হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে হিযবুত তাহরীর। নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনটি রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারিং করেছে। পোস্টারে দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হিযবুত তাহরীরের নেতৃত্বের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়াও চালানো হচ্ছে সরকারবিরোধী প্রোপাগাণ্ডা।
বাংলাট্রিবিউনের খবরে বলা হয়, রাজধানীর বিভিন্ন প্রধান সড়কসহ অলিগলির দেয়ালে দেখা যাচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর-এর পোস্টার। রাতের অন্ধকারে এসব পোস্টার কে বা কারা লাগাচ্ছে এখনও তাদের চিহ্নিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে তারা বলছে, বিষয়টি নজরে এসেছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মিরপুর, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, ধানমন্ডি ছাড়াও বিভিন্ন জায়গার প্রধান সড়ক এবং অলিগলিতে হিযবুত তাহরীরের এসব পোস্টার দেখা যাচ্ছে।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কারা হিযবুত তাহরীরের পোস্টার লাগিয়েছে সেসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য ও পর্যালোচনা করে আমরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি।
এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস শাখার পুলিশ সুপার আসলাম খান বলেন, হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা বিভিন্ন সময় অনলাইনে মিটিং করছে। নিজেদের প্রচার-প্রচারণার জন্য বিভিন্ন জায়গায় লিফলেট বিলিসহ পোস্টার লাগাচ্ছে। যখনই আমরা তথ্য পাচ্ছি তাদের আইনের আওতায় আনছি।
হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা বিভিন্ন সময় অনলাইনে মিটিং করছে। নিজেদের প্রচার-প্রচারণার জন্য বিভিন্ন জায়গায় লিফলেট বিলিসহ পোস্টার লাগাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ২০০০ সালে হিযবুত তাহরীর ‘লিবারেটেড ইয়ুথ’ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গোপনে কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে সংগঠনটি প্রকাশ্যে তৎপরতা চালায়। পরে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি এ জঙ্গি সংগঠনটি আত্মগোপনে যায়। আর ২০০৯ সালের ২০ মার্চ ছাত্র মুক্তির ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় পুনরায় বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে।
হিযবুত তাহরীরের কেন্দ্রীয় নেতারা ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থিত হন। ঐ সম্মেলনে হিযবুত তাহরীরসহ সরকারবিরোধী সংগঠনগুলোর ওপর গ্রেপ্তার ও দমন পীড়নসহ বিভিন্ন নির্যাতনের ডকুমেন্টারি ফুটেজ এক প্রদর্শনীতে উপস্থাপনের চেষ্টা চালায়। ২০০৯ সালের অক্টোবরে মতিঝিলে তৎকালীন সংসদ সদস্য ও বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপসের ওপর বোমা হামলা করা হয়। তখন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হিযবুত তাহরীরকে সন্দেহের তালিকায় রাখে। পরে ২২ অক্টোবরে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সংগঠনটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
হিযবুত তাহরীর পৃথিবীর পাকিস্তানসহ ১৮টি দেশে নিষিদ্ধ। দেশে হিযবুত তাহরীরের ১০টি পাঠচক্র রয়েছে। পাঠচক্রে পাকিস্তান, প্যালেস্টাইন, ইরাক, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের যুদ্ধ, মুসলমানদের ওপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ভিডিও ফুটেজ, স্থির চিত্র ও বিভিন্ন পুস্তিকার মাধম্যে মেধাবী শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ছাত্র মুক্তির পাঠচক্রের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের মগজ ধোলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। হিযবুত তাহরীর কর্মী ও সমর্থকরা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা বিনষ্ট করাসহ দেশকে অস্থিতিশীল করে জনমনে ভীতি সঞ্চার করার উদ্দেশ্যে নাশকতামূলক কার্যক্রমের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা মনে করছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য যেকোনও সংগঠনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া আইনশৃঙ্গলা বাহিনীর কর্তব্য। স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় উগ্রবাদী চিন্তার প্রসার শান্তিকামী মানুষের জন্য হুমকি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবশ্যই এ ধরনের সংগঠনগুলোর প্রতি অধিক নজরদারি রাখা উচিত। বিষয় এমন নয় যে হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা হঠাৎ করে আসে লিফলেট বিলি করে চলে যায়। এটি তাদের একটি কৌশলগত অবস্থান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫৮
আপনার মতামত জানানঃ