ভারতে একদিকে ২০ শতাংশ মানুষ দুহাত ভরে খরচ করছেন। এতে চাহিদা বাড়ছে। আর অন্যদিকে ৮০ শতাংশ মানুষ করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে এখনো উঠে দাঁড়াতে পারেনি। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় তেমনটিই উঠে এসেছে।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভারত লকডাউন শুরুর পর ২০২০ সালে তিন মাসে জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদন সঙ্কুচিত হয় প্রায় ২৪ শতাংশ; যা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। মহামারির সেই ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ভারত।
জাতিসংঘ, বিশ্ব ব্যাংক আগে থেকেই বলছিল করোনাকালে ধনীরা আরও ধনী হয়েছেন। আর গরিবের দৈন্যদশা বেড়েছে। সমাজের বড় অংশ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে গেছে। সেই একই ছবি উঠে এল আরও এক সমীক্ষায়।
ইউবিএস সিকিউরিটিজ ইন্ডিয়া তাদের এক রিপোর্টে জানিয়েছে, ভারতে জনসংখ্যার মাত্র ২০% কেনাকাটা করছেন। সে জন্য খরচ করছেন দু’হাত ভরে। তাদের জন্যই চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু বাকি ৮০% মানুষ এখনও মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেননি। ঘুরে দাঁড়ানোয় চেষ্টায় এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
ইউবিএস-এর ওই রিপোর্টে তাদের প্রধান অর্থনীতিবিদ দাবি করেছেন, করোনা দেশের ধনী ভোক্তাদের আয়ের ওপরে কোনো প্রভাবই ফেলেনি, সেটা পরিষ্কার। কারণ সব চেয়ে বিত্তবান ২০ শতাংশ মানুষ বেশিরভাগ কেনাকাটা করছেন। এর মধ্যে ৬৬% শহরের এবং ৫৯% গ্রামাঞ্চলের।
আগস্টে ইউবিএস একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল আয় বেশি এমন মানুষদের ওপর। অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের বেশি সোনা অথবা গহনা কিনেছেন। ৫৫% সম্পত্তিতে লগ্নি করার এবং আগামী দু’বছরের মধ্যে গাড়ি বা মোটরসাইকেল কেনার পরিকল্পনা করছেন। ৫০% শুধু সম্পত্তিই কিনতে চান। অর্থাৎ আগামী দিনেও সমাজের এই অংশের হাত ধরেই বাড়বে চাহিদা।
অংশগ্রহণকারী ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের ধারণা, আগামী বছর তাদের আয় বাড়বে।
করোনা দেশের ধনী ভোক্তাদের আয়ের ওপরে কোনো প্রভাবই ফেলেনি, সেটা পরিষ্কার। কারণ সব চেয়ে বিত্তবান ২০ শতাংশ মানুষ বেশিরভাগ কেনাকাটা করছেন।
সমীক্ষার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, করোনা অসংগঠিত অর্থনীতির ভাগ কেড়ে নিয়ে সংগঠিত অংশের বাজার বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলেই বিত্তবান মানুষ খাবারদাবার, মুদি, স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিনোদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের পণ্যে খরচ বাড়িয়েছেন
এদিকে কোভিডের ধাক্কায় অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করতে ভারতের আরও ১২ বছর সময় লাগবে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার তথ্যানুসারে, মহামারির ধাক্কায় অর্থনীতির ক্ষত ২০৩৪-৩৫ সাল নাগাদ পূরণ হতে পারে।
কোভিড ও বিধিনিষেধের ফলে ভারতের অর্থনীতির গতি কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। মহামারির প্রথম ধাক্কায় দেশের অর্থনীতি বা জিডিপির ৬ দশমিক ৬ শতাংশ সংকোচন হয়েছিল। রিজার্ভ ব্যাংকের বার্ষিক ‘কারেন্সি অ্যান্ড ফিন্যান্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক কর্মকাণ্ডে গতি এলেও, তা কেবল কোভিডের আগের পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে অর্থনীতি সমানভাবে ঘুরে দাঁড়ায়নি।
তবে ভারতের কৃষিতে মহামারির তেমন একটা প্রভাব পড়েনি। কারখানার উৎপাদন ও নির্মাণ খাত ঘুরে দাঁড়ানোর পথে। হোটেল, পরিবহন, যোগাযোগ ও ব্যবসায়িক লেনদেনের মতো খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা গেলেও এখনো সমস্যা আছে।
সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির কাঠামোগত সমস্যা এবং কোভিডের ক্ষত বড় চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতীয় অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বাধা হয়ে উঠেছে। কারণ, এতে জিনিসের দাম বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে বৃদ্ধির করুণ ছবি ও বিনিয়োগের অভাবের মতো সমস্যা তৈরি হয়েছে। ভারতের মতো আমদানি করা তেলনির্ভর দেশে সমস্যা আরও বড় হয়ে উঠেছে। কারণ, এমনিতেই কোভিডের পরে মানুষের জন্য সুরাহার বন্দোবস্ত করতে গিয়ে সরকারের রাজস্বে টান পড়েছে।
রিজার্ভ ব্যাংকের মতে, গৃহস্থের আয়ে টান পড়েছে। ফলে সংসার খরচের পর হাতে কম অর্থ থাকছে। শ্রমিকেরা শহর থেকে গ্রামে ফিরেছেন। এ কারণে বাজারে কেনাকাটা কমেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৫৩
আপনার মতামত জানানঃ