চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামের মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে তার বিজয় কামনা করে গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দলীয় নেতাদের সঙ্গে মোনাজাতে অংশ নেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এক সম্প্রীতি সভায় ডিসি বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে যদি থাকে, তাহলে আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ বলি, বিএনপি বলি, জামায়াত বলি- সবাই নিরাপদ থাকবে। আমি মনে করি, বিএনপি-জামায়াতেরও এখন দোয়া করা উচিত শেখ হাসিনা যেন আবার ক্ষমতায় আসেন।’
আসন্ন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে ওই সভার আয়োজন করা হয়। ওই দিন ছিল জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। সভা চলাকালে আওয়ামী লীগ মনোনীত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম সেখানে ঢুকে পড়েন। নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা ডিসি মমিনুরের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এই নির্বাচনে পেয়ারুলসহ তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর সবাই হাত তুলে মোনাজাতে অংশ নেন। এসময় ডিসিও নেতাদের সঙ্গে হাত তুলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পেয়ারুলের জয় কামনা করেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
আমি মনে করি, বিএনপি-জামায়াতেরও এখন দোয়া করা উচিত শেখ হাসিনা যেন আবার ক্ষমতায় আসেন।
এদিকে ডিসির বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রামের রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে এ নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান এ নোটিশ প্রেরণ করেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামের মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে তার বিজয় কামনা করে দলীয় নেতাদের সঙ্গে মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ সময় তিনি প্রার্থীকে পাশে বসিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বক্তৃতাও করেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার যেন আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়, সে জন্য বিএনপি-জামায়াতেরও দোয়া কামনা করেছেন।
এ কাজের মাধ্যমে রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১৬ এর ৭৯, ৮০ ও ৮১ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছেন। এ বিধি লঙ্ঘনের পরও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।
নোটিশ প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নাহলে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও নোটিশে উল্লেখ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে আমলাতন্ত্রকে তার নিজের পক্ষে নিতে সক্ষম হয়েছে। জনসমর্থনহীন অবস্থায়ও রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে শক্তির ভিত্তি এবং একমাত্র অবলম্বন হিসাবে নিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কখনও নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি এবং হওয়া সম্ভবও না। ঐ যে তারা ক্ষমতায় উঠলে আর নামতে চায় না। সেজন্য তারা অনৈতিক এবং অবৈধ বিভিন্ন পথ বেছে নেয়। সেজন্যই সম্প্রতি দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলায় পুলিশ সুপার বদলির হিড়িক লাগিয়েছে।
সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ব্যাপক ক্ষমতা দেয়া আছে সংশ্লিষ্ট আইনে। নির্বাচনের সময় প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর ওপর নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ থাকার বিধান রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোরও সর্বাত্মক সহোযোগিতা করার কথা বলা আছে। কিন্তু দলীয় সরকারের সময়ে কমিশনের ক্ষমতা কাগজে কলমেই রয়ে যায়।
তারা বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উপর্যুপরি রুগ্ন চিত্রের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশসহ জাতিসংঘ এবং বিশ্বের স্বনামধন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো হতাশ। আগামী সংসদ নির্বাচন যেন গণতান্ত্রিক পরিবেশে সমসুযোগ সম্বলিত মাঠে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়, সে বিষয়ে ইতোমধ্যে বর্ণিত দেশ ও সংস্থাগুলো তাদের অবস্থান সরকারের কাছে ব্যক্ত করেছে। পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোর মধ্যে বিশেষত দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন অনিয়ম, কারচুপি ও কালিমায় ভরপুর থাকায় এবং উভয় নির্বাচন সংবিধান ও আইনের ব্যত্যয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায়, আগামী সংসদ নির্বাচন উল্লিখিত রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোর ব্যক্ত অবস্থানের কারণে সংসদ বহাল থাকাবস্থায় দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠান অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে কঠিক বাধার সম্মুখীন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫৭
আপনার মতামত জানানঃ