কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলায় নিচু জমিতে উপহারের ঘর নির্মাণ নিয়ে সেখানকার ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। প্রতিবেদনে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরায় ওই পোর্টালের কক্সবাজার প্রতিনিধির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য গালিগালাজ করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রাত পৌনে ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তার অফিসিয়াল নম্বর থেকে কল করেন কক্সবাজার প্রতিনিধি সাইদুল ফরহাদকে। কথা বলার প্রথম থেকেই ইউএনও সাংবাদিককে গালিগালাজ করেছেন।
এরকম একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। সেখানে ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার খসরু সাংবাদিককে গালিগালাজ করছেন- এটি স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।
এদিকে অডিও রেকর্ডটি স্থানীয় এবং অন্যান্য জেলার সাংবাদিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এমন আচরণে হতভম্ব। তারা এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন।
কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ইউএনও কায়সার খসরুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানান।
তিনি বলেন, ইউএনওর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তাকে প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে ‘নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
অনলাইনটির দাবি, সেখানকার ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের সাক্ষাৎকার নিয়েই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে উপহারের ঘরগুলো এমন নিচু জায়গায় করা নিয়ে স্থানীয় লোকজন শুরু থেকেই আপত্তি তুলেছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল, ঘর তৈরিতে মাটির নিচে ইট ব্যবহার করা হয়নি। এ ছাড়া নিম্নমানের ইট, বালি-রড, কাঠ ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এজন্য তারা দায়ী করেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে।
পোর্টালটির কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধির করা ওই সচিত্র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা হোয়াব্রাং এলাকার সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবগুলো নতুন ঘর পানিতে ভাসছে। ফলে সেখানে থাকা ২৭টি পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।’
প্রতিবেদনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়সার খসরুর বক্তব্যও প্রকাশ হয়, যেখানে তিনি বলেন, ‘বন্যা যখন আসছে মুজিববর্ষের ঘরগুলো চেনেনি হয়তোবা ও আশপাশের ঘরগুলো দেখেনি শুধু দেখেছে মুজিববর্ষের ঘরগুলো। একটা চোর, আরেকটা সাংবাদিক, হলুদ সাংবাদিক ও ইয়াবার সঙ্গে জড়িত এমন সাংবাদিক আমাদের ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে।’
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়সার খসরু ফোন করেন সাংবাদিককে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে-ই সুযোগ পাচ্ছে সে-ই সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন করছে৷ সেটা যে শুধু সরকারি দলের লোক তা নয়, ব্যবসায়ীরা করছে, অর্থশালীরা করছে৷ আসলে সাংবাদিকদের খবরটি যাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, তারাই এটা করছে৷
তারা মনে করেন নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তি হলে বারবার নির্যাতনের ঘটনা ঘটতো না৷
তারা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী৷ বিচারের জন্য বছরের পর বছর ঘুরতে হচ্ছে৷ এই যে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ১২ বছরে পুলিশ ৯০ বার আদালত থেকে সময় নিয়েছে, অথচ খুনিদের ধরতে পারেনি৷ বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিটাই সাংবাদিকতা পেশাকে আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে৷
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৫৭
আপনার মতামত জানানঃ