কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়ি এলাকায় আস্তানা গেড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে অনেক রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের অভ্যন্তরে খুন, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তাদের কাছে দৈনন্দিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারাও। প্রায়ই স্থানীয়দের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে তারা।
গত একমাসে ১৯ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছেন ১৩ জন। প্রশাসন উদ্ধার করেছে চারজনকে। মুক্তিপণ না দেওয়ায় আহত অবস্থায় দুইজনকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
এরই মধ্যে অপহরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৫ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ধরনের অপহরণের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনসহ শতাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে ৭টি মামলা হয়েছে উখিয়া ও টেকনাফ থানায়।
আটককৃত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা হলো- জোবাইর, নুরুল আলম, কায়ছার, হামিদ ও রমিজ। তারা বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দা।
টেকনাফ থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, সন্ত্রাসীরা যতই শক্তিশালী হোক ধরা তাদের পড়তেই হবে।
উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ক্যাম্পে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে পুলিশ।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার দুই ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দীন চৌধুরী ও রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর কাছ থেকে স্থানীয় কৃষক, মজুর, ছাত্র, ব্যবসায়ী কেউ নিরাপদ নন। প্রতিদিন কোনো না কোনো গ্রাম থেকে লোকজন ধরে নিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা।
টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াবুল হক জানান, রোহিঙ্গা ডাকাতদের আতঙ্কে পর্যটন সম্ভাবনাময় পাহাড়ি ঝরনা ‘স্বপ্নপুরী’ অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
অপহরণ-বাণিজ্য’ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন-দুপুরে অস্ত্রসহ দলবল নিয়ে পাহাড়ের ভেতর থেকে এসে যে কাউকে সামনে পেলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, টেকনাফের হোয়াইক্যং-শামলাপুর পাহাড়ি সড়ক, খারাংখালীর কম্বনিয়া, হ্নীলা ইউনিয়নের আলী আকবরপাড়া, পানখালী, রঙ্গিখালী, লেদা এবং জাদিমুড়া উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়ার একাধিক পাহাড়ি এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মাথচাড়া দিয়ে উঠেছে।
তারা কৃষকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে অপহরণ করে তাদের বন্দিশালায় আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করছে। কেউ কেউ প্রাণভয়ে ধারদেনা করে, গরু-ছাগল ও ভিটেমাটি বিক্রি করে সন্ত্রাসীদের মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসছেন। আর মুক্তিপণ দিতে না পারলে ‘টর্চার সেলে’ চলছে ভয়াবহ নির্যাতন। গুলিবিদ্ধ হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় ফিরে আসছেন অনেকে।
স্থানীয়রা জানান, ‘অপহরণ-বাণিজ্য’ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন-দুপুরে অস্ত্রসহ দলবল নিয়ে পাহাড়ের ভেতর থেকে এসে যে কাউকে সামনে পেলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তথ্যমতে, গত তিন মাসে টেকনাফে অর্ধশতাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।
গত ৯ অক্টোবর সকালে পাহাড়ে মহিষ আনতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন রামুর জোয়ারিয়ানালার কৃষক আজিজ। পরে তিন ঘন্টা পাহাড় চষে তাকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। এর আগেই তার ওপর চলে নির্মম নির্যাতন।
একইভাবে গেল ৭ অক্টোবর টেকনাফের বাহারছড়া বড়ডেইল এলাকায় এলোপাতাড়ি গুলি করে চাষি আব্দুর রহমানকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। এতে গুলিবিদ্ধ হয় শরীফ নামে আরেক চাষি।
এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মরিচ্যানা এলাকায় ক্ষেতে কাজ করার সময় নজির আহমেদ ও তার ছেলে হোসেনসহ চারজনকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। দুজন কোনও মতে পালিয়ে আসলেও ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসেন নজির আহমেদ ও তার ছেলে মোহাম্মদ হোসেন।
বিশ্লেষকরা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, অপরাধ, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, গুম, মাদক পাচার, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপর্কমে জড়িত থাকার যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে। দিনের পর দিন তারা স্থানীয়দের ওপর হামলা করছে। স্থানীয়দের গুম করে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। তাদের কাছে স্থানীয়রা নিরাপদ নয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে ক্যাম্পগুলোর আশপাশে স্থানীয়দের বসবাস অযোগ্য এবং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪০
আপনার মতামত জানানঃ