বিনোদনমূলক ক্ষেত্রে গাঁজার ব্যবহার ২০১৮ সালের অক্টোবরে বৈধ করে কানাডা। দেশটির সরকার ২০০৮ সাল থেকে সাবেক সামরিক সদস্যদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত গাঁজার খরচ দিচ্ছে।
সাবেক সেনাদের গাঁজা কেনা সহজ করতে আরও টাকা ঢালতে যাচ্ছে কানাডা সরকার। বলা হচ্ছে, সরকার এবার এ খাতে প্রায় ১৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার খরচ করবে। এই অঙ্ক গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ এবং ২০১৯ সালের তুলনায় ১৩৫ শতাংশ বেশি। কানাডার ভেটেরান অ্যাফেয়ার্স ২০০৮ সাল থেকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত গাঁজার জন্য এ অর্থ ব্যয় করছে।
বিনোদনমূলক ক্ষেত্রে গাঁজার ব্যবহার ২০১৮ সালের অক্টোবরে বৈধ করে কানাডা। উরুগুয়ের পর কানাডা এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দ্বিতীয় দেশ। সংঘটিত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ভোক্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পদক্ষেপ হিসেবে এ ব্যবস্থাটির বৈধতা দেয় জাস্টিন ট্রুডোর সরকার।
কানাডায় ওষুধ হিসেবে গাঁজা ২০০১ সাল থেকে বৈধ। গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্বেগ, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার মতো সমস্যায় যারা ভোগেন, তাদের ক্ষেত্রে গাঁজা ভীষণ কার্যকর।
২০০৮ সালে আইনি নানা বাধা কাটিয়ে ভেটেরান অ্যাফেয়ার্স অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের চিকিৎসায় ঔষধি গাঁজার অনুমোদন দেয়। তিন বছর পর ২০১১ সালে গাঁজাকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে নিয়মকানুনগুলো সহজ করে সরকার। এ বছর গাঁজা কেনার জন্য ৩৭ জনকে ৮১ হাজার ডলার দেয়া হয়।
ভেটেরান অ্যাফেয়ার্স বলছে, মেডিক্যাল গাঁজা ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানে দারুণ একটি ক্ষেত্র। এ নিয়ে আরও গবেষণা চলবে। বয়স্ক এবং তাদের পরিবারের কল্যাণে প্রয়োজনীয় নীতি সমন্বয় করা হবে।
কানাডিয়ান সিনেট কমিশন ২০১৯ সালে চিকিৎসার উদ্দেশে গাঁজার ইতিবাচক ফলাফলের ওপর জোর দিয়েছিল। বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার বিরুদ্ধে ‘অত্যন্ত আসক্তিযুক্ত’ ওপিওডের বিকল্প ধরা হচ্ছে গাঁজাকে।
সিনেটররা বলেন, ‘গাঁজার দাম নিয়মিত মূল্যায়ন করা দরকার। কারণ কিছু অভিজ্ঞ সেনার সামর্থ্যের চেয়ে বেশি খরচ হতে পারে।’
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে কমপক্ষে ১৮ হাজার সাবেক সেনাকে ঔষধি গাঁজার জন্য টাকা দিয়েছিল কানাডা সরকার, যা ফেডারেল খরচের (১১ কোটি ৮০ লাখ ডলার) সমান।
বিশেষজ্ঞরা প্রবীণদের জন্য পরিকল্পনাটিকে অনেকাংশেই সমর্থন করেন। তবে তারা বলছেন, এটির সঙ্গে মনোসামাজিক সহায়তা থাকা জরুরি, বিশেষ করে উদ্বেগ এবং পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে।
মূলত প্রাচীন কালে বিভিন্ন চিকিৎসায় গাঁজা ব্যবহার করা হতো। গবেষকরা বলছেন পরিমাণ মতো গাঁজা ওষুধ হিসেবে সেবন করার অনেক উপকার৷ তবে গাঁজার নেশা হলে, বা সে নেশা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে জীবনে বিপদ ডেকে আনতে পারে৷ চলুন গাজার কিছু উপকার জেনে নেওয়া যাক।
মৃগীরোগে ব্যবহার
নির্দিষ্ট পরিমাণে গাঁজা নিলে মৃগী জাতীয় স্নায়ু রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। এমনটাই জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ২০১৩ সালেই তাদের এই গবেষণা, ফার্মাকোলজি এন্ড এক্সপেরিমেন্টাল থেরাপিউটিক্স জার্নালে প্রকাশিত হয়।
গ্লুকোমায় উপকার
প্রায় ১০ বছর আগে এই বিষয়টি জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল আই ইন্সটিটিউট জানায়, গ্লুকোমা চোখের এমন এক রোগ যাতে অন্ধত্ব আনে। কিন্তু গাঁজা গ্লুকোমা রোধে সাহায্য করে।
অ্যালঝাইমার রোগ থেকে মুক্তি
গাঁজা মস্তিস্ককে দ্রুত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া থেকে রক্ষা করে। এমনটাই জানিয়েছেন দ্য জার্নাল অব অ্যালঝাইমার ডিজিজ।
ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহার
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসার বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্যানসার অর্গ-এ জানানো হয় গাঁজা অনেক সময় টিউমারের ঝুঁকি কমিয়ে প্রতিরোধকের ভূমিকা পালন করে।
কেমোথেরাপির ক্ষতি কমায়
ক্যানসার রোগীদের অনেক ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি নিতে হয়। এক্ষেত্রে গাঁজা কেমোথেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমায়। এছাড়া কেমোথেরাপির অনেক ক্ষতি লাঘব করে। ইউএস এজেন্সি ফর ড্রাগ জানিয়েছে এই তথ্য।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নটিংহাম জানায়, গাঁজা মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
এসডব্লিউ/এসএস/০৭৩২
আপনার মতামত জানানঃ