শুধু দিল্লি সরকার ভাঙতে চায়নি বিজেপি, পাঞ্জাবেও ‘অপারেশন লোটাসে’র পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি (আপ) বিধায়কদের দলবদলের জন্য কোটি কোটি রুপির অফার দিয়েছে বিজেপি। এমন অভিযোগ ওই রাজ্যের আম আদমি পার্টির বিধায়ক ও অর্থমন্ত্রী হরপাল চিমার।
তবে বরাবরের মতোই এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। তাদের পাল্টা দাবি, পাঞ্জাবে আপ নেতৃত্বে কোন্দল চলছে।
পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী হরপাল চিমার পর আজ বুধবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও এমন দাবি করেছেন।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, চিমার দাবি, বিজেপির পক্ষ থেকে তাদের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, দিল্লি গিয়ে বড় নেতাদের সঙ্গে দেখা করার এবং দলবদলের ‘মূল্য’ হিসেবে মাথাপিছু ২৫ কোটি রুপি করে দেওয়ার লোভও দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে এ অভিযোগ তুললেন পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দলবদল করার জন্য বিধায়কদের প্রত্যেককে ২৫ কোটি রুপি করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিজেপির ‘অপারেশন লোটাস’ কর্ণাটকে সফল হতে পারে। কিন্তু দিল্লির বিধায়কেরা বিজেপির পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছেন।
চিমা বলেন, আপের বিধায়কদের এমন প্রস্তাবের পাশাপাশি এও বলা হয়েছে, পাঞ্জাবে রাজনৈতিক ক্ষমতার বদল হলেই দলবদলকারী ব্যক্তিদের উঁচু পদে নেওয়া হবে। একবার নয়, এ ধরনের প্রস্তাব একাধিকবার তিনিও পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন হরপাল চিমা।
কতজন বিধায়ককে এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা–ও জানিয়েছেন পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী চিমা। তিনি বলেন, ‘৭ থেকে ১০ জন বিধায়ককে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সময়মতো সব প্রমাণ দেব।’
আপ প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল বলেন, ‘পঞ্জাবে আমাদের ১০ জন বিধায়ককে বিজেপি প্রস্তাব দিয়েছে। ওরা বিধায়ক কিনে সরকার ফেলার চেষ্টা করছে।’’ এর পরই গোয়ার নাম না করে তার সংযোজন, ‘‘অপারেশন লোটাসের নামে যেভাবে বিজেপি দেশে বিধায়ক কিনছে, তা একেবারেই ভুল। অবশ্য এতে কংগ্রেসেরও দোষ আছে। বিজেপি তো পাঞ্জাব বা দিল্লিতে আমাদের এ ভাবে ভাঙতে পারেনি।’’
দিল্লিতেও আপ বিধায়কদের লোভ দেখিয়ে বিজেপি সেখানেও ‘অপারেশন লোটাস’ সফল করতে চেয়েছিল কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। তাই এ বার বিজেপি নজর ঘুরিয়েছে পাঞ্জাবের দিকে।
গত মাসেই অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, বিজেপি দিল্লিতেও ‘অপারেশন লোটাস’ অভিযান চালাচ্ছে। মহারাষ্ট্রের মতো ঘটনা ঘটাতে ২০ কোটি রুপির প্রলোভন দেখানো হচ্ছে আপের বিধায়কদের। কেজরিওয়াল সে সময় বলেছিলেন, দিল্লি সরকারকে ফেলতে ওরা (বিজেপি) ৮০০ কোটি রুপি রেখে দিয়েছে। প্রতি বিধায়কের পেছনে ২০ কোটি ধরে ৪০ জন বিধায়ককে দলে ভেড়াতে চায় বিজেপি। দেশ জানতে চায়, ৮০০ কোটি রুপি কার, এটা কোথায় রাখা হয়েছে? সেই বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার অভিযোগ, পাঞ্জাবের আপ বিধায়কের অর্থ দেওয়া হচ্ছে।
আপের অভিযোগ, দিল্লিতেও আপ বিধায়কদের লোভ দেখিয়ে বিজেপি সেখানেও ‘অপারেশন লোটাস’ সফল করতে চেয়েছিল কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। তাই এ বার বিজেপি নজর ঘুরিয়েছে পাঞ্জাবের দিকে।
প্রসঙ্গত, অন্য দলের বিধায়কদের দলে টেনে সরকার দখল করার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রেও ‘টাকার খেলা’ দেখিয়েই শিবসেনা বিধায়কদের ভাঙিয়ে নিয়ে সরকার গড়েছে বিজেপি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। একেই বিরোধীরা ‘অপারেশন লোটাস’ নামে চিহ্নিত করছেন।
কেজরিওয়ালের দাবি, একই চেষ্টা বিজেপি দিল্লি ও পাঞ্জাবেও করেছিল এবং ব্যর্থ হয়েছে।
এই প্রসঙ্গেই আপ নেতাদের মুখে উঠে এসেছে গোয়া প্রসঙ্গ। বুধবার, সেখানেই ১১ জনের মধ্যে ৮ জন কংগ্রেস বিধায়ক হাত ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আপ সাংসদ রাঘব চড্ডা টুইটে লিখেছেন, ‘অপারেশন লোটাস’ দিল্লি, পাঞ্জাবে ব্যর্থ হলেও গোয়ায় কেন সফল? কারণ, যখন আপনি কংগ্রেসকে ভোট দেন, তখন আসলে আপনি ভোট দেন এক জন ভবিষ্যতের বিজেপিকে। কংগ্রেসের দিন শেষ!
পাঞ্জাবে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা মাত্র ২। এই পরিস্থিতিতে সত্যিই কি তারা ঘোড়া কেনাবেচা করে সরকার গড়তে চাইছে? গেরুয়া শিবির অবশ্য এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছে। পাঞ্জাবের বিজেপি সম্পাদক সুভাষ শর্মা বলছেন, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে হরপাল চিমার এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ থেকে স্পষ্ট, পাঞ্জাবের আপ নেতৃত্বে ফাটল ধরেছে। কেজরিওয়ালের হস্তক্ষেপে দলটি ছিন্নভিন্ন হওয়ার পথে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০২
আপনার মতামত জানানঃ