মহাসড়কের পাশে পড়ে ছিল তরুণের রক্তাক্ত লাশ। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়া পরিবারের কাছে সেই লাশ হস্তান্তর করে দ্রুত দাফনের নির্দেশ দেয় পুলিশ। কিন্তু দাফনের আগে গোসল করাতে গিয়ে নিহত তরুণের মাথার দুই দিকে ফুটো দেখতে পান স্বজনেরা। তাঁদের অভিযোগ, গুলি করে হত্যা করা হয়েছে ওই তরুণকে।
গতকাল শনিবার সকালে হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নের মুনিয়া পুকুরপাড় এলাকায় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের পাশ থেকে মারুফ হোসেন ওরফে সায়মন (২৩) নামের ওই তরুণের লাশ উদ্ধার করে নাজিরহাট হাইওয়ে থানা-পুলিশ।
উল্লেখ্য, মারুফ হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহিমুর দিঘির পাড় এলাকার আবদুল মালেকের ছেলে।
পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মারুফ হোসেন ওমানপ্রবাসী ছিলেন। করোনাকালে দেশে এসে আর ফেরত যাননি। হাটহাজারীর সরকারহাট বাজারে একটি সাউন্ড সিস্টেমের দোকানে কাজ করতেন।
গত শুক্রবার রাতে ফটিকছড়ি উপজেলার সমিতিরহাট ইউনিয়নের একটি বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে সাউন্ড সিস্টেম অপারেটর হিসেবে কাজে যান তিনি। মধ্যরাতে ফোনে বাবাকে তিনি জানান তার বাড়ি ফিরতে দেরি হবে। গতকাল সকালে বাড়ির কাছাকাছি ওই স্থানে মাথার দুই পাশে ফুটো হওয়া লাশ পাওয়া যায় তাঁর।
মারুফের বাবা আবদুল মালেক বলেন, গতকাল ভোর সাড়ে চারটার দিকে নাজিরহাট হাইওয়ে থানা-পুলিশ মারুফের মুঠোফোন থেকে ফোন করে তাকে ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। ঘটনাস্থলে গেলে একটি কাগজে টিপসই নেওয়ার পর মারুফের মরদেহ তাকে বুঝিয়ে দিয়ে দ্রুত দাফন করতে বলেন।
তবে দাফন করতে গিয়ে দেখা যায়, মাথার দুদিকে ফুটো হয়ে আছে। গুলি করে তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল মনসুর বলেন, মারুফকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তার মাথার দুই পাশে গুলির চিহ্ন রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, মাথার দুই দিকে ফুটো দেখতে পেয়ে হাটহাজারী থানায় খবর দেন পরিবারের সদস্যরা। পরে বেলা একটার দিকে পুলিশ এসে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হয়।
এ ব্যাপারে নাজিরহাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল মাহমুদ বলেন, ‘ভোরে অনেকটা অন্ধকার থাকার কারণে নিহত তরুণের মাথার চিহ্নটি দেখা যায়নি বলে আমরা ধারণা করেছিলাম, সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হতে পারেন। এ জন্য পরিবারের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়েছিল।’
হাটহাজারী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ওই তরুণের লাশের মাথার দুই পাশে গুলিবিদ্ধের মতো চিহ্ন শনাক্ত করা গেছে। তবে কোনো গুলি ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
এখনি বলা সম্ভব নয় যে, এটা পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু নাকি অন্যকিছু। তবে সম্প্রতি সারাদেশে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। বিচার চেয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগী পরিবার। অনেক ক্ষেত্রে বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করার পর পরিবারকে দেয়া হচ্ছে হুমকি। এ কারণে পুলিশের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বিচার প্রত্যাশা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পুলিশী নির্যাতনে আহত হলেও ভুক্তভোগীরা মামলা করেন না।
পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের গত সাত মাসে অন্তত ১১টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে পুলিশ হেফাজতে। ২০২১ সালে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ২৯ জনের। গত ৫ বছরে অন্তত ১৫৮ জনের পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় একজনের শাস্তি হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ১৪ মামলা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় শাস্তি থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর ক্রসফায়ার কমে গেলেও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা চলছে বলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেয়া তথ্যে দাবি করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪০০
আপনার মতামত জানানঃ