মহাকাশ অভিযানের সার্থকতা সম্পর্কে যারা প্রশ্ন তোলেন, হাবল টেলিস্কোপের কাহিনি তাদের মুখ বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট হওয়া উচিত৷ প্রাথমিক ব্যর্থতা কাটিয়ে মহাকাশের এই চোখ একের পর এক বিস্ময়কর আবিষ্কার করে চলেছে৷
ফ্যান্টম গ্যালাক্সি নামের একটি নতুন ছায়াপথের কিছু অসাধারণ ও চোখ ধাঁধানো ছবি তুলেছে হাবল টেলিস্কোপ ও জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। পৃথিবী থেকে ৩ কোটি ২০ লাখ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই ছায়াপথটি বেশ কয়েকটি সৌরজগতের সন্নিবেশে গঠিত। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ) জানিয়েছে, এই ছায়াপথটি পিসসেস বা মীন নক্ষত্রমন্ডলীর অংশ। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ও ইএসএ যৌথভাবে এই ২টি টেলিস্কোপের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
ফ্যান্টম গ্যালাক্সির আনুষ্ঠানিক নাম এম৭৪। এটি একধরণের মোচাকার আকৃতির ছায়াপথ, যাকে ‘গ্র্যান্ড ডিজাইন স্পাইরাল’ বলা হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে এটিতে বেশ কিছু সর্পিলাকার বাহু রয়েছে, যেগুলো এর কেন্দ্র থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ধারণ করা ছবিতে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
এই ছবিগুলো হাবল ও জেমস ওয়েব, উভয় টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। ইএসএ জানায়, ওয়েব টেলিস্কোপে এই ছায়াপথের সর্পিলাকার বাহুতে ‘গ্যাস ও ধূলিকণার সূক্ষ্ম ফিলামেন্ট’ দেখা গেছে। ছবিগুলোতে ছায়াপথের কেন্দ্রে গ্যাসের আচ্ছাদনবিহীন নিউক্লিয়ার স্টার ক্লাস্টারও (নক্ষত্রের কেন্দ্রে বেশ কিছু উজ্জ্বল তারার সন্নিবেশ) দেখা গেছে।
এই নিরীক্ষার মাধ্যমে নক্ষত্র তৈরি হওয়ার প্রাথমিক ধাপগুলো সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
ওয়েব টেলিস্কোপ তার মিড-ইনফ্রারেড ইন্সট্রুমেন্ট (এমআইআরআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফ্যান্টম গ্যালাক্সির নিরীক্ষা করেছে। ইএসএ জানায়, এই নিরীক্ষার মাধ্যমে নক্ষত্র তৈরি হওয়ার প্রাথমিক ধাপগুলো সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
ইএসএ আরও জানায়, ওয়েব টেলিস্কোপ আলোর অতিলাল রশ্মির পর্যবেক্ষণে বেশি পটু। হাবল অতিবেগুনী ও দৃশ্যমান আলোতে বেশি ভালো কাজ করে।
২টি টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া তথ্যের সন্নিবেশে বিজ্ঞানীরা ফ্যান্টম ছায়াপথের বিষয়ে আরও ভালো জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন।
জুলাইতে প্রথমবারের মত ওয়েব টেলিস্কোপের ছবি প্রকাশ করে নাসা। এই টেলিস্কোপটি হাবলের চেয়ে বেশ খানিকটা বড় এবং এটি অনেক দূরের ছায়াপথের ছবি তুলতে সক্ষম। হাবল পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে আর ওয়েব ঘুরছে সূর্যের চারপাশে।
এ মুহূর্তে জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ পৃথিবী থেকে ১০ লাখ মাইল দূরে রয়েছে।
হাবল স্পেস টেলিস্কোপটির উত্তরসূরি হিসেবে তৈরি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি তৈরিতে ১০ বিলিয়ন মার্কন ডলার খরচ করে নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। গত বছরের শেষ দিকে এটি মহাকাশে কার্যক্রম শুরু করে। গত গ্রীষ্ম থেকেই ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করে মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণ করছে টেলিস্কোপটি। এটি পৃথিবী থেকে ১০ লাখ মাইল দূরে অবস্থিত।
গত মাসে নাসার বিজ্ঞানীরা এই টেলিস্কোপ ব্যবহার করে পাওয়া ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগের মহাবিশ্বের এক রঙিন ছবির বিষয়টি সামনে আনেন। এরপর আকাশগঙ্গা ছায়াপথের দূরতম স্থানে পৃথিবীসদৃশ একটি গ্রহে পানি থাকার চিহ্নও শনাক্ত করে হইচই ফেলে দেয় এ টেলিস্কোপ। এখন আবার অভূতপূর্ব ছবি দিয়ে বিশ্ববাসীকে বিমোহিত করল এটি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫০
আপনার মতামত জানানঃ