দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর অবস্থানে তারেক রহমান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের নেতাকর্মীদের প্রতি অনেক সদয় ছিলেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে কঠিন পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
এর আগে সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য তৃণমুল নেতাদের বহিষ্কারের নজির দেখা গেলেও এবার তারেক রহমান দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে নজর দিয়েছেন দলের হাইকমান্ডে। দলের হাইকমান্ড সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য এবং সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে বহিষ্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে শোকজ করা হয়েছে। এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে শোকজের জবাব দেওয়ার জন্য। এদিকে দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে শোকজ করা হয়েছে অপর ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকেও। আগামী তিন দিনের মধ্যে তাকে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে ১২ অক্টোবর দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়াহিদ সরোয়ার কালামকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার অপরাধ ছিল আইনজীবীদের এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করে বক্তব্য রাখা।
দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা দুই ভাইস চেয়ারম্যানকে শোকজের কারণ হিসেবে জানা যায়, গত সোমবার(১৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভা শেষে সভায় অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তান ও পল্টন এলাকায় হঠাৎ করে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ বিক্ষোভের কারণে রাস্তার পাশে যানজট তৈরি হয়। এসময় সেখানে উপস্থিত হন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ সহ আরো অনেকে। পরে পুলিশের ধাওয়ায় নেতাকর্মীরা অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যান।
দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়া নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে অবস্থান, সংগঠনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের জন্য ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে শোকজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
দলের অপর ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে শোকজের কারণ হিসেবে জানা যায়, সম্প্রতি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে নানা ধরনের কটূক্তি করায় তার ওপর ক্ষুব্ধ দলের নেতাকর্মীরা। তারা দলের হাইকমান্ডকে বিষয়টি অবহিত করে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করেছেন। দলের অন্যান্য নেতাকর্মীরা মনে করেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় হাফিজের দল ভাঙার চেষ্টার অভিযোগও ফের চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে।
দলের দুজন ভাইস চেয়ারম্যানকে শোকজের কারণ হিসেবে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের চিঠি দিয়ে বলেছি কী কারণে শোকজ করা হয়েছে। তারা জবাব দিক, তারপর দল যেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভিন্নমত থাকতে পারে, কিন্তু দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে কেউ নন। একটা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী কখনোই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে পারে না। এটা তো একটা ডিসিপ্লিনের মধ্যে আছে। আমাদের মধ্যে নানা ডিফারেন্স অব অপিনিয়ন হতে পারে, সেটা হাউজের মধ্যে। ওপেন কোনো জায়গায় তো আমরা কোনো কথা বলতে পারি না।’
তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে সে বিষয়ে জানতে চাইলে রিজভী বলেন, ‘দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে সাংগঠনিক কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে।’
বহিষ্কার করার বিষয়ে জানতে চাইলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শোকজের চিঠি আজকে পেয়েছি। আমি এখন গণমাধ্যমে কিছু বলব না। আগামী ১৮ ডিসেম্বর আমি শোকজের জবাব দেব। তখন সংবাদ সম্মেলন করে আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরব।’
এদিকে শওকত মাহমুদের শোকজের বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এসডব্লিউ/কেএইচ/নসদ/১৯১০
আপনার মতামত জানানঃ