ভারতের উত্তরপ্রদেশের দুই সাংবাদিককে লক্ষ্য করে গুলি চালাল দুষ্কৃতীরা। গুলিবিদ্ধ দুই সাংবাদিকের নাম শ্যামসুন্দর পাণ্ডে ও লাড্ডু পাণ্ডে। দু’জনই প্রথম সারির হিন্দি সংবাদপত্রে কর্মরত। বর্তমানে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডয়েচে ভেলের খবরে বলা হয়, ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের শোনভদ্র অঞ্চলে। সেখানে কোলিয়ারি মার্কেটে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দুই সাংবাদিক একটি হোটেলে বসেছিলেন। তখনই বাইকে এসে আক্রমণকারী খুব কাছ থেকে তাদের গুলি করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। গুলি করেই আক্রমণকারী দ্রুত বাইক চালিয়ে পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই দুই সাংবাদিককেই বারাণসীর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুই সাংবাদিকের নাম লাড্ডু পাণ্ডে এবং শ্যামসুন্দর পাণ্ডে। কেন তাদের উপর হামলা হলো, তা এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দু’জনকে বিএইচইউ মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও দুজনেই বিপদমুক্ত বলে জানা গেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিনোদ কুমার সিং জানান, শ্যাম সুন্দর পান্ডে ও লাড্ডু পান্ডে নামে দুই সাংবাদিক খালিয়ারি বাজারে অবস্থিত একটি রেস্তোরাঁয় বসে চা খাচ্ছিলেন। এরপর দুটি অজ্ঞাত পরিচয়ের দুষ্কৃতী বাইকে এসে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং দুই সাংবাদিককে লক্ষ্য করে দুই-তিন রাউন্ড গুলি চালায়, এতে তারা দুজন আহত হয়।
এরপরেই স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেয়। এএসপি সিং জানান, দুজনকে প্রথমে ভেনি এলাকার কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসক তাদের জেলা হাসপাতালে এবং পরে বিএইচইউ মেডিকেল কলেজে রেফার করেন।
পুলিশ কর্তা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা এই ঘটনার পেছনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাইনি। এই দুই সাংবাদিক বিপদের বাইরে রয়েছেন এবং আমরা শীঘ্রই তাদের বক্তব্য রেকর্ড করব।’
ঘটনা প্রসঙ্গে স্টেশন হাউস অফিসার (এসএইচও) প্রণব শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘‘একটি হোটেলে বসেছিলেন দুই সাংবাদিক শ্যামসুন্দর পাণ্ডে ও লাড্ডু পাণ্ডে। সে সময়ই বাইকে করে দুষ্কৃতীরা এসে গুলি চালায়।’’ অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শ্যাম সুন্দর পান্ডে ও লাড্ডু পান্ডে নামে দুই সাংবাদিক খালিয়ারি বাজারে অবস্থিত একটি রেস্তোরাঁয় বসে চা খাচ্ছিলেন। এরপর দুটি অজ্ঞাত পরিচয়ের দুষ্কৃতী বাইকে এসে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং দুই সাংবাদিককে লক্ষ্য করে দুই-তিন রাউন্ড গুলি চালায়, এতে তারা দুজন আহত হয়।
এর আগেও উত্তরপ্রদেশে সাংবাদিকদের উপর হামলা হয়েছে। গত কয়েকবছরে ভারতে সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে বলে দাবি মানবাধিকার সংগঠনগুলির। এনিয়ে কোনো কোনো সংগঠন আন্দোলনেও নেমেছে। বস্তুত, ভারতে সংবাদমাধ্য়মের অধিকার নিয়েও গত কয়েকবছরে নানা মহলে বিতর্ক চলছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সংঘাতপ্রবণ এলাকার বাইরে সংবাদকর্মীদের নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। অনেক দেশেই দুর্নীতি, পাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো অনুসন্ধান করতে গিয়ে সাংবাদিকদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। তবে ভারতের সাংবাদিক নির্যাতন, হামলা ও মামলার ঘটনা অনেকটা নিয়মিত হয়ে উঠেছে।
২০২১ সালে দেশটিতে ১২১ জন সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম আক্রান্ত হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে অন্তত ৬ সাংবাদিককে। ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি মূল্যায়নকারী সংস্থা রাইটস অ্যান্ড রিস্কস অ্যানালিসিস গ্রুপ (আরআরএজি) এ তথ্য জানিয়েছে।
গত বছর ভারতজুড়ে ১৭ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে আরআরএজি। তাদের মধ্যে নারী সাংবাদিক আটজন।
মানবাধিকারকর্মীরা বলেন, ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দ্রুত কমছে। সংবাদমাধ্যমকে স্বাধীন রাখার সাংবিধানিক দায়বদ্ধতাকে সরকার ও কর্তৃপক্ষ ক্রমশ অগ্রাহ্য করছে। কেউ তাদের সমালোচনা করলেই হেনস্তা করা হচ্ছে। দেশদ্রোহের নামে সাংবাদিকদের জেলে পোরা হচ্ছে, অসংখ্য মামলার জালে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের জন্য এটা বিপজ্জনক।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯১৮
আপনার মতামত জানানঃ