ইউক্রেনে রুশ বাহিনী হামলা চালানোর পর প্রাণভয়ে লাখো মানুষ দেশ ছেড়ে পাশের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। বলা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ এমন মানবিক সংকটে পড়েনি। এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে।
পিতা-মাতা নেই এমন হাজার হাজার ইউক্রেনীয় শিশু শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে পোল্যান্ডে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের চিহ্নিত শিশুকামী অপরাধীরা মানবিক সহায়তার নামে পোল্যান্ড সফর করছে। এমনটাই জানিয়েছে পোল্যান্ডের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনসিএ জানিয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ছয় সপ্তাহে ১০ জন চিহ্নিত শিশুকামী যৌন অপরাধী পোল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন।
পোল্যান্ডের অভিবাসন কর্মকর্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পর তাদের পোল্যান্ড ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষও এ ধরনের চিহ্নিত অপরাধীদের পোল্যান্ড সফরে বিরত রাখতে কাজ করছে।
এনসিএর মুখপাত্র বলেছেন, ইউক্রেন থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ৫ হাজার শিশু সঙ্গীহীন অবস্থায় পোল্যান্ডে রয়েছে। তারা নিরাপদ কি না তা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে তারা পোল্যান্ড ত্যাগের আগে কোনো ইউক্রেনীয় শিশুর সংস্পর্শে এসেছিল কি না। তবে কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবেই কাজ করে যাচ্ছে যে এমন ব্যক্তিরা যাতে পোল্যান্ডে অবস্থান করতে না পারেন।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর ফলে সৃষ্ট শরণার্থী সংকটে ইউক্রেনীয় নারী ও শিশুদের জীবন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। গত মাসে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ এমন একটি গ্যাংয়ের নেতাকে গ্রেপ্তার করেছিল।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর ফলে সৃষ্ট শরণার্থী সংকটে ইউক্রেনীয় নারী ও শিশুদের জীবন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। গত মাসে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ এমন একটি গ্যাংয়ের নেতাকে গ্রেপ্তার করেছিল।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির গ্যাং শরণার্থী ইউক্রেনীয় নারীদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পতিতাবৃত্তির জন্য তুর্কিয়েতে পাচার করত।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালানোর পর যুক্তরাজ্য দেশটিকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। এর মধ্যে রয়েছে জরুরি অস্ত্রসহায়তা, ট্যাংক–বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানো। অপর দিকে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর মতো যুক্তরাজ্যও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা করেছে। কিন্তু ইউরোপের অন্য দেশগুলো যেখানে ইউক্রেনের শরণার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে সাদরে গ্রহণ করছে, সেখানে যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত শরণার্থীদের বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
উল্টো যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য যেসব বাস্তুচ্যুত ইউক্রেনীয় ভিসার জন্য আবেদন করেছেন, তারা দীর্ঘ অপেক্ষা আর লালফিতার দৌরাত্ম্যের শিকার হচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের ভিসার জন্য সীমাহীন দুর্ভোগ এখানেই শেষ নয়। ভিসা পেতে কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। কখনো কখনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির শত শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কিংবা পার্শ্ববর্তী কোনো দেশের ভিসা সেন্টারে গিয়ে বায়োমেট্রিক আবেদন করছেন।
রাশিয়ার হামলার কারণে ইতিমধ্যে ইউক্রেনের বড় বড় শহর থেকে অসংখ্য মানুষ পাশের দেশগুলোতে পালিয়ে গেছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হয়। আগ্রাসনের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখের বেশি মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ মে পর্যন্ত মোট ৬০২৯৭০৫ জন জন দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের ডেডিকেটেড ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডে। শরণার্থীদের ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২২
আপনার মতামত জানানঃ