১০ দিনে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো সৌদি আরব। যদিও দেশের ক্রাউন প্রিন্স এই ধরনের শাস্তি কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
অথচ সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ডের পরিমান যেন লাগাতার বেড়েই চলেছে। পূর্বের সমস্ত রেকর্ডকে ভেঙে গত এক বছরে দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা দ্বিগুণ পরিমান বেড়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেক্ষ এ বছর সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা ২০২০-২১ সালের মিলিত সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত বছর দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা ছিল ৬৯। অথচ চলতি বছরে সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে মোট ১৩৮ জনের।
‘রিপ্রিভ’ নামের এক মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, সমস্ত পুরুষ অভিযুক্তদের মাদক অপরাধের জন্য কারাগারে রাখার পর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয় বেশির ভাগ আসামিকে তলোয়ার দিয়ে শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানি, চারজন সিরিয়ান, দুজন জর্ডানের এবং তিনজন সৌদির। জর্ডান থেকে আরেকজন ব্যক্তিকে কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে এবং আগামী শুক্রবার তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই বছর সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মোট সংখ্যা কমপক্ষে ১৩২। এই সংখ্যাটি সৌদিতে ২০২০ এবং ২০২১ সালে সম্মিলিত মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যার চেয়ে বেশি।
ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা অব্যাহত রয়েছে।
২০১৮ সালে, ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমান বলেছিলেন যে তার প্রশাসন মৃত্যুদণ্ডের শাস্তিতে সংস্কার আনতে চাইছে এবং শুধুমাত্র হত্যা বা নরহত্যার জন্য দোষী ব্যক্তিদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে চাইছে।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভিতরে নিহত ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যার পর সৌদি আরব আইন পরিবর্তন এবং মাদক ও অন্যান্য অহিংস অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড তুলে নেবার প্রস্তাব রেখেছে।
রিপ্রিভ ডিরেক্টর মায়া ফোয়া বলেছেন, মোহাম্মদ বিন সালমান বারবার তার অগ্রগতির দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন, মৃত্যুদণ্ড কমানোর এবং মাদক অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের অবসান ঘটাতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের একটি রক্তাক্ত বছর শেষ হওয়ার সাথে সাথে সৌদি কর্তৃপক্ষ মাদক অপরাধীদের আবারও ব্যাপকভাবে এবং গোপনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা শুরু করেছে।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি আশঙ্কা করছে যে মৃত্যুদণ্ডের দ্রুত বৃদ্ধির ফলে দেশটি ২০১৯ জুড়ে ১৮৬টি হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে। আগস্টে, ইউরোপীয় সৌদি অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটস (ESOHR) দেশটির বিচার ব্যবস্থার সমালোচনা করে এবং দাবি করে যে তারা তার শাস্তি ব্যবস্থায় নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড কমানোর প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি।
ইএসওএইচআর বলেছে যে সিস্টেমে স্বচ্ছতার অভাবের অর্থ হল যে তারা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা জারি রেখেছে। ১২ মার্চ ৮১ জন অপরাধীর গণশিরশ্ছেদের খবর সামনে আসে – যখন ৭০ শতাংশেরও বেশি আসামিদের ‘মারাত্মক নয়’ এমন অপরাধে জড়িত থাকার জন্য হত্যা করা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য, সৌদি নেতৃত্ব অপরাধীদের “সন্ত্রাসী” হিসাবে চিহ্নিত করে।
ESOHR রিপোর্ট করেছে যে পুরুষদের মধ্যে অন্তত তিনজন বিশ্বাসযোগ্য দাবি করেছে যে তাদের নির্যাতন করা হয়েছিল এবং তাদের স্বীকারোক্তি বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
গত সপ্তাহে, ঋষি সুনাক বালিতে যখন একটি বিলাসবহুল রিসোর্টে মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে দেখা করেছিলেন তখন তিনি সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যার বিষয়টি তাঁর সামনে তুলে ধরতে ব্যর্থ হন।
এমবিএস নামে পরিচিত উপসাগরীয় রাষ্ট্র নেতা, ২০১৮ সালে খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত। ডাউনিং স্ট্রিট স্বীকার করেছে যে ”প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের হত্যাকাণ্ডের কথা মোহাম্মদ বিন সালমানের সামনে উল্লেখ করেননি। কারণ এটি একটি নির্দিষ্ট স্বতন্ত্র কেস।”
প্রধানমন্ত্রীর সুনাকের মুখপাত্র যোগ করেছেন: “সামাজিক সংস্কারের উন্নতির জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সৌদি আরবের কিছু কাজের বিষয়ে তারা মোটামুটি দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। তারা নারী অধিকার এবং রাজ্যে স্বাধিকারের বিষয়ে আরও অগ্রগতির মতো বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।”
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে সৌদি প্রশাসন শুধুমাত্র হত্যা বা নরহত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ডের সাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ড কমানোর চেষ্টা করেছিল। এই বছরের মার্চ মাসে বিভিন্ন অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া ৮১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে।
সৌদি আরব এই ধরনের শাস্তি কমানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রায় দুবছর পর ব্যপক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে। ২০১৮ সালে তুরস্কে মার্কিন সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে মৃত্যদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
২০১৮ সালেও সৌদি প্রশাসন শুধুমাত্র হত্যা বা নরহত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ডের সাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ড কমানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ফের শুরু হয়েছে তরবারি দিয়ে শিরোচ্ছেদের দণ্ড।
এসডব্লিউ/এসএস/২০০০
আপনার মতামত জানানঃ