ছাত্রলীগ না করে বামপন্থী সংগঠন করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীকে রাতভর হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ‘নিষিদ্ধ’ সংগঠনের সদস্য এবং ‘সরকার–বিরোধী’ বলেও আখ্যা দেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।
এমনকি মধ্যরাতেই ওই শিক্ষার্থীর বাবাকে ফোন দিয়ে ক্যাম্পাসে এসে তাদের ছেলেকে নিয়ে যেতে বলেছেন তারা।
মঙ্গলবার ভোররাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২২৩ নং রুমে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন—হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আহমদ উল্লাহ আশরাফ ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক রেজভী হাসান। তারা হল ছাত্রলীগের সভাপতি আজহারুল ইসলাম মামুনের অনুসারী। আজহারুল ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামির সাদিক লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
হল প্রাধ্যক্ষকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামির সাদিক বলেন, গতকাল রাত ১টায় আহমদুল্লাহ আশরাফ ও রেজভী হাসান আমার রুমে বইপত্র, ফোন সার্চ করা শুরু করে এবং আমার কাছে গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রস্তাব, ছাত্র ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রসহ অন্যান্য বই পেয়ে তারা সারারাত ধরে মানসিক টর্চার করেন এবং মারধরের হুমকি দেয়। এমনকি তারা আমার বাবা-মাকে ফোন দিয়ে আমাকে নিয়ে যেতে বলে।’
ভুক্তভোগী আরও বলেন, আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে মা-বাবা আজ (মঙ্গলবার) সকালে ঢাকায় এসেছেন। আমি অবিলম্বে প্রশাসনের কাছে এর বিচারের দাবি এবং হলে আমার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাই।
আমার কাছে গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রস্তাব, ছাত্র ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রসহ অন্যান্য বই পেয়ে তারা সারারাত ধরে মানসিক টর্চার করেন এবং মারধরের হুমকি দেয়। এমনকি তারা আমার বাবা-মাকে ফোন দিয়ে আমাকে নিয়ে যেতে বলে।
হল ছাত্রলীগের সভাপতি আজহারুল ইসলাম মামুন বলেন, যে দুইজনের নামে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তারা তার রুমমেট, এখানে হল ছাত্রলীগের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। তার কাছে ইসলামি এবং বাম সংগঠনের বই দেখে শুধু জানতে চাওয়া হয়েছে। তাকে কেউ নির্যাতন করেনি, হল থেকে বেরও করেনি। বাবা-মা’কে ডেকে আনার যে অভিযোগ সেটাও মিথ্যা।
হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরেছি। অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি। যথাযথ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে ছাত্রলীগ কর্তৃক ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকে হয়রানির নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি সামিরকে মানসিক নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এই হত্যার দায়ে ছাত্রলীগের ২০ নেতা-কর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এরপর খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ছাত্রলীগের চার নেতা-কর্মীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। দুটি ঘটনাই শিক্ষাঙ্গন তো বটেই, এর বাইরেও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। তা সত্ত্বেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের চৈতন্যোদয় ঘটেছে বলে মনে হয় না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো সংগঠনের তৎপরতা নেই বললেই চলে। এরপরও ছাত্রলীগ না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারবে না বলে হুমকি দেওয়া তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বই প্রকাশ পেয়েছে।
তারা বলেন, ছাত্রলীগ নামধারী যারা সহপাঠীকে হেনস্তা করেছেন এবং হুমকি দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। আমরা জানি, অপরাধের বিচার হলে ও অপরাধীরা শাস্তি পেলে তাদের শঙ্কিত হওয়ার কথা। কিন্তু ছাত্রলীগের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা সন্ত্রাসীরা এতটাই বেপরোয়া যে শাস্তিও তাদের দুষ্কর্ম থেকে বিরত রাখতে পারছে না। ছাত্রলীগ নেতৃত্ব কীভাবে এর দায় এড়াবে?
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১০
আপনার মতামত জানানঃ