সংস্কার বা পুনঃনির্মাণের কাজে হাত দেননি। ১৭ শতকে নির্মিত এই ভবনটি ২০১১ সাল থেকে খালিই পড়ে আছে এবং ক্রমশ জরাজীর্ণ-ভগ্নদশায় পতিত হয়েছে।
সমঝোতার আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর অস্ট্রিয়ান পার্লামেন্ট আগামী বছরের অক্টোবরের মধ্যে এ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে মালিককে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। এটি ভেঙে ফেলার পর নতুন ভবনটি কিভাবে ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের একটি কমিশন আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও, বাড়িটির ঐতিহাসিক আবহ থেকে লোকের মনোযোগ সরিয়ে আনার জন্য এবং এটি যেন ডানপন্থী চরমপন্থীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না হয়, সেজন্য কোনো সামাজিক বা দাতব্য সংস্থা হয়তো ভবনটি ব্যবহার করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি কর্মশালা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা চলছে – যা হবে ডানপন্থী চরমপন্থীদের মুখে একটি চপেটাঘাত। তাছাড়া, প্রতি বছর স্মৃতিরক্ষার উদ্দেশ্যে বা হিটলারের জন্মদিনে এখানে জড়ো হওয়া নাৎসিদের প্রতিহত করার লক্ষ্যও রয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হিটলারের এই বাড়িটি কি কোনো জাদুঘরে বা জাতীয় সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কোনো স্মারকে রূপান্তর করা যায় না? না, ব্রানাউয়ের মেয়র মনে করেন, শহরটিতে যথেষ্ট স্মারক সৌধ রয়েছে। তার মতে, আরেকটি বিকল্প ব্যবস্থা হলো, হিটলারে বাড়িটি ভাড়া দিয়ে দেওয়া।
কিন্তু আপনি কিভাবে প্রত্যাশা করেন যে ইতিহাসের একজন কুখ্যাত স্বৈরশাসক ও বিংশ শতাব্দীর অন্যতম একজন গণহত্যাকারীর জন্মস্থানে কেউ ভাড়া থাকতে চাইবে? হ্যাঁ, নব্য-নাৎসিরা অবশ্য চাইবে! কিন্তু এভাবে তাদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না, বরং তাদের নেতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের দিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে দেওয়া হবে।
তবে শেষ পর্যন্ত এটাই দেখার বিষয় যে হিটলারের বাড়িটি ভেঙ্গে কোন লাভ হয় কিনা। কারণ আগেই বলা হয়েছে, ইতিহাস এত সহজে মুছে ফেলা যায় না। তাই ব্রানাউয়ের গল্পও সম্ভবত চিরকাল মানুষের মনে গেঁঁথে থাকবে। তার চেয়ে বরং অতীতের এই নেতিবাচকতা থেকেই ইতিবাচক কিছু বের করে আনাটাই উত্তম। আর তা কার্যকর হতে পারে দাতব্য কোনো কাজে এই ভবনটি ব্যবহারের মাধ্যমে- আর এতে করে নব্য-নাৎসিরাও এই স্থান থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকবেন।
এসডব্লিউএসএস/1135
আপনার মতামত জানানঃ