জেলা পরিষদ নির্বাচনে এক সদস্য পদপ্রার্থী ভোট আদায়ের কৌশল হিসেবে আগের রাতে কিছু ভোটারদের জাল টাকা দিয়ে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের জয়ী প্রার্থী সুমন সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছে অন্তত ৭ জন ইউপি সদস্য।
জানা গেছে, ওই ভোটাররা রাতে টাকা নেয়ার পর নিদিষ্ট প্রতীকে রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। পরে প্রার্থীর দেয়া সেই টাকা নিয়ে কিছু কেনাকাটা ও ফুর্তির জন্য বের হন তারা। তবে কেনাকাটা করতে গিয়ে পরখ করে দেখেন সবগুলো টাকাই জাল। এরপর দ্রুত প্রার্থীকে জানালে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, জাল নোট যার কাছে পাওয়া যাবে তাকেই কিন্তু পাকড়াও করবে পুলিশ। একথা শুনেই স্তব্ধ হন ওই সব ভোটাররা।
সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী প্রার্থী মো. সুমন সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন অন্তত সাতজন ইউপি সদস্য। গতকাল সোমবার ওই জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়।
ভোট দেওয়ার বিপরীতে টাকা নেওয়া এই ইউপি সদস্যদের কেউ নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। তারা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গত রোববার রাতে প্রার্থীর কাছ থেকে টাকার বান্ডিল নেওয়ার পর গতকাল সোমবার রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া মডেল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে সুমনকে ভোট দেন তারা। এরপর প্রার্থীর দেওয়া টাকায় কেনাকাটা করতে বেরিয়ে দেখেন টাকাগুলো সব জাল নোট। এ কথা প্রার্থীকে জানালে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, জাল নোট যার কাছে পাওয়া যাবে, তাকেই পাকড়াও করবে পুলিশ।
নাম প্রকাশ না শর্তে প্রতারণার স্বীকার ভোটাররা জানান, আগের রাতে তাদের ওই প্রার্থী নিজ হাতে ওই নোটের বান্ডিল গুলো বিতরণ করেছেন। আর বলেছেন এই টাকা ভোটের আগে যেন খরচ না করা হয়। খরচ করলে টাকা দেয়ার বিষয়টি জানাজানি হবে। আর এতে তার ক্ষতি হবে। পরে সেই কথা অনুযায়ী তারা ভোটের আগে টাকাগুলো খরচ না করে ভোট দেয়ার পর স্থানীয় ধানগড়া বাজারে গেলে দোকানদার টাকা হাতে নিয়ে উল্টিয়ে দেখে বলে এগুলো জাল নোট। এর পর টাকাগুলো নিয়ে প্রার্থীর কাছে গেলে তিনি পুলিশে ধরিয়ে দিবেন বলে নানা ভাবে ভয় ভীতি দেখিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেন।
সুমন শুধু জাল টাকা দিয়েই প্রতারণা করেননি। ভোটের আগের রাতে তিনি ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে করমর্দন করে তাকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি নেন। এ সময় তার হাতে একটি ছোট কোরআন শরিফ ছিল। পরে ভোটের দিন সকালে তিনি ভোটারদের বলেন—তুমি কিন্তু পবিত্র কোরআন শরিফ ছুঁয়ে আমাকে ভোট দেবে বলে কথা দিয়েছ।’
স্থানীয় বেশ কজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ নির্বাচনকে ঘিরে গত দুয়েক সপ্তাহ ধরেই প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অর্থনৈতিক লেনদেন করেছেন। কোন কোন প্রার্থী এসব ভোটারদেরকে লক্ষাধিক টাকা দিয়েছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। তবে সেগুলো জাল নোট কিনা তাদের জানা নেই।
এ বিষয়ে ওই ওয়ার্ডের পরাজিত প্রার্থী গোলাম মোস্তফা বলেন, তিনি জাল নোটের বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছেন। তবে কে কাকে জাল টাকার বান্ডিল দিয়েছে সেটা তার জানা নেই।
মো. সুমন সরকার রায়গঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। জেলা পরিষদের সদস্য পদে (বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীক) বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এর আগেও তিনি জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। ভোটারদের এমন অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, তিনি নির্বাচিত হওয়ায় প্রতিপক্ষের লোকজন এমন মিথ্যা ও গুজব ছড়াচ্ছে। কোনো ইউপি সদস্যকে তিনি জাল টাকার বান্ডিল দেননি। ভোটাররা তাকে ‘ভালোবেসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে’ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন।
ভোট আদায়ের জন্য সুমন সরকারের অভিনব আরেক কৌশলের কথা বলেছেন একজন ইউপি সদস্য। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘সুমন শুধু জাল টাকা দিয়েই প্রতারণা করেননি। ভোটের আগের রাতে তিনি ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে করমর্দন করে তাকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি নেন। এ সময় তার হাতে একটি ছোট কোরআন শরিফ ছিল। পরে ভোটের দিন সকালে তিনি ভোটারদের বলেন—তুমি কিন্তু পবিত্র কোরআন শরিফ ছুঁয়ে আমাকে ভোট দেবে বলে কথা দিয়েছ।’
এ প্রসঙ্গে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে আমরা এই বিষয়টিতে অবগত নই।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। টাকা ও ক্ষমতা বলেই এখন জয় ছিনিয়ে নিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। এর মধ্যে ভোটারদের সাথে এমন প্রতারণা এটাই প্রমাণ করে নির্বাচনী পরিবেশ রক্ষায় নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। অভিযুক্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে তার জয় বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩৫
আপনার মতামত জানানঃ