বগুড়ায় চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশের এক এসআই ও তার সোর্সকে অবরুদ্ধ করে রাখে জনতা। পরে ৯৯৯-এ কল করলে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। গতকাল বিকালে বগুড়া শহরের নাটাইপাড়ায় (নাপিত পাড়া) এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় বগুড়া সদর থানার এসআই মাসুদ রানাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত এবং তার সোর্স ইকবালকে আটক করে থানা হাজতে রাখা হয়েছে।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘শুক্রবার দুপুরে জুয়া খেলার খবর পেয়ে খোঁজ নিতে সোর্স ইকবালকে নিয়ে শহরের নাটাইপাড়া এলাকার নাপিত তরুণ শীলের বাড়িতে যান এসআই মাসুদ। সেখানে তার সঙ্গে স্থানীয়দের ঝামেলা তৈরি হয়। তখন তাকে ও ইকবালকে তরুণের বাড়ির ভেতর সবাই অবরুদ্ধ করে রাখেন।’
ওসি জানান, সেখান থেকে ৯৯৯-এ কল করে স্থানীয়রা চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগে দুজনকে আটকের বিষয়টি জানান। থানা পুলিশ গিয়ে এসআই ও তার সোর্সকে উদ্ধার করে।
তিনি বলেন, ‘এসআই মাসুদ থানায় কোনো কিছু না জানিয়ে সাদা পোশাকে নাটাইপাড়ায় ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। এ ঘটনায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। আর ইকবাল নামে ওই সোর্স থানায় আটক রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, বগুড়া সদর থানার এসআই মাসুদ রানা তার সোর্স ইকবালকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার দুপুরের দিকে নাটাইপাড়ার অরুণ কুমার শীলের বাসায় যান। তারা পুলিশ পরিচয়ে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে অরুণ শীলের মোবাইল ফোন জব্দ করেন। এ সময় ওই বাসায় কয়েকজন যুবক ছিলেন। পুলিশের সোর্স ইকবাল তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। একপর্যায় বাড়ির লোকজন পুলিশের উপস্থিতি মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ শুরু করলে এসআই মাসুদ রানা তাদের মারপিট করেন।
পুলিশের সোর্স ইকবাল তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। একপর্যায় বাড়ির লোকজন পুলিশের উপস্থিতি মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ শুরু করলে এসআই মাসুদ রানা তাদের মারপিট করেন।
অরুণ কুমার শীল জানান, পুলিশ বাড়ির নারীদেরকেও মারপিট শুরু করলে প্রতিবেশীরা এসে পুলিশ ও তার সোর্সকে অবরুদ্ধ করেন। খবর পেয়ে বগুড়া সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় লোকজন বিক্ষুদ্ধ হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরাফত ইসলাম জানান, এসআই মাসুদ রানাকে সদর থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। মাসুদ রানার সোর্স ইকবালকে আটক করা হয়েছে। ওই বাড়িতে কী ঘটেছিল তাই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেই তাদের কারো কারো ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা হয়, কারো ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলা হয়। শাস্তির মাধ্যমে যদিও তাদের বোঝানো হয়, অপরাধ করলে পার পাওয়া যায় না। কিন্তু বাস্তবতা হলো- পুলিশে অপরাধ কমছে না, বাড়ছে প্রতিদিন।
অপরাধবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ‘পুলিশে জবাবদিহিতার অভাবেই এ পরিস্থিতি। এটি কমাতে হলে দায়িত্বশীল অফিসারদেরও জবাবদিহিতা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ অন্যায় অনৈতিক কাজের কারণেই সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু পুলিশ সদস্য মিলে আইনের অপব্যবহার করে ডাকাতি করার নিমিত্তেই এই চক্রটি গড়ে তোলেন। একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চেয়ে কম নয় এই চক্রটি। আইনকে ব্যবহার করে তাদের চাঁদাবাজি ও নানা অপকর্ম একদিকে যেমন পুলিশের জন্য লজ্জার অপরদিকে দেশের জন্যও। সাম্প্রতিককালে পুলিশের এহেন অপকর্মের অভিযোগ সন্ত্রাসীদের চেয়েও বেশি পরিমাণে আসছে। পুলিশের কাছে অনেকটাই জিম্মি হয়ে আছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, কর্মজীবীরা। কিছু হলেই সন্ত্রাসীদের চেয়ে ভয়ানক পদ্ধতিতে নির্যাতন করা হয়। যখন তখন ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে লুটে যাচ্ছে প্রচুর টাকা। এসব বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮২৬
আপনার মতামত জানানঃ