আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চলমান সংলাপের প্রথম দিন গত রোববার রাজনৈতিক দলগুলোকে যে কোনো মূল্যে ভোটের মাঠে থাকার তাগিদ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ সময় তিনি একটি উদাহরণও টানেন। বলেন, ভোটের মাঠে কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায় তাহলে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোকে রাইফেল অথবা তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ানো উচিত।
গণমাধ্যমে তার এই বক্তব্য শিরোনাম হয়ে আসার পর সেদিন বিকেলেই অন্য একটি দলের সঙ্গে সংলাপের সময় নিজের বক্তব্য সংশোধন করেন সিইসি। তখন তিনি বলেন, ‘আপনারা তলোয়ার রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ করবেন না, টেবিল বসে যুক্তি দিয়ে কথা বলেন।’
পরদিন সকালে আরও একটি দলের সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেন, তিনি তলোয়ারের কথা কৌতুক করে বলেছেন।
প্রথমে একে কৌতুক উল্লেখ করে এবার ক্ষমা চাইলেন সিইসি। এই কথাটি রসবোধ ছিল উল্লেখ করে এটিকে গণমাধ্যমে শিরোনাম হিসেবে তুলে ধরায় গণমাধ্যমের প্রতি অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন তিনি। আবার বলেছেন, ‘কখনও কখনও আমরা ভুল করে থাকি। সেটা আমি মিন করি নাই। আমাকে ক্ষমা করবেন। ক্ষমা করবেন।’
‘আর যদি মিন করতাম তাহলে তো প্রথম দিন থেকেই আমি সবাইকে বলতাম অস্ত্র সংগ্রহ করতে বলতাম’- এমনটিও বলেন নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটির প্রধান।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসলামি ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপকালে তলোয়ারের প্রসঙ্গটি আবার তোলেন তিনি। দুইদিন আগে দেয়া তার বক্তব্য নিয়ে ঐক্যজোট নেতারা সমালোচনা করলে তিনি তার এমন অবস্থান তুলে ধরেন।
প্রসঙ্গটি নিয়ে চতুর্থ দফার বক্তব্যে হাবিবুল আউয়াল বলেন,’ একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। গত পরশু বলেছিলাম যদি কেউ তলোয়ার নিয়ে আসে আপনারা রাইফেল নিয়ে দাঁড়াবেন। এটা আপনাদের বুঝতে হবে যে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই কথাটা কখনও মিন করে বলতে পারেন না। আমি হয়ত অল্প শিক্ষিত। অল্প শিক্ষিত মানুষ হলেও এ ধরনের কথা বলতে পারে না।
‘ববি হাজ্জাজ নামের এক ভদ্রলোক, ওনার কথার পিঠে আমি হেসে বললাম তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে আপনি একটা বন্দুক নিয়ে দাঁড়াবেন। এটা হচ্ছে কথার পিঠে কথা এটা কখনও একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মিন করতে পারে না। আর যদি মিন করতাম তাহলে তো প্রথম দিন থেকেই আমি সবাইকে বলতাম অস্ত্র সংগ্রহ করতে। আপনারা অস্ত্র সংগ্রহ করে নিজেদেরকে শক্তিশালী করুন। এই কথা কিন্তু আমি কখনো বলিনি।
এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করায় গণমাধ্যমের প্রতি অসন্তুষ্ট সিইসি। বলেন, ‘আমরা অনেক সময় ইংরেজিতে একটি শব্দ বলি, হিউমার অর্থাৎ রস বা কৌতুক করে বলি। এটাকে একেবারে জাতীয় পর্যায়ে অকাট্য সত্য ঐশী একটা বাণী হিসেবে প্রচার করে দিয়েছে।
মিডিয়াকে আমি খুব সম্মান করি। মিডিয়াকে অবাধ সুযোগ দিয়েছি। আমরা কোনো রাখঢাক করি নাই। আমাদের কথা এবং ছবি দুটোই ওখানে আছে। আমাদের সাংবাদিকরা এটা করলেন বুঝে নাকি না বুঝে? ওনাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা অক্ষুন্ন আছে। এটা করে আমার মর্যাদাটাকে একেবারে ক্ষুন্ন করে দেয়া হয়েছে।’
অনেক সময় বক্তব্যের মধ্য দিয়েও আস্থা তৈরি হয়। সে কাজটুকু তারা করতে পারছেন না। সিইসির নিজেরই নিয়ন্ত্রণ নেই, তিনি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন নির্বাচন?
সিইসি বলেন, ‘আমার বাবা বেঁচে থাকলে উনি হয়ত বিশ্বাস করতেন আমার ছেলে এ রকম বাজে পরামর্শ দিল কেন? আমার মা বেঁচে থাকলে বলতেন, বাবা এত খারাপ পরামর্শ দিলে কেন?
‘আমি এ জন্য বলব কখনও কখনও আমরা ভুল করে থাকি। আমি হিউমার করতে গিয়েছিলাম, এটা রস৷ এটাকে যদি ওইভাবে প্রচার না করে বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রচার করা যেত যে উনি হিউমার করে বলেছেন। … আমি কিন্তু আপনাদের অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলতাম না সেটা আমি মিন করি নাই। আমাকে ক্ষমা করবেন। ক্ষমা করবেন।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা মাঠে থাকবেন। মাঠটা নিয়ন্ত্রণ করবেন আপনারা। যারা যারা প্রার্থী থাকবেন। আপনাদের সহযোগিতা সমর্থন আমি একান্তভাবে কামনা করছি।’
বিশিষ্টজনরা বলছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে উনি এখনই খেই বা দিশা হারিয়ে ফেলছেন। সাংবিধানিক পদে থেকে কীভাবে কথা বলতে হয় সেই বোধটুকুও তার মধ্যে নেই। সিইসির কথা ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের প্রতি সবার আস্থা তৈরি হওয়ার কথা। তাদের কঠোর মনোভাবের কারণে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের মাঠে সহিংসতা করার সাহস পাবে না। কিন্তু তার বক্তব্যে উলটো ফল হচ্ছে।
রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে। সিইসি তার বক্তব্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন।
তারা বলেন, কাজের মধ্য দিয়ে আস্থা সৃষ্টি করতে হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে সেই আস্থাও তৈরি করতে পারেনি। আবার অনেক সময় বক্তব্যের মধ্য দিয়েও আস্থা তৈরি হয়। সে কাজটুকু তারা করতে পারছেন না। সিইসির নিজেরই নিয়ন্ত্রণ নেই, তিনি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন নির্বাচন? তার বক্তব্যে জাতি হতবাক ও বিস্মিত বলে তারা মন্তব্য করেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫৭
আপনার মতামত জানানঃ