নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন দামের সাথে আর পেরে উঠছে না সাধারণ মানুষ। কম খেয়ে, এক বেলা না খেয়ে অথবা ঋণ করে চলছেন তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে দারিদ্র্য আরো বাড়বে। তাদের কথা, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় নতুন করে তৃতীয় দফায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার ঢেউ চলছে। গত কয়েকদিনে সব পণ্যের দাম গড়ে শতকরা ৩০ ভাগ বেড়েছে। আর এর মধ্যে সন্তান বিক্রির খবর নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ জুড়েই।
অভাবের সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেখানে সন্তান মানুষ করা যেন কঠিন বিষয়। তাই বলে সন্তান বিক্রি! খাগড়াছড়ি জেলা শহরের এক বাজারে এমন ঘটনা ঘটে। বর্তমানে অভাবে ভরণপোষণ করতে হিমসিম খাওয়ায় ছেলের সুন্দর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ১২ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি করতে চেয়েছেন এক মা। বিষয়টি জানাজানির পর জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
পারুল প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। দীর্ঘদিন ধরে আছেন বাবার সংসারে। স্বামীর সঙ্গেও যোগাযোগ নেই তার। এমন সংকটি পরিস্থিতিতে অভাবের তাড়নায় নিজের সন্তানকে ‘বিক্রির জন্য’ বাজারে তুলেছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) খাগড়াছড়ি জেলা শহরে হাট বাজারে নিজের ৬ বছরের সন্তান রামকৃষ্ণ চাকমাকে বিক্রি করতে আনেন মা পারুল চাকমা। সন্তানের বিনিময় তিনি ১২ হাজার টাকা চান। বিষয়টি কয়েকজনের নজরে এলে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানান বাজারে ঘটনাটি ঘটে। বিষয়টি জানাজানির পর জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
পরে গতকাল শুক্রবার পরিবারটির জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে ছুটে যান সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি। সন্তানসহ মাকে কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনীল চাকমার কাছে নিয়ে যান তিনি। চেয়ারম্যান ওই মাকে বুঝিয়ে পরিবারের কাছে পাঠান।
পারুল চাকমা খাগড়াছড়ি ভাইবোনছড়ার পাকোজ্জ্যাছড়ি এলাকার কালাবো চাকমার মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পর সন্তান নিয়ে তিনি বাবার বাড়িতে থাকেন। সেখানেও অভাব। এ অবস্থায় সন্তান মানুষ করা কঠিন।
শিশু রাম কৃষ্ণ চাকমার মা পারুল চাকমা বলেন, ঘরে খাবার নাই। আমার ওষুধ কেনার টাকা নাই। কিভাবে চলব কিভাবে বাঁচবো। তাই ছেলেকে ভালো পরিবারে দিতে চেয়েছিলাম।
ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুজন চাকমা বলেন, এমনিতে অভাব। তারপর পারুল চাকমা শারীরিকভাবে অসুস্থ। সন্তানকে কোন ভালো পরিবারে দত্তক দেওয়ার জন্য হাট বাজারে নিয় যায়। সেখানে কয়েকজনের কাছে সন্তানের বিনিময়ে ১২ হাজার টাকা চায়। পরে বিষয়টি জেনে আমি তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক।
কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল চাকমা জানান, বিষয়টি জানার পর আমি সন্তানসহ মাকে অফিসে নিয়ে আসি। পরে পরিবারের জিম্মায় তাদের হস্তান্তর করি।
ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুজন চাকমা বলেন, এমনিতে অভাব। পারুল চাকমা শারীরিকভাবে অসুস্থ। মূলত সন্তানকে কোনো ভালো পরিবারে দত্তক দেওয়ার জন্য বাজারে নিয়ে যান তিনি। সেখানে কয়েকজনের কাছে তিনি সন্তানের বিনিময়ে ১২ হাজার টাকা চান। পরে বিষয়টি জেনে আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক।
শুক্রবার সকালে পারুল চাকমা ও তার সন্তান রামকৃষ্ণকে দেখতে যান সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা এমপি। এসময় তিনি পরিবারটিকে ৬ মাসের খাবার সামগ্রী, নগদ অর্থ সহায়তা দেন। একই সঙ্গে তাদের একটি সরকারি ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, এই যুগে এমন ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। আমি বিষয়টি জানার পর তাদের দেখতে এলাম। অভাব থেকে এমনটা করেছেন বলে জেনেছি। শিশুটিকে কোনো সরকারি শিশু সদনে পাঠানো যায় কিনা দেখব।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৩৫
আপনার মতামত জানানঃ