স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ‘ব্রাভো’তে প্রচারিত আগামী দিনে মানুষের বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী ড. কারি ভয়ংকর কথা বলেছেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে মানবজাতিকে ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভরতার মূল্য দিতে হতে পারে। ডিজিটাল প্রযুক্তির আশ্চর্যজনক কাজ একসময় শেষ সীমানায় পৌঁছে যাবে। তখন সুস্থ-স্বাভাবিক থাকার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করাটাই জটিল হয়ে পড়বে। শ্বাসরুদ্ধকর ডিজিটাল প্রযুক্তি বিরক্তি থেকে মুক্তির জন্য সব মানুষ নিরাপদ শান্তি খুঁজবে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে মানব প্রজাতির শুরু হবে এই ক্ষয়। মানুষ হতে পারে অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীর মতো। সমাজের পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ, ওঠাবসার দক্ষতা, সেই সঙ্গে ভালোবাসা, সহানুভূতি, বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধার মতো মানবিক অনুভূতিগুলো হারিয়ে যেতে পারে। মানুষ অন্যের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। দলবদ্ধভাবে কাজ করাও ভুলে যাবে। শারীরিকভাবে তারা হবে আরও তরুণসুলভ। ডিজিটাল মেশিনে প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে অভ্যস্ত হওয়ায় চিবিয়ে খাওয়ার প্রয়োজন হবে না। তাই মানুষের চিবুকের আকারও কমে যাবে। মানুষের শারীরিক গঠন ও প্রজনন ক্ষমতা বাড়বে। পুরুষদের মুখের আকৃতি হবে প্রতিসম বা ভারসাম্যপূর্ণ। আবার মেয়েরা হালকা মসৃণ লোমবিহীন ত্বক, লম্বা, স্বচ্ছ, উজ্জ্বল ঘন চুলের এবং আরও নানা সামঞ্জস্যপূর্ণ সৌন্দর্যময় বৈশিষ্ট্য ধারণ করবে।
গবেষকরাও বলছেন, মানুষের আকৃতি-চেহারা একদম পাল্টে যাবে। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তি ও শিল্প-সভ্যতা পৃথিবীর পরিবেশ দূষণ করছে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ কমছে। তাপমাত্রা বাড়ছে। বরফ গলছে। দূষণ বাড়ছে। বিশ্বপ্রকৃতি এখনই ব্যাপক হুমকির সম্মুখীন। বিশেষ করে ক্লোরো-ফ্লোরো কার্বন বা সিএফসির আধিক্যে উত্তর গোলার্ধের আকাশের ওজোনস্তর ছিদ্র হয়ে গেছে। যে কারণে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে ঠিকরে আসছে।
আর কে না জানে, অতিবেগুনি রশ্মি দেহে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে এবং ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ওদিকে পৃথিবীর কক্ষপথে বাড়ছে মহাকাশ বর্জ্যরে পরিমাণও। তাই মহাশূন্যের চৌম্বকীয় প্রভাবে ডিএনএ পরিবর্তন ঘটলে মানুষ বর্তমানের চেয়ে হয়তো অতিবুদ্ধিমান কিংবা নির্বোধ কোনো প্রাণীতে রূপান্তর হবে। বিজ্ঞানীরা জানান, ‘এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে মানুষের আকৃতি বা অবয়ব বদলে যেতে বাধ্য।’
কারণ ডিএনএ ড্যামেজ হলে বিকলাঙ্গ মানুষ জন্ম নেবে। দেখা যাবে মানুষের দুটো কানের জায়গায় রয়েছে একটা বা পাঁচটা কান। হাত-পা বাঁকা। কিংবা দেখা যাবে পুরো শরীরটাই অদ্ভুত। ডিএনএর ক্ষতিগ্রস্ততা এবং ডিএনএ পরিবর্তনের কারণে মানুষের দৈহিক আকার-আকৃতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। ভিন্ন আঙ্গিকে রূপান্তর হবে বর্তমান মানুষ।
অতীতের বিভিন্ন ধাপে, মানব প্রজাতির মুখাবয়ব কেমন ছিল তা জানিয়ে দিয়েছে বিজ্ঞান। বর্তমানে মানবপ্রজাতির মুখাবয়ব কেমন, তার সাক্ষী আমরা নিজেরাই। মনে প্রশ্ন জাগে, কেমন দেখতে হবে ভবিষ্যতের মানুষদের মুখ?
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অ্যানথ্রোপলজির প্রফেসর এরিক ট্রিনকাস বলেছেন, ‘মানব প্রজাতির মুখের মূল কাঠামো তৈরি হয়েছিল ২০ লাখ বছর আগে। তারপর ক্রমাগত চলেছে পরিবর্তন। যদি এভাবেই পরিবর্তিত হতে থাকে মানুষের মুখ, তাহলে একসময় মানবের মধ্যে দেখা দিতে পারে নিওটেন। মানে হলো সঠিক বয়সের তুলনায় অনেক কম বয়স্ক দেখতে লাগবে মানুষের মুখকে।’
ড. ট্রিনকাসের মতে, ‘বড় খুলি, ছোট মুখ, বড় বড় চোখ ও ছোট থুতনি নিয়ে জন্ম নেবে আগামীর মানুষ।’ ডক্টর অ্যালান কোয়ান বলেন, ‘আগামীর মানুষের মুখ আকারে বেশ ছোট হবে। চোখ দুটো মুখের তুলনায় অস্বাভাবিক বড় হবে। চোখের পাতা আরও মোটা হয়ে যাবে। শরীরের সঙ্গে মুখের চামড়ার রংও গাঢ় হবে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচার জন্য। নাক ছোট ও আরও টিকলো হবে। শ্বাস গ্রহণের সুবিধার জন্য নাসারন্ধ্র আরও বড় হবে। মুখের ডান দিক ও বাঁ দিকের গঠন একেবারে এক হবে।’
বিজ্ঞানীরা জানান, আমাদের মুখাবয়বের এখনও পরিবর্তন হয়ে চলেছে। ভবিষ্যতের প্রয়োজনে এই বিবর্তন হয়েই চলেছে। তারা বলছেন, মুখের প্রধান অংশগুলোর কাজ একই থাকবে। তবে সেগুলোর আকার ও আকৃতির আরও কিছু পরিবর্তন হবে ভবিষ্যতে। এই পরিবর্তনগুলো হবে তখনকার পৃথিবী ও মানুষের জীবনযাত্রার প্রয়োজন অনুসারে। ইতোমধ্যেই সেসবের কিছু ইঙ্গিত মিলেছে।
ব্রিটেনের ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পুরনো প্রস্তর যুগসংক্রান্ত বিষয়ের বিশেষজ্ঞ প্রত্নতাত্ত্বিক পেনি স্পিকিংসের মতে, মানুষের খাদ্যাভ্যাস মানুষের মুখাবয়বের আকারের পরিবর্তনের জন্য দায়ী হবে। তিনি বলেন, মানুষের খাদ্যাভ্যাস পাল্টে যাচ্ছে, এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে মানুষের মুখাবয়বের ওপর। আমাদের আদিম পূর্বপুরুষদের থেকে আমাদের মুখের গঠন আলাদা হয়ে গেছে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের ফলেই।
এই মতবাদে বিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিগত এক লাখ বছর ধরে মানুষের মুখগহ্বর আকারে ক্রমশ ছোট হচ্ছে। কারণ পরিবর্তিত পৃথিবীতে নতুন নতুন খাদ্যের ওপর মানুষকে ভরসা করতে হচ্ছে। মানুষের খাওয়ার ধরনও পাল্টাচ্ছে। বর্তমানে মানুষের দুরন্তগতিতে চলা জীবনযাত্রা, ফাস্টফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে। স্যুপ, জুস ও নরম হালকা খাবার খাওয়ার দিকে মানুষের ঝোঁক ক্রমশ বাড়ছে। শক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে গেছে। তাই খাবার মুখ গহ্বরে রেখে বেশিক্ষণ ধরে চিবাতে হচ্ছে না। দ্রুত খাবার চলে যাচ্ছে পেটে।
মানুষ খাওয়ার সময় ক্রমশ অল্প অল্প খাবার নিচ্ছে মুখে। তাই বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের মুখগহ্বর এবং ‘হাঁ’ আকৃতিতে আরও ছোট হবে ভবিষ্যতে। তবে মানুষের মুখের বিভিন্ন অংশ ছোট হওয়ার একটা সীমাও থাকবে। মুখগহ্বর ছোট হলেও নাসারন্ধ্র দুটো কিন্তু আর ছোট হবে না। কারণ শ্বাস গ্রহণের জন্য আমাদের দরকার বড় নাসারন্ধ্র। বিজ্ঞানীরা দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, ‘যতদিন পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব থাকবে, মানুষের মুখের পরিবর্তন ততদিন হতেই থাকবে।’
বিজ্ঞানীরা খোলাসা করে বলেন, হাজার হাজার বছর আগেকার আদিম মানবের চেহারার মতো অবস্থায় ফিরে যাবে বর্তমান মানুষ। মানুষ বেঁটে হবে। ক্ষদ্রাকৃতির এই বামন মানুষরা থাকতে পারবে পাহাড়ের গুহায়। বন-বাদাড়ে কিংবা ডালে-ডালে ঝুলেও থাকতে পারবে। আজ থেকে এক লাখ বছরের মধ্যে মানুষের বর্তমান আকৃতি একদম লোপ পেয়ে যাবে। বর্তমান ‘হোমোসেপিয়েন্স’ নামের স্বাভাবিক দৃশ্যমান সুন্দর আকৃতির মানব প্রজাতি আর থাকবে না। এভাবে অতি ধীরে আগামী দিনে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বর্তমানের সুন্দর অবয়বের মানুষ। তবুও বিশ্বাস করতে চায় না মন। মন বলে, ইশ! এত বাজে দেখতে কখনো ছিলাম না। তবুও বিজ্ঞানের সত্যকে এড়ানো কি সম্ভব?
এসডব্লিউ/এসএস/১৯৫৫
আপনার মতামত জানানঃ