পুলিশ কর্মকর্তা থেকে হয়ে ওঠেন জাল টাকার কারবারি। এজেন্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতেন সারা দেশে।
এমনই এক চক্রের মূল হোতা হুমায়ূন কবিরকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র রাজধানীতে জাল টাকার কারবার করে আসছিল। এই চক্রটির মূলহোতা মো. হুমায়ুন কবির (৪৮)। তিনি পুলিশের একজন চাকরিচ্যুত সদস্য। তার নেতৃত্বে এবং ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে জাল টাকা চলে যেত ব্যাংকে।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
রাজধানীতে জাল টাকা তৈরির চক্রের অন্যতম প্রধান মো. হুমায়ুন কবিরকে (৪৮) গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ।
বুধবার (২৭ জুলাই) রাতে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান হাউজিং এলাকায় ডিবি উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা ও জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামসহ কবিরকে গ্রেপ্তার করেছে।
ডিবি প্রধান বলেন, এই চক্রটি ব্যাংকে টাকা জমা দিত অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যে। মূলত ঈদ ও অন্যান্য উৎসব কেন্দ্রীক ব্যাংকে যখন অতিরিক্ত ভিড় হতো সে সময় ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে মূলত জাল টাকাগুলো ব্যাংকে জমা দিত।
ব্যাংকের কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং কতদিন ধরে এই চক্রটি জাল টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে আসছিল? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা তাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসা করি, এই জাল টাকাগুলো কোথায় কোথায় দেন? তিনি জানান, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী এলাকায় চক্রের এজেন্টদের কাছে জাল টাকাগুলো সাপ্লাই করতেন। আবার ব্যাংকে যখন প্রচুর ভিড় হতো তখন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাল টাকা ব্যাংকে জমা দিতেন।
কোন কোন ব্যাংকে জাল টাকা দিয়েছে তারা? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, এ বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি।
হুমায়ূন কবির নামে ওই ব্যক্তি ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। চাকরি চলে যাওয়ার পর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে শুরু করেন জাল টাকা তৈরির রমরমা ব্যবসা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা এজেন্টের মাধ্যমে এই টাকা ছড়িয়ে দিতেন সারা দেশে।
গ্রেপ্তার হুমায়ুন কবির এক সময় পুলিশে চাকরি করতেন। এই অবৈধ কাজে তিনি চাকরিচ্যুত হয়েছেন কি না জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, কোনো এক সময় তিনি পুলিশের চাকরি করতেন। এখন তিনি জাল টাকা তৈরি করছেন। তাই বলে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ছাড় দিচ্ছে না। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। অবৈধভাবে কেউ বড়লোক হতে চাইলে তাকেও আমরা আইনের আওতায় আনব।
জানানো হয়, হুমায়ূন কবির নামে ওই ব্যক্তি ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। চাকরি চলে যাওয়ার পর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে শুরু করেন জাল টাকা তৈরির রমরমা ব্যবসা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা এজেন্টের মাধ্যমে এই টাকা ছড়িয়ে দিতেন সারা দেশে। এক লাখ টাকার বিনিময়ে পেতেন ১০ হাজার টাকা।
মোহাম্মদপুর থেকে হুমায়ূন কবিরকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানায়, শারদীয় দুর্গোৎসব সামনে রেখে মহাপরিকল্পনা ছিল চক্রটির। একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও শোধরাননি হুমায়ূন। জেলখানায় গিয়েও এ কাজের জন্য তৈরি করেন নতুন নেটওয়ার্ক।
গ্রেপ্তার হুমায়ুন কবির মোহাম্মদপুরে ভাড়া নেওয়া বাসা জাল টাকা বানানোর কারখানা হিসেবে ব্যবহার করে জাল টাকা তৈরি করে আসছিল। তার অন্যান্য সহযোগী পলাতক। তারা হলো- ইমাম হোসেন (৩০), মো. আলাউদ্দিন (৩৫), মো. সাইফুল (৩০), মো. মজিবর (৩২) ও আলাউদ্দিন (৪২)। তারা পরস্পর যোগসাজশে জাল টাকা প্রস্তুত এবং বিপণন করে আসছিল। এছাড়া গ্রেপ্তার আসামির পিসিপিআর যাচাই করে জানা যায় তার বিরুদ্ধে এর আগেও ৪টি জাল টাকার মামলা রয়েছে।
ডিবি প্রধান বলেন, অনেক দিন থেকেই তারা এই ব্যবসা করে আসছে। প্রতি মাসে ৬০ লাখ জাল টাকা তারা তৈরি করে। সারা দেশে ৪/৫টা নিয়ন্ত্রণ গ্রুপের মাধ্যমে এই নকল টাকা তারা ছড়িয়ে থাকে। প্রতি এক লাখ নকল টাকায় কারখানার মালিক পায় ১০ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, তারা মূলত ঈদকে টার্গেট করে এই জাল টাকা তৈরি করে থাকে। তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি আসন্ন পূজাকে কেন্দ্র করে মাসে ৬০ লাখ টাকা রোলিং করার টার্গেটে এখন থেকেই তারা কাজ শুরু করেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৫২
আপনার মতামত জানানঃ