অর্থনীতি সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে অস্বচ্ছতা বাংলাদেশে একটি প্রথাসিদ্ধ আচরণে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট এড়িয়ে আবারও উন্নতির পথে ফিরে যাওয়ার পথে বাংলাদেশের জন্য সবথেকে বড় বাধা এই অস্বচ্ছতা।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাজেট তৈরি ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, জনসম্পৃক্তার অভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে বাজেট তদারকিতে বাংলাদেশের অবস্থান নিম্নগামী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব ইকোনোমিক অ্যান্ড বিজনেস অ্যাফেয়ার্সের ‘ফিসকাল ট্রান্সপারেন্সি ২০২২’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শুক্রবার (৯ সেপ্টম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বাংলাদেশসহ ১৪১টি দেশের অবস্থা নিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ৭২টি দেশ আর্থিক স্বচ্ছতার ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেছে। আর ৬৯টি দেশ আর্থিক স্বচ্ছতার ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেনি। তবে এ ৬৯টি দেশের মধ্যে ২৭টি দেশ আর্থিক স্বচ্ছতার ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তা পূরণের দিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজেটের তথ্য-উপাত্তগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতি অনুসারে প্রস্তুত করা হয়নি। তাই সর্বজনগৃহীত বাজেট হতে দূরে আছে।সরকারের সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারের হিসাব পর্যালোচনা করেছে, কিন্তু এর প্রতিবেদনে সারগর্ভ ফলাফল ছিল না এবং যথাসময়ের মধ্যে সর্বজনীনভাবে উন্মুক্ত করা হয়নি।
এতে আরও বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক মান পূরণ করেনি। সরকার আইন বা প্রবিধানে নির্দিষ্ট করেছে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ চুক্তি এবং লাইসেন্স প্রদানের জন্য মানদণ্ড এবং পদ্ধতিগুলি অনুশীলনে অনুসরণ করতে দেখা গেছে। প্রাকৃতিক সম্পদের মৌলিক তথ্য ধারাবাহিকভাবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি।
সরকারের সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারের হিসাব পর্যালোচনা করেছে, কিন্তু এর প্রতিবেদনে সারগর্ভ ফলাফল ছিল না এবং যথাসময়ের মধ্যে সর্বজনীনভাবে উন্মুক্ত করা হয়নি।
বাংলাদেশের আর্থিক স্বচ্ছতা উন্নয়নের জন্য সংস্থাটি কয়েকটি সুপারিশ রেখেছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতি অনুযায়ী বাজেট নথি প্রস্তুত করাসহ সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যেন স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক মান পূরণ করে এবং পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
যথাসময়ে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে বলা হয়েছে, যাতে এতে মূল অনুসন্ধান, সুপারিশ এবং বর্ণনা থাকে; এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কে মৌলিক তথ্য ধারাবাহিকভাবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই প্রতিবেদন নীতিনির্ধারকদের জন্য প্রয়োজনীয়। কারণ আমাদের যে গ্যাপ আছে তা এখানে ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে ফুটে উঠেছে সময় মতো তথ্য ওয়েবসাইটে না আপলোড করার বিষয়টি। এ সময় তারা বাজেট তৈরিতে জনসম্পৃক্ততা, বাজেট বাস্তবায়নের পরীবিক্ষণ ও বাজেট বাস্তবায়নের তথ্য-উপাত্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার আহ্বান জানান।
তারা বলেন, অডিট রিপোর্ট ঠিকমতো প্রকাশ হয় না। বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয় তার তথ্য জানা গেলেও প্রকৃত খরচ জানা যায় না। তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি হলে সরকারের নীতি গ্রহণে অসুবিধা হয় বলে মনে করেন তারা। জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্ব দেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২৩
আপনার মতামত জানানঃ