ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি ২০১৮ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। প্ল্যাটফর্মটি দ্রুতই বিভিন্ন লোভনীয় অফার ও বিশাল ডিসকাউন্ট প্রদানের মাধ্যমে বাজারের এক বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগের পর বর্তমানে এর কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
আলেশা মার্ট, ই-অরেঞ্জ, কিউকম, দালাল প্লাস, ধামাকা শপিং এবং সিরাজগঞ্জ শপসহ আরও বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে একইরকম অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত সাইটগুলোর বেশিরভাগই এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এসবের পরেও দেশের ই-কমার্সের বাজার সমৃদ্ধির দিকে।
সরাসরি গ্রাহকের কাছে পণ্য ও সেবা পৌঁছে দেওয়া (বিটুসি) ই-কমার্স খাত বাৎসরিক ১৭ দশমিক ৬১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে ৬৫ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকার বাজারে পরিণত হবে বলে এক সাম্প্রতিক বাজার গবেষণায় উঠে এসেছে।।
২০২১ সালে ই-কমার্স বাজারের আকার ছিল প্রায় ৫৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। ডাবলিন-ভিত্তিক বাণিজ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটস ডট কমের মতে, ২০২৬ সালের মধ্যে তা প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার বাজারে পরিণত হবে।
‘বাংলাদেশ বিটুসি ইকমার্স মার্কেট রিপোর্ট ২০২২’-শীর্ষক প্রতিবেদনটিকে নিবন্ধিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনিবন্ধিত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং সোশ্যাল মিডিয়া-ভিত্তিক ট্রেডিং পেজগুলো অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
ই-কমার্সের পণ্য ও পরিষেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে খুচরা কেনাকাটা, ভ্রমণ ও আতিথেয়তা, অনলাইন ফুড সার্ভিস, বিনোদন ও গণমাধ্যম, স্বাস্থ্যসেবা, বিভিন্ন গ্যাজেট ও কারিগরি পরিষেবা ইত্যাদি।
সরাসরি গ্রাহকের কাছে পণ্য ও সেবা পৌঁছে দেওয়া (বিটুসি) ই-কমার্স খাত বাৎসরিক ১৭ দশমিক ৬১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে ৬৫ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকার বাজারে পরিণত হবে।
গত বছর ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে ২,৫০০টিরও বেশি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মধ্যে এক শতাংশ বড় ব্যবসা, ৪ শতাংশ মাঝারি এবং ৯৫ শতাংশ বিভিন্ন ছোট ব্যবসায়ী উদ্যোগ। প্রায় ১,৬০০ ই-কমার্স উদ্যোক্তা ই-ক্যাবের সদস্য ছিলেন।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি)-র একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজার ফেসবুক পেজ রয়েছে যেগুলো খুচরা ও পাইকারি পণ্য বিক্রি বা সরবরাহ করে।
তার অনুমান ফেসবুকভিত্তিক এই উদ্যোগগুলোর বার্ষিক কর এবং মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের প্রায় পুরোটা সময় অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করেন। সেই সুবাদে তাদের একটা বড় অংশের মধ্যেই অনলাইনে কেনাকাটা করা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। বদৌলতে চালডাল, ফুডপান্ডা, দারাজ, আজকের ডিল, বিক্রয়ডটকমসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
সময়ের সাথে সাথে এখন সবকিছুই জুড়ে গেছে প্রযুক্তির সাথে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, অফিসের কার্যক্রমসহ সবই চলছে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে। ব্যতিক্রম নয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাও। ব্যস্ততম নগরীর জীবনকে প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে কাজ করছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে করোনাকালে লকডাউনের সময়ে ঘরবন্দি মানুষের দ্বারে দ্বারে খাবার, ওষুধ, খাদ্যসামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিয়ে আস্থা অর্জন করেছে এই খাত। বিগত অর্ধযুগ ধরে ই-কমার্স যতটা প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল, করোনায় ছাড়িয়ে গেছে সেটাকেও। এছাড়া মানুষকে অভ্যস্ত করে তুলেছে অনলাইন কেনাকাটায়। এর সুফল পাচ্ছে ই-কমার্স খাত। গ্রাহক বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন নতুন প্রতিষ্ঠানও যুক্ত হচ্ছে অনলাইন ব্যবসায়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা করলে পণ্যের দাম মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল তথা মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার (এমএফএস) মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়। ফলে বাংলাদেশে ই-কমার্সের বাজার সম্ভাবনা বাড়ছে। বিশেষ করে কোভিডের সময়ে মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারায় এই খাতের যথেষ্ট বিকাশ ঘটেছে।
বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসাটি নতুন। সম্ভবত ২০১০ সালের দিকে বাংলাদেশে চালু হয় ই-কমার্স এর ধারণা। এরপর থেকে বাংলাদেশে ই-কমার্স দিনের পর দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের তুলনায় ই-কমার্সে বেশ পিছিয়ে। যেখানে উন্নত দেশগুলোর মানুষ অনলাইন শপিং-এর উপরেই বেশী নির্ভরশীল আর সেখানে আমরা সবেমাত্র অনলাইনে শপিং করা শুরু করেছি। তবে আশার কথা হল বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে বেশ কিছু ই-কমার্স সাইট এবং তরুণ উদ্যোক্তারা। আশা করা যায় আর কয়েক বছরের মাঝেই এসব তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে ই-কমার্স খাতে এক নতুন কোঠায়। পাশাপাশি এই খাতকে আরও উন্নত করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন ই-কমার্স এক অপার সম্ভাবনাময় খাত। যা আমাদের কেনাকাটাকে করবে আরও গতিশীল, সাশ্রয়ী এবং সহজ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই মার্কেট প্লেসে তরুণ উদ্যোগতাই বেশি। তরুণ উদ্যোক্তা বেশি হওয়ার কারণ যদি ধরি তাহলে প্রথমেই বলতে হবে এই ব্যবসায় ইনভেস্টমেন্ট কম এবং কম সময়ে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব।।অন্যদিকে একটা ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে খুব বেশি অর্থও লাগে না। কারণ বর্তমানে অনেক কম খরচে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব। বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা অনেক কম খরচে ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকে। তাই খরচ ও সময় কম ব্যয় হওয়ায় এই ব্যবসার জন্য অনেকই এখন প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
তারা বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ই-কমার্সের মাধ্যমে শপিং করতে পারলেও এখনও মার্কেটে গিয়ে শপিং করার প্রবণতা থাকার কারণে ই-কমার্স ব্যবসায় প্রভাবিত হচ্ছে। তাই এজন্য সকলকে ই-কমার্সের সুবিধা জানাতে হবে। সেই প্রচেষ্টায় অবদান রাখতেও এগিয়ে এসেছে আমারসাজ ডটকম। বাংলাদেশে অনলাইন শপিং সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে তারা শুরু করেছেন ব্লগিং প্রতিযোগিতা। এছাড়াও অনলাইনে কেনাকাটা করতে সকলকে উৎসাহী করতে দেশের সবচেয়ে সেরা ই-কমার্স সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে আমারসাজ ডটকম । তাই ই-কমার্স খাত সচল করতে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের সকলকে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৯
আপনার মতামত জানানঃ