‘বিশ্ব কাঁপে বিশ্বকাপে’- কথাটি ফুটবল বিশ্বকাপের ক্ষেত্রেই সর্বাঙ্গে সত্য। একমাত্র এই খেলার সর্বোচ্চ আসর ঘিরে মাতে এশিয়া থেকে আফ্রিকা, ইউরোপ, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা। তাই একে বলা হয়– ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’।
ফুটবলপ্রেমী আপামর জনতার নজর এসময় আটকে থাকে টেলিভিশনের পর্দায়। চায়ের দোকান, ক্লাব থেকে শুরু করে সর্বত্র চলে ম্যাচের বিশ্লেষণ।
চলতি মাসেই পর্দা উঠছে কাতারে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ আসরের। ক্রীড়ামোদীদের প্রত্যাশা, এবারও আলোচনার বহু রসদ পাবেন তারা। হয়তো সৃষ্টি হবে নতুন ইতিহাসও– কে জানে!
একেকটি বিশ্বকাপের আসর অভিনব ঘটনার জন্ম দিলেও ফুটবলের উৎপত্তির ইতিহাসটা কিন্তু কম বিতর্কিত নয়। কেউ বলেন মায়া সভ্যতায়, তো কোনো মুনীর মতে প্রাচীন চীনে- ফুটবল ধাঁচের পায়ে বল গড়িয়ে খেলার উৎপত্তি।
আবার এ দাবি আছে প্রাচীন গ্রিস সম্পর্কেও। পায়ের ব্যবহার কম থাকার পরও– গ্রিকদের খেলাটির অন্যান্য অনেক বৈশিষ্ট্য– আধুনিক ফুটবলের সাথে মিলে যায়। তাই শেষোক্ত দাবির পেছনের ইতিহাসটাই পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো গ্রিকসিটিটাইমস ডটকমের সূত্রে।
সে অনেক অনেক কাল আগের কথা। গ্রিস তখন একক রাষ্ট্র নয়। বরং অনেকগুলি নগর রাষ্ট্রে বিভক্ত। বল জাতীয় গোলক দিয়ে খেলার সূত্রপাত সে সময়েই। গ্রিকরা একে বলতো- এপিস্কিরোস খেলা।
এ খেলায় একটি বল নিয়ন্ত্রণের প্রতিযোগিতা হতো দুটি দলের মধ্যে। প্রতি টিমে থাকতো ১২/ ১৪ জন করে খেলোয়াড়। দুই দলের সীমা নির্ধারণ করতে মাঠের মাঝামাঝি টানা হতো সাদা রঙের লাইন, যাকে বলা হতো ‘স্কুরোস’। মাঠের শেষ সীমা নির্ধারণে দুই দলের পেছনে টানা হতো অপর দুটি লাইন।
খেলাটি ছিল খুবই সহিংস, বিশেষ করে স্পার্টায়। উভয় দলের প্রধান লক্ষ্য থাকতো– বিপরীত টিমের খেলোয়াড়ের লাইনের ওপর দিয়ে বল ছুঁড়ে দেওয়া। তাতে সফল হলেই বিপক্ষ টিমকে পিছিয়ে যেতে হতো। এভাবে বিপক্ষ দলকে মাঠের শেষ সীমার বাইরে নিয়ে যেতে পারলেই নিশ্চিত হতো বিজয়। খেলোয়াড়দের ক্ষিপ্রতা ও গতিই ছিল সবচেয়ে মূল্যবান দক্ষতা।
শুনতে সহজ মনে হলেও এপিস্কিরোস খেলা সহজ ছিল না মোটেও। বিপক্ষ টিমের লাইনের বাইরে বল নিতে- একজন খেলোয়াড়কে বিপক্ষ দলের রক্ষণভাগকে এড়াতে হতো সুনিপুণ দক্ষতায়। অন্যদিকে, কোনো দলের কাছে যদি তাদের নিজেদের অংশে থাকা অবস্থাতেই বলের নিয়ন্ত্রণ থাকতো– তাহলে বিপক্ষ দলের সবাই মিলে বলের অধিকারে থাকা খেলোয়াড়কে ট্যাকল করে- বল নিজেদের সীমানায় আনতে পারলেই পেয়ে যেত এক পয়েন্ট।
এপিস্কিরোসের মতোন আরেকটি খেলা ছিল ‘ফানিন্দা’। ক্রীড়াটির উদ্ভাবক ফানিয়েদাসের নামানুসারেই এই নামকরণ। আবার অনেকে মনে করেন, এটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘ফেনাকিয়েন’ থেকে, যার অর্থ ‘ধোঁকা দেওয়া’। এমন নামকরণের কারণ, এ খেলায় কাউকে বল দেওয়ার ভান করে– অপ্রত্যাশিতভাবে অন্য কাউকে ছুঁড়ে দেওয়া হতো বল।
গ্রিকদের এ দুটি খেলা পরবর্তীকালে রোমানরা গ্রহণ করে। রোমানরা এপিস্কিরোসের নামকরণ করে ‘হার্পেসটন’। গ্রিক শব্দ ‘হার্পাস্টন’ থেকে যার উৎপত্তি। যার অর্থ হলো- ছিনিয়ে নেয়া। শব্দটির ক্রিয়াপদ ‘হার্পাজো’ এর অর্থ ‘দখল বা অবরোধ’।
ফিফা এপিস্কিরোসকে আধুনিক রাগবির মতো একটি ক্রীড়ার স্বীকৃতি দিয়েছে। ঐতিহাসিক সূত্রের প্রাচীন এই খেলাটির সম্পর্কে আরও বিস্তারিত বর্ণনা আজো মেলেনি। তবে ফিফার তথ্যমতে, রোমানদের হার্পেসটন- এর চেয়ে বেশি প্রাণবন্ত ছিল গ্রিকদের এপিস্কিরোস।
ফিফা জানায়, ‘খেলাটি ৭০০-৮০০ বছর ধরে তুমুল জনপ্রিয় ছিল। পরবর্তীকালে ব্রিটেন জয়ের পর সেখানে খেলাটির প্রচলন নিয়ে যায় রোমানরা। কিন্তু, তখনও পায়ের ব্যবহার ছিল খুবই কম’।
গ্রিসের এথেন্সের জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে একটি মাটির তৈরি ঘড়া রয়েছে, এতে আঁকা রয়েছে উরু দিয়ে বল সামলানো এক গ্রিক যুবকের ছবি। এই ঘড়ার নকশা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই পরবর্তীকালে ইউরোপীয়ান কাপ ফুটবলের শিরোপা ডিজাইন করা হয়।
এসডব্লিউএসএস/১১৫৭
আপনার মতামত জানানঃ