বিগত কয়েকদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিককালের বক্তব্যগুলোতে তিনি দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গ বরাবরই সামনে নিয়ে আসছেন। হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন।
আজও ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২২’ পালন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আবারও অনুরোধ করছি, কোনো খাদ্যের অপচয় নয়, যার যেখানে যতটুকু জমি আছে, তা চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়ান। সারা বিশ্বে যে দুর্যোগের আভাস আমরা পাচ্ছি, তা থেকে বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করুন। আমি বিশ্বাস করি, সকলের প্রচেষ্টায় এটা করা সম্ভব।’
কয়েকদিন ধরে দুর্ভিক্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আহাজারি শোনা গেলেও সরকারি পর্যায়ে তার প্রস্তুতি যেন সামান্যই। উলটো আয়োজন করে বিভিন্ন ইস্যুতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার খালি হচ্ছে কেবল।
জানা গেছে, জনপ্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের দুটি পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের জন্য বাসভবন করছে সরকার। রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় পাশাপাশি নির্মিত হবে দুটি ভবন। প্রকল্প অনুসারে এগুলো নির্মাণে খরচ হবে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা। আর এই টাকার জোগান দেবে সরকারি তহবিল।
প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুসারে প্রতিটি ভবন হবে তিন তলা। সাড়ে ১৮ হাজার বর্গফুটের। প্রতিটি ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে সাড়ে ২১ কোটি টাকা করে। এর মধ্যে প্রতিটি বাসভবনে দুই সেট সুইমিং পুল হবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গতকাল রোববার ‘মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সরকারি বাসভবন নির্মাণ’ প্রকল্পটি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ৫০ কোটি টাকার নিচে হওয়ায় পরিকল্পনামন্ত্রী নিজ ক্ষমতাবলে এটি অনুমোদন করতে পারবেন।
প্রকল্পের নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনতলা দুটি ভবন নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে সাড়ে ৯ কোটি টাকা করে। এ ছাড়া দুটি ভবনেই অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাতে খরচ হবে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। দুটি ভবনে আসবাবের পেছনে খরচ হবে দেড় কোটি টাকা। ২টি ভবনের জন্য ৭টি করে মোট ১৪টি এলইডি টেলিভিশন কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে ৯ লাখ টাকা। সিসিটিভি সিস্টেম কেনা হবে ৩২টি।তাতে খরচ হবে ৬০ লাখ টাকা। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার জন্য পৌনে দুই কোটি টাকা খরচ হবে। এক হাজার কেজি লিফটে (ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড) খরচ ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থায় খরচ হবে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
এ ছাড়া বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ খাতে খরচ হবে ১৮ লাখ টাকা।
প্রকল্পের কারণ হিসেবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বলছে, বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ দুটি পদের বিপরীতে নির্ধারিত বাসভবন নেই। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এখন রাজধানীর মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে থাকেন। আর মুখ্য সচিব থাকেন রাজধানীর গুলশানে সরকারি বাসভবনে। তবে দুটি বাসভবন এই পদের বিপরীতে নির্ধারিত নয়। যখন যিনি এই দুটি পদে বসেন, তারা তাদের পছন্দমতো সরকারি বাসায় ওঠেন। সে জন্য দুটি পদের বিপরীতে আলাদা বাসভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেশের ৭০ ভাগ মানুষ উচ্চমূল্যের কারণে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছে না।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সরকার দেশবাসীকে কৃচ্ছ্রসাধনের পরামর্শ দিচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নতুন প্রকল্প অনুমোদন না দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ ও যানবাহন কেনাকাটা সীমিত করা হয়েছে। এমন সময়ে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলো।
৭০ ভাগ মানুষ প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারেন না
এদিকে আজ সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন ও ঋণ এবং উন্নয়ন বিষয়ক এশীয় গণআন্দোলন আয়োজিত খাদ্য ও জলবায়ু প্রশ্ন বিষয়ক সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য বারবার বৃদ্ধির ফলে কৃষকরা উৎপাদনে ব্যর্থ হচ্ছে। ফসল উৎপাদন করতে না পারায় তারা অর্থাভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। দেশের ৭০ ভাগ মানুষ উচ্চমূল্যের কারণে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছে না।
তারা বলেন, দেশে খাদ্য মূল্য বৃদ্ধি জনজীবনে চরম সংকট তৈরি করেছে। এ সংকট মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগ খুব বেশি সন্তোষজনক নয়। তার ওপর সরকার দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে একের পর এক সংকট বাড়িয়ে তুলছে। বিদ্যুৎ ও তেলের দাম বাড়ানোর পরও ঘন ঘন ও দীর্ঘমেয়াদি লোডশেডিং জনজীবনে নাভিশ্বাস এনেছে। বিদ্যুতের অভাবে কৃষি ও শিল্প উভয় ক্ষেত্রই ক্ষতিগ্রস্ত। পরবর্তী বছর একটি কঠিন দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির সম্ভাবনা প্রতীয়মান হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, খাদ্য ও খাদ্য উৎপাদনের উৎস যথা ভূমি, সমুদ্রকে মুনাফা তৈরির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। খাদ্য ও কৃষি মানুষের অধিকার। যেকোন মূল্যে এ অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে।
সমাবেশ থেকে ৭ দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলো
• খাদ্য, ভূমি ও পানির ওপর অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখা
• মৎস্য ও সমুদ্র রক্ষা করা
• ভূমির ব্যবহার হতে হবে খাদ্য উৎপাদনের জন্য, বিলাসিতার জন্য নয়
• জলবায়ু সংবেদনশীল খাদ্য ব্যবস্থা চাই এখনই
• জলবায়ু ও খাদ্য নায়বিচার করা
• অভিযোজনের জন্য সরকারী অর্থ ও কর্মসূচি নেওয়া
• জনগণ ও সমাজের জন্য জলবায়ু সংবেদনশীলতা
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫৮
আপনার মতামত জানানঃ