মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনে গত সাত বছর ধরে চলছে গৃহযুদ্ধ। ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহী ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দেশটির সরকারের মধ্যে এ যুদ্ধ চলছে।
যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে চার মাস আগে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের মধ্যে চার মাসের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। গত ২ অক্টোবর এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় বর্তমানে অজানা আতঙ্কে দিনপাত করছেন ইয়েমেনের সাধারণ মানুষ। তাদের মধ্যে কাজ করছে ভয়, আতঙ্ক এবং বিভ্রান্তি।
এরইমধ্যে এদিকে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) কাছে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২ আগস্ট) এই তথ্য জানায় দেশটি।
বুধবার (৩ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি সৌদি আরবে সফরে যান এবং সেখানে দুই দেশের নেতাদের সাথে সাক্ষাতের দুই সপ্তাহ পর অস্ত্র বিক্রির এই অনুমোদন ঘোষণা করল ওয়াশিংটন।
মধ্যপ্রাচ্যে বাইডেনের সাম্প্রতিক ওই সফরকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশ দু’টির বিচ্ছিন্ন সম্পর্ক জোরদার করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে, কারণ উভয় দেশই ইরানের কাছ থেকে একটি উচ্চতর হুমকির মধ্যে রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৩০০টি প্যাট্রিয়ট এমআইএম-১০৪ই মিসাইল সিস্টেম কিনবে সৌদি আরব। এই মিসাইল সিস্টেমের মাধ্যমে ধেয়ে আসা দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা যাবে। একইসঙ্গে শত্রুপক্ষের আক্রমণকারী যুদ্ধবিমানও মাটিতে নামাতে ব্যবহার করা যেতে পারে এই মিসাইল সিস্টেমটি।
পররাষ্ট্র দপ্তর আরও জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রসহ এর সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ এবং যন্ত্রাংশের মূল্য ৩০৫ কোটি মার্কিন ডলার।
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা সম্প্রতি সৌদি আরবকে রকেট হামলার হুমকি দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, সৌদি আরব যে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কিনতে যাচ্ছে, তা দিয়ে হুতি বিদ্রোহীদের চালানো ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকিয়ে দেওয়া যাবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় বর্তমানে অজানা আতঙ্কে দিনপাত করছেন ইয়েমেনের সাধারণ মানুষ। তাদের মধ্যে কাজ করছে ভয়, আতঙ্ক এবং বিভ্রান্তি।
আলাদা করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ২২৫ কোটি ডলার মূল্যের থাড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র।
সংযুক্ত আরব আমিরাতকে লক্ষ্য করেও সম্প্রতি হুতি বিদ্রোহীরা রকেট হামলা চালিয়েছিল। তবে দেশটিতে মার্কিন সেনাবাহিনী পরিচালিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে এটি প্রতিহত করা হয়।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর বলেছে, প্রস্তাবিত জিনিসগুলো কেনার মধ্য দিয়ে অঞ্চলটিতে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি মোকাবিলায় আমিরাতের সক্ষমতা বাড়বে।
এদিকে আসন্ন যুদ্ধ নিয়ে অজানা আতঙ্কে ইয়েমেনের সাধারণ মানুষ।
রাজধানী সানার বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী সালেহ আহমেদ আলজাজিরাকে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হবে।
তিনি বলেন, লড়াই শুরু হবে। রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। ফুয়েলের দাম বেড়ে যাবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে। বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর পাহাড় তৈরি হবে। এসব সমস্যা জীবন তীক্ত ও অসহনীয় করে দিয়েছে।
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় করা এ যুদ্ধবিরতিটি দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে লম্বা সময়ের যুদ্ধবিরতি।
এখন ইয়েমেনে নিযুক্ত জাতিসংঘের দূত হ্যানস গ্রুন্ডবার্গ, যুক্তরাষ্ট্রের দূত টিম লেন্ডারকিং ফের যুদ্ধবিরতির সময় বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
আহমেদ নামে একজন মিনিবাস চালক যুদ্ধবিররিত বিষয়ে বলেন, এটির আগে আমার গাড়িতে পেট্রোল নেওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা গ্যাস স্টেশনে অপেক্ষা করতে হত। এখন আমি যে কোনো স্থানে যে কোনো সময় পেট্রোল নিতে পারি। আমি কাজ করতে পারি এবং পরিবারের জন্য অর্থ আয় করতে পারি। এ যুদ্ধবিরতির কারণে আমার জীবনে স্বস্তি এসেছিল।
এদিকে এ যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পায়। কিন্তু হুতি বিদ্রোহী এবং সরকারের মধ্যে কোনো সমাধান আসেনি। তাছাড়া যুদ্ধবিরতির মধ্যেও তারা এটি লঙ্ঘন করেছে। ফলে এখন সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় আবার দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৫৫
আপনার মতামত জানানঃ