বিশ্বে করোনার আগমনের পর থেকে যে কোনো কারণেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া কঠিনতর হয়ে উঠেছে। অভিবাসনপ্রার্থী মানুষের জন্য প্রায় আরও অসম্ভব হয়ে উঠেছে অনুমোদন পাওয়া। এজন্য অনেকেই ঝুঁকছে অনৈতিক প্রক্রিয়ায় অভিবাসনের প্রতি। আর এভাবে দেশান্তরি হতে গিয়ে অনেকেই মৃত্যুর মুখে পড়ছে, কেউবা হচ্ছেন নিখোঁজ।
গ্রিসে একটি নৌকাডুবে অর্ধশতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশী নিখোঁজ হয়েছে। এজিয়ান সাগরের কার্পাথোস দ্বীপে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বুধবার এক উপকূলরক্ষী কর্মকর্তা এএফপিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ওই নৌকায় প্রায় ৮০ জন আরোহী ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে ৫০ জনের বেশি যাত্রী নিখোঁজ হয়েছে। নৌকাটি তুরস্ক থেকে ছেড়ে যাওয়ার পরই দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে নিখোঁজদের উদ্ধারে কাজ করছে গ্রিসের উপকূলরক্ষী বাহিনী।
গ্রিসের উপকূলরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা সবাই পুরুষ। তারা আফগানিস্তান, ইরাক এবং ইরানের নাগরিক। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে যে, ওই নৌকায় ৬০ থেকে ৮০ জন আরোহী ছিল।
নৌকাটি তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় আন্তালিয়া উপকূল থেকে যাত্রা করেছিল। নৌকাটি ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। কিন্তু যাত্রাপথে দুর্ঘটনা ঘটে।
উপকূলরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, টহল নৌকা, হেলিকপ্টার এবং কমপক্ষে তিনটি জাহাজ উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলো থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা তুরস্ক হয়ে গ্রিসের বিভিন্ন দ্বীপে বিপজ্জনকভাবে সাগর পাড়ি দেন। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে সাগরে যাত্রাপথে এখন পর্যন্ত বহু অভিবাসনপ্রত্যাশী প্রাণ হারিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ওই নৌকায় প্রায় ৮০ জন আরোহী ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে ৫০ জনের বেশি যাত্রী নিখোঁজ হয়েছে।
এর আগে তুরস্ক সীমান্তে প্রবল ঠাণ্ডায় মধ্যে খোলা আকাশের নীচে ১২ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে। গ্রিসের সীমান্তঘেঁষা তুরস্কের এডির্না প্রদেশের ইপসালা গ্রামে শীতে জমে তাদের মৃত্যু হয় বলে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রী সুলেমান সয়লু নিশ্চিত করেছেন।
যদিও এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মৃত্যুর জন্য গ্রিস কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছে তুরস্ক। তুর্কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে তুরস্ক সীমান্তের দিকে খালি পায়ে পাঠিয়েছিল গ্রিসের সীমান্তরক্ষীরা। তবে গ্রিস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইউক্রেন সংঘাতের কারণে সৃষ্ট খাদ্য ঘাটতিতে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে নতুন করে ইউরোপমুখী অভিবাসীদের ঢলের হুমকি দেখা দিয়েছে। চলতি বছর ইউরোপযাত্রার অন্যতম সমুদ্রপথ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে দেড় লাখের বেশি অভিবাসী পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হয় দালালের হাত ধরে ইতালি ও স্পেন প্রবেশের চেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে ডুবে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু। খবর আসে, আমেরিকায় যাওয়ার পথে বনে-জঙ্গলে দালালের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। ইউরোপে ঢোকার আশায় বলকানের বরফঢাকা জঙ্গলে হাজারো মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে অপেক্ষায় থাকার সংবাদও আসে।
ভালো পারিশ্রমিকের আশায় কয়েক বছর ধরে পাচারকারীদের সহায়তায় লিবিয়া যাচ্ছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। সেখান থেকেই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। এরপরও ঝুঁকিপূর্ণ এ প্রবণতা বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া প্রতারণার শিকার হয়ে লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের হাতে বহু অভিবাসনপ্রত্যাশী আছেন আটক অবস্থায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১১৯৫৬
আপনার মতামত জানানঃ