জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সবচেয়ে সামনের সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ এক্ষেত্রে সোচ্চার একটি দেশ। কিন্তু উন্নত বিশ্বের আন্তরিকতার অভাবে জলবায়ুর ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ খুব বেশি কিছু করে উঠতে পারছে না। এর মধ্যেও ক্লাইমেট প্রটোকল তৈরি করে উদাহরণ সৃষ্টি করল সব সময় বন্যা, খরা, ভাঙন ও সাইক্লোন মোকাবেলায় ব্যস্ত থাকা বিপর্যস্ত বাংলাদেশ।
চলতি বছরই কোভিড মহামারির মধ্যে বাংলাদেশে অন্তত পাঁচবার বন্যা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এসবে এখন আর ঘাবড়ায় না। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ এখন আর আগের মতো খারাপ অবস্থায় নেই। দুর্যোগ মোকাবিলার অংশ হিসেবেই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর নীতি ও কর্মকৌশল গ্রহণ করল বাংলাদেশ।
‘পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগবিষয়ক পরিসংখ্যানে জেন্ডার ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত প্রস্তুতকারী এবং ব্যবহারকারীদের জন্য পদ্ধতিগত নির্দেশনা ও নিয়ম-কানুন’ তৈরি করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বে জলবায়ুসংক্রান্ত এ ধরনের প্রটোকল ও গাইডলাইন বাংলাদেশই সবার আগে তৈরি করল।
২১ ডিসেম্বর ২০২০, গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মিলনায়তনে ‘পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগবিষয়ক পরিসংখ্যানে জেন্ডার ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত প্রস্তুতকারী এবং ব্যবহারকারীদের জন্য পদ্ধতিগত নির্দেশনা ও নিয়ম-কানুন’ বিষয়ক প্রকাশনার সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সেন্টার অ্যাডভান্সড স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান।
ড. আতিক রহমান বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় কত দ্রুত করতে পারে, তার সক্ষমতা বারবার দেখিয়েছে। এ ধরনের গাইডলাইন তৈরি তারই আরো একটি সক্ষমতা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ একটি মহাদুর্যোগের মধ্যে থাকলেও বাংলাদেশ দুটি মহাদুর্যোগের মধ্যে রয়েছে। কভিড-১৯ ও জলবায়ু পরিবর্তন। বাংলাদেশ সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করছে। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। নতুন পরিকল্পনার জন্য দরকার ডাটা। দুর্যোগ মোকাবেলার বড় উদাহরণ বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ইনজাস্টিসের শিকার। ধনী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন করছে অথচ বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যারা পরিবেশের ক্ষতি করছে তারা বিপদে পড়ছে না।
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএন উইম্যান বাংলাদেশের প্রতিনিধি ও প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট দিলরুবা হায়দার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ও এর ফলে নারীরা কী ধরনের প্রভাবের মধ্যে রয়েছে সে বিষয়ে প্রথম গাইডলাইন তৈরি করল বাংলাদেশ। ইউনাইটেড নেশন্স অফিস ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন (ইউএনডিআরআর) থেকে জানানো হয়েছে, সারা বিশ্বে এ ধরনের উদ্যোগ এই প্রথম। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে নারী ও শিশু সব সময় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার পরও বাংলাদেশসহ বিশ্বে সেভাবে জেন্ডার ইনডিকেটর নেই। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণে নারী-পুরুষের ভিন্নতা রয়েছে। আশা করছি, বিবিএসের নতুন উদ্যোগে এটা পরিষ্কার হবে।
মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বে মডেল। আমি যখন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ছিলাম, তখন ১০ মাসে দুটি দুর্যোগ মোকাবেলা করেছি। দুর্যোগের সময় নারী ও শিশু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা নিরূপণ করা দরকার। সেজন্যই আমরা উদ্যোগটি হাতে নিয়েছি।
এসডাব্লিউ/বিবি/আরা/১৩১০
আপনার মতামত জানানঃ