সিনেমায় নায়ক-নায়িকার চুমু খাওয়ার দৃশ্য যেন এই সময়ে খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তবে যেকালে মেয়েদের সিনেমায় কাজ করাটাও ছিল চ্যালেঞ্জের, সেসময় কিনা পর্দায় চুমু খাওয়ার দৃশ্য করেন এক সাহসী নায়িকা। ১৯৩৩ সালে সর্বপ্রথম ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে দীর্ঘতম চুমু খান এই নায়িকা।
প্রায় চার মিনিট ধরে পর্দায় নায়ককে চুমু খেয়েছিলেন তিনি। তবে নায়ক ছিলেন তার-ইস্বামী। বলছি, দেবিকা রাণীর কথা। তবে দেবীকাই প্রথম নন।
তার আগেও ভারতীয় চলচ্চিত্রে চুম্বন দৃশ্য দেখানো হয়েছে। ১৯২১ সালে বিলেত ফেরত নামক নির্বাক বাংলা ছবির প্রযোজক ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। বরিশালের ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন তিনি। ছবি পরিচালনা করেছিলে এন সি লাহিড়ি। এই ভারতীয় ছবিতেই প্রথম চুমুর দৃশ্য দেখানো হয়েছিল। তবে দেবিকার চুমুর বিশেষত্ব আলাদা।
দেবিকা এবং হিমাংশু ১৯৩৩ সালে জার্মানি থেকে ভারতে চলে আসেন। হিমাংশু ‘কর্ম’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এটি ছিল তার প্রথম সবাক চলচ্চিত্র। তার আগের চলচ্চিত্রগুলোর মতো এই চলচ্চিত্রটিও ভারত, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রযোজিত হয়।
এই চলচ্চিত্রে হিমাংশু মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন। তিনি তার স্ত্রী দেবিকাকে এই চলচ্চিত্রে মুখ্য নারী চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ করে দেন। ‘কর্ম’ সিনেমাটি একজন ভারতীয় দ্বারা নির্মিত প্রথম ইংরেজি ভাষার চলচ্চিত্র। সেইসঙ্গে প্রথমদিকের চুম্বন দৃশ্যসম্বলিত ভারতীয় চলচ্চিত্রের মধ্যেও অন্যতম।
এই চলচ্চিত্রে হিমাংশু এবং দেবিকার চুম্বন প্রায় চার মিনিট ধরে দৃশ্যায়িত করা হয়। ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, দীর্ঘ ৮০ বছরের মধ্যে পর্দায় চলমান চুম্বন দৃশ্যের মধ্যে রেকর্ড গড়ে ‘কর্ম’ ছবিটি। দেবিকা রাণী এই চলচ্চিত্রে হিন্দি ও ইংরেজিতে একটি দোভাষী গান গেয়েছেন। যা বলিউডের প্রথম ইংরেজি গান হিসেবে মনে করা হয়।
হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রটি ১৯৩৩ সালের মে মাসে লন্ডনে প্রথম দেখানো হয়। উইন্ডসর এ রয়েল পরিবারের জন্য একটি বিশেষ পরিবেশনার পাশাপাশি, এই ছবিটি সমগ্র ইউরোপে সমাদৃত হয়। লন্ডনের সংবাদমাধ্যম দেবিকার অভিনয়ের প্রশংসা করায় তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাত লাভ করেন।
দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় এক সমালোচক দেবিকা রাণীর ‘সৌন্দর্য’ এবং ‘কমনীয়তা উল্লেখ করে তাকে প্রথম শ্রেণীর উদীয়মান তারকা আখ্যা দেন।
১৯৩৩ সালে বিবিসি ব্রিটেনে তাদের প্রথম টেলিভিশনে সম্প্রচারের অভিনয় করার জন্য দেবিকাকে আমন্ত্রণ জানায়। তিনি ভারতে বিবিসির শর্ট ওয়েভ রেডিও সম্প্রচারও উদ্বোধন করেন।
ইংল্যান্ডে সাফল্য সত্ত্বেও ১৯৩৪ সালে ভারতে ‘নাগিন কি রাগিণী’ নামে হিন্দিতে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটি ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। যাই হোক, এটি সমালচকদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে যা পরবর্তীতে তাকে ভারতীয় চলচ্চিত্রে অন্যতম প্রধান নায়িকার আসনে বসায়।
এসডব্লিউ/এসএস/২০১৭
আপনার মতামত জানানঃ