বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর সেনাবাহিনী বলা হয় মার্কিন সেনাবাহিনীকে। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত তাদের দৌড়। অথচ যৌনতা নিয়ে এই বাহিনীর নারী সদস্যরাও থাকেন স্পর্শকাতর অবস্থানে।
মার্কিন সামরিক বাহিনীতে যৌন নিপীড়নের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। ২০২১ অর্থবছরে দেশটির এই বিভাগে যৌন নিপীড়নের সংখ্যা বেড়েছে ১৩ শতাংশ।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের প্রকাশিত এক বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য সামনে আনা হয়েছে।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের সেক্সুয়াল অ্যাসাল্ট প্রিভেনশন অ্যান্ড রেসপন্স অফিস (এসএপিআর) জানিয়েছে, ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ হাজার ৮৬৬টি যৌন নিপীড়নের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে।
২০২০ সালের একই সময় পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৮১৩টি। অর্থাৎ ২০২১ সালে যৌন নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে ১৩ শতাংশ।
কিন্তু যৌন নিপীড়নের এসব ঘটনার শুধুমাত্র একটি অংশ কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগনের এই দপ্তর।
সৈন্যদের মাঝে সমীক্ষা চালিয়ে এসএপিআর আনুমানিক যে হিসাব সামনে এনেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৩৬ হাজার সক্রিয় কর্তব্যরত নারী এবং পুরুষ সেনা এই সময়ে অবাঞ্ছিত যৌন হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।
হয়রানির শিকার এসব সৈন্যদের ৮.৪ শতাংশ নারী এবং ১.৫ শতাংশ পুরুষ। পেন্টাগন বলছে, যৌন নিপীড়ন হয়েছে কিনা সেটি পরিমাপ করতে ব্যবহৃত সিস্টেম বা পরিমাপের মান পরিবর্তনের কারণে এটি ‘সত্যিকার অর্থেই বেড়েছে কিনা তা বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ধারণ করতে পারেনি’ তারা।
কিন্তু অন্যান্য তথ্যের দিকে তাকালে এটি বোঝা যাচ্ছে যে, ২০১৮ সাল থেকে মার্কিন সেনাবাহিনীর ভেতরে অস্বাস্থ্যকর সামরিক পরিবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হয়রানির শিকার এসব সৈন্যদের ৮.৪ শতাংশ নারী এবং ১.৫ শতাংশ পুরুষ।
পেন্টাগনের অফিস অব ফোর্স রেজিলিয়েন্সির নির্বাহী পরিচালক এলিজাবেথ ফস্টার বলছেন, প্রতিবেদনে উঠে আসা সংখ্যায় এটিই নারীদের জন্য সর্বাধিক যৌন নিপীড়নের আনুমানিক হার বলে বোঝা যাচ্ছে। মূলত ২০০৬ সালে এই সমস্যাটি প্রথম নিবিড়ভাবে অধ্যয়ন করার পর এবারই এতো বেশি নারী হয়রানির শিকার হয়েছেন।
অন্যদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি যৌন নিপীড়নের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্রা। পুরুষদের জন্য এ ধরনের হয়রানির সর্বোচ্চ ঘটনা ঘটেছিল ২০০৬ সালে।
পেন্টাগনের অফিস অব ফোর্স রেজিলিয়েন্সি মূলত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের কল্যাণের দিকে নজর রাখে। ফস্টার বলছেন, ‘যৌন নিপীড়নের এই সংখ্যাগুলো দুঃখজনক এবং অত্যন্ত হতাশাজনক।’
এএফপি বলছে, মার্কিন সামরিক বাহিনীর ভেতরে সবচেয়ে বেশি যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে সেনাবাহিনীতে। সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ২৬ শতাংশ। এরপর নৌবাহিনীতে ১৯ শতাংশ, বিমান বাহিনীতে দুই শতাংশ এবং মেরিন বিভাগে ঘটেছে দুই শতাংশ।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সামরিক আইনে যৌন হয়রানিকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে একটি আদেশ জারি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই আদেশের অর্থ হলো- যৌন নিপীড়ন, ঘরোয়া সহিংসতা এবং নাবালকদের ওপর যৌন নিপীড়নের বিচার এখন সামরিক আদালতে করা হবে এবং আদালতে মামলা নেওয়ার সিদ্ধান্ত সামরিক চেইন অব কমান্ডের অফিসারদের পরিবর্তে বিশেষ প্রসিকিউটরদের ওপর ন্যস্ত করা হবে।
অবশ্য মার্কিন সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অতীতে অভ্যাসগতভাবে কোনো ঘটনা উপেক্ষা করা, ধামাচাপা দেওয়া বা যৌন নিপীড়নের অভিযোগকে হালকাভাবে দেখার অভিযোগ উঠেছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনীতে বর্তমানে ২ লাখের বেশি নারী সেনা রয়েছে, যা দেশটির মোট সেনার ১৫ শতাংশ। ইরাক ও আফগান যুদ্ধে নিয়োজিত মার্কিন সেনার ১১ শতাংশ ছিল নারী। নির্ভরযোগ্য এক গবেষণা মতে, মার্কিন সেনাবাহিনীতে চাকরির সময়ে প্রতি তিনজনের একজন নারী সেনা ধর্ষণের শিকার হয়। পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী সেনা কোন না কোন যৌন নিপীড়নমূলক আচরণের শিকার হন। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পুরুষ সেনাদের ওপরও।
গবেষণা মতে, ২৭ শতাংশ পুরুষ সেনাও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন মার্কিন বাহিনীতে। এসব ঘটনার যথাযথ বিচার না হওয়া এবং অধস্তন সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অব্যাহতি পাওয়ার ফলে যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণ আরো বাড়ছে।
সামরিক নীতি অনুসারে মেয়েদের সম্মতি ছাড়া যৌন মিলন করলেই যৌন নির্যাতন হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু বাস্তবে এর কোন মূল্য নেই যখন প্রকৃত নির্যাতনের অভিযোগও অস্বীকার করা হয় বা লুকানো হয়। অপরাধীর বিচার না করে যখন খালাস দেয়া হয় তখন অন্যদের মাঝে এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের উৎসাহ বৃদ্ধি পায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২২৬
আপনার মতামত জানানঃ