এর আগে মানুষের রক্ত এবং ফুসফুসে হদিশ মিলেছিল মাইক্রোপ্লাস্টিকের। সম্প্রতি প্রথমবারের জন্য মাতৃদুগ্ধেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পেলেন গবেষকরা। ‘পলিমার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্র রীতিমতো ভাঁজ ফেলে দিয়েছে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের কপালে।
উল্লেখ্য, ব্যাস ১ ন্যানোমিটার থেকে ৫ মিলিমিটার। মাইক্রোপ্লাস্টিক, তথা প্লাস্টিকের এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাই এখন ভাবিয়ে তুলেছে গবেষকদের। খালি চোখ এমনকি অনেকক্ষেত্রে মাইক্রোস্কোপেও অদৃশ্য এই দূষক ছড়িয়ে পড়েছে মারিয়ানা ট্রেঞ্চ থেকে এভারেস্ট— সর্বত্রই।
সম্প্রতি ইতালির রোমে একটি বিশেষ সমীক্ষা করেছিলেন ‘ইউনিভার্সিটা পলিটেকনিকা ডেলে মার্চে’-র গবেষকরা। সদ্য মা হওয়া ৩৪ জন সুস্থ মহিলার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল মাতৃদুগ্ধের নমুনা।
ল্যাবরেটরিতে সেই নমুনার বিশ্লেষণে উঠে আসে ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই মাতৃদুগ্ধে উপস্থিত রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। আরও অবাক করার বিষয় হল, এই গবেষণায় ধরা পড়েছে কেবলমাত্র ২ মাইক্রন কিংবা তার চেয়ে বড়ো আয়তনের মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা।
মাতৃদুগ্ধে ক্ষতিকর এবং ক্ষুদ্রতর মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না গবেষকরা। এর আগে গবেষকরা গরু, ছাগল-সহ বন্য প্রাণীর মাতৃদুগ্ধ পরীক্ষা করেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের হদিশ পেয়েছিলেন। তবে মানুষের মাতৃদুগ্ধে আদৌ মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব পড়ে কিনা, তা জানা ছিল না এতদিন।
সংশ্লিষ্ট গবেষণা জানাচ্ছে, পলিথিন, পিভিসি, পলিপ্রোপিলিনের সমন্বয়ে তৈরি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে মানুষের দুধে। তাছাড়াও রয়েছে থ্যালেটের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। যে-কোনো রাসায়নিক দূষণের ক্ষেত্রেই প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে বেশি প্রভাব পড়ে শিশুদের ওপর। কাজেই দূষণের কারণে মাতৃদুগ্ধও যেন বিষ হয়ে উঠছে শিশুদের কাছে।
প্রশ্ন থেকে যায়, কীভাবে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক পৌঁছাচ্ছে মাতৃদুগ্ধে? না, সে-ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। মাইক্রোপ্লাস্টিকের চরিত্রের ওপর ভিত্তি করে গবেষকদের অনুমান, প্যাকেটজাত খাবার ও পানীয় থেকেই মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করেছে দুগ্ধগ্রন্থীতে।
তাছাড়াও ভঙ্গুর প্লাস্টিকের তৈরি সামগ্রীর মাধ্যমেও মাইক্রোপ্লাস্টিক দেহে প্রবেশ করার সম্ভাবনাও রয়েছে। ফলে, গর্ভবতী মহিলাদের প্লাস্টিকের সামগ্রী, টুথব্রাশ, সিন্থেটিক কাপড়, প্রসাধনী ও প্যাকেটজাত খাবার এড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকরা।
প্রায় ৮০% মানুষের রক্তে প্লাস্টিক
খাবার, পানি ও নিঃশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক ঢুকছে। বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এক পরীক্ষায় প্রায় ৮০% মানুষের রক্তে এই ক্ষুদ্র কণা খুঁজে পেয়েছেন তারা।
গত ২৪ মার্চ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। নতুন এই গবেষণা এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণার ফলাফলের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা মানুষের শরীরে চলাচলে সক্ষম এবং সেগুলো বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে জায়গাও করে নিতে পারে। তবে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে এখনও জানতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
যদিও ইতোমধ্যে বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে দেখেছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবকোষের ক্ষতি করে। তারা বলছেন, বায়ুতে থাকা দূষিত কণাগুলো মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে এবং ফলে বছরে কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে ফেলা হচ্ছে। মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া থেকে গভীরতম মহাসাগর পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক এখন পুরো পৃথিবীকেই দূষিত করছে। এরইমধ্যে খাবার ও পানীয়ের পাশাপাশি নিঃশ্বাসের সঙ্গে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা গ্রহণ করছে মানুষ। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মলে এই কণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১২০০
আপনার মতামত জানানঃ