ভারতে শতাব্দী প্রাচীন মসজিদে পুজোর জন্য আবেদন গ্রহণ করে জ্ঞানবাপী মসজিদের তরফে করা আবেদন খারিজ করল বারাণসীর আদালত।
জ্ঞানবাপী মসজিদ পক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বারাণসীর জেলা বিচারক বিশ্বেস। তিনি রায় দিয়েছেন, পাঁচ হিন্দু নারী যে আবেদন করেছিলেন, তা গ্রহণ করা হলো। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে এই মামলার শুনানি চলবে।
যা বলছে উভয়পক্ষ
প্রসঙ্গত, পাঁচ হিন্দু নারী মসজিদে প্রতিদিন শৃঙ্গার গৌরীর পুজো করতে দেয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন।
বারাণসীর জেলা বিচারকের এই রায়ের পর পাঁচ হিন্দু নারীর পক্ষের আইনজীবী জানান, আদালত তাদের যুক্তি গ্রহণ করেছেন। মসজিদ কমিটির পক্ষে যে যুক্তি দেয়া হয়েছিল, তা খারিজ করা হয়েছে। মসজিদ কমিটির তরফ থেকে বলা হয়েছিল, ১৯৯২ সালের আইন অনুযায়ী, ধর্মস্থানগুলিতে স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে। কিন্তু বিচারপতি এই যুক্তি মানতে চাননি।
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুনানি চালু হলেও, তা প্রতিদিন চলবে কি না. তা বিচারক জানাননি। কোনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই শুনানি শেষ করা হবে কি না, সে বিষয়েও তিনি কিছু বলেননি। তার রায়ের মূল কথা হলো, জ্ঞানবাপী মামলায় শুনানি চলবে। যে সব বিতর্কিত প্রশ্ন উঠেছে সে সব নিয়েই বিচার হবে।
তার মধ্যে প্রতিদিন শৃঙ্গার গৌরীর পুজো করতে দেয়া, আরেকটি সমীক্ষা হবে কি না, যে শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে বলে হিন্দু পক্ষের দাবি এবং মসজিদ কর্তৃপক্ষ যাকে ফোয়ারা বলছেন, সে ব্যাপারেও শুনানি হবে ও আদালত সিদ্ধান্ত নেবে।
তবে জেলা আদালত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে তা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে যাবে বলেই মনে করছেন ভিশেষজ্ঞরা। এমনকী এদিন জেলা বিচারক যে রায় দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধেও সর্বোচ্চ আদালতে যেতে পারেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আদালত মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ করেনি। যেমন নামাজ পড়া হচ্ছিল, তেমনই হবে। এই বিরোধের ফয়সালা আদালতেই হবে।
ঘটনার সূত্রপাত
২০২১ সালের আগস্ট মাসে পাঁচ হিন্দু নারী জ্ঞানবাপি মসজিদের বাইরের এক দেয়ালে খোদাই করা হিন্দু দেব–দেবীর মূর্তি (মা শ্রীঙ্গার গৌরী) বছরভর পুজো করার অনুমতি চেয়ে বারানসি দায়রা আদালতে এক মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় দায়রা আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর একটি কমিটি গঠন করে বলেন, মসজিদ চত্বর জরিপ হবে ও তার ভিডিওগ্রাফ করা হবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী জরিপ ও ভিডিওগ্রাফ হয়। আদালতে তা জমা দেওয়ার আগেই সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। মসজিদ কর্তৃপক্ষ এরপর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি জেলা আদালতে স্থানান্তর করেন।
জরিপ অনুযায়ী হিন্দুরা মসজিদ চত্বরের অজুখানায় ‘শিবলিঙ্গ’–এর উপস্থিতি দাবি করেছিলেন। মসজিদ কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল সেটি একটি ফোয়ারা। তখন দাবি ওঠে ওই বিতর্কিত স্থাপত্যটি কোন সময়ে নির্মাণ হয়েছিল, তা জানতে তার ‘কার্বন ডেটিং’ পরীক্ষা করা হোক। সুপ্রিম কোর্ট সেই সব দাবি নাকচ করে দেন। এখন জেলা আদালত মামলা শুনতে রাজি হওয়ায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, বিতর্কের অবসান দ্রুত হবে না।
পুজো অর্চনার দাবি জানিয়ে আবেদনে বলা হয়, মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় কাশী বিশ্বনাথ মন্দির আক্রান্ত হয়। মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি হয়। মন্দির-মসজিদের একটি দেয়াল এক। সেই দেয়ালে মা শ্রীঙ্গার গৌরীর মূর্তি রয়েছে।
অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্ক শুরু হওয়ার সময় থেকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ও বিজেপি বলে আসছে, অযোধ্যার মতো কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও মথুরায় শ্রীকৃষ্ণর জন্মস্থান তারা উদ্ধার করবে। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির লাগোয়া জ্ঞানবাপি মসজিদের মতো মথুরায় শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান লাগোয়া রয়েছে শাহি ঈদগা মসজিদ। দুই হিন্দু তীর্থস্থানকে মুক্ত করার অঙ্গীকার বিজেপিরও দীর্ঘদিনের।
বস্তুত, কিছুদিন আগেই অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ সংক্রান্ত মামলার রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে এখন রামমন্দির নির্মাণের কাজ চলছে। হিন্দুত্ববাদীদের বক্তব্য, এবার তাদের লক্ষ্য কাশী এবং মথুরার মসজিদ। তাদের স্লোগান ইয়ে তো স্রিফ ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে জ্ঞানবাপীর মামলা বলে মনে করা হচ্ছে। মথুরার মসজিদ নিয়েও আদালতে মামলা চলছে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এদিনের রায় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিক থেকে। দেশের রাজনৈতিক হাওয়া কোন দিকে ঘুরবে, তা-ও অনেকটা নির্ভর করবে এদিনের রায়ের উপর।
এসডব্লিউ/এসএস/১০৫৮
আপনার মতামত জানানঃ