দ্রুত পরিবর্তনশীল করোনা ভাইরাস আরেকটি অতি সংক্রামক ওমিক্রন মিউট্যান্টের জন্ম দিয়েছে। বিজ্ঞানীদের জন্য এটি একটি উদ্বেগজনক সংবাদ কারণ ভারতে এটির সংক্রমণ দেখা দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য অনেক দেশে এটির অস্তিত্ব শনাক্ত করা গেছে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বিএ ২.৭৫ নামক ভ্যারিয়েন্টটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং ভ্যাকসিন ও আগের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা ক্ষমতা পেতে পারে। বিশ্বব্যাপী বিএ .৫ সহ অন্যান্য ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় এটি আরও গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
ভারতে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ
সাম্প্রতিক মিউট্যান্টটি বৈশ্বিক সংক্রমণে দ্বিতীয় ও মৃত্যুর সংখ্যার তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা দেশটির বেশ কয়েকটি দূরবর্তী রাজ্যে দেখা গেছে এবং সেখানে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। নতুন দিল্লির কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ইন্সটিটিউট অফ জিনোমিক্স এন্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির একজন বিজ্ঞানী লিপি থাকরাল এ কথা বলেন।
বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে গত সপ্তাহে ডব্লিউএইচও প্রধান বলেছেন, গত দু’সপ্তাহে বিশ্বে কোভিড সংক্রমণ প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় বিএ.৪ ও বিএ.৫ এর সংক্রমণ ঘটেছে। ভারতে বিএ ২.৭৫ উপ-ধরনের হদিস পাওয়া গিয়েছে।
সংস্থাটির প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন জানিয়েছেন, করোনার এ নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিএ ২.৭৫ ভারতে প্রথম শনাক্ত হয়েছে। এরইমধ্যে উপ-ধরনটি বিশ্বের আরও ১০ দেশে ছড়িয়েছে।
সম্প্রতি ইসরায়েলের এক বিজ্ঞানী দাবি করেন, ভারতের ১০টি রাজ্যে করোনার নতুন উপ-ধরন বিএ ২.৭৫ সংক্রমণ ঘটেছে। ওই ১০টি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গও রয়েছে। গত কদিন ধরে দেশটিতে আবারও করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। এতে নতুন করে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।
চিকিৎসকদের একাংশের আশঙ্কা, নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও ভারতের একটা বড় অংশের জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এরই জেরে আরও বাড়ছে সংক্রমণ।
এদিকে, জুন মাসের শেষ সপ্তাহে ভারতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। ২৩ শে জুন এক ধাক্কায় দেশটিতে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন ১৭ হাজার ৩৩৬ জন। ফলে গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ দেখে ভারত।
সর্বশেষ ওমিক্রন মিউট্যান্ট মহামারীর গতিপথকে প্রভাবিত করতে পারে কিনা তা বোঝার জন্য কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
ইতোমধ্যে ভেলোরে ভারতের খ্রিস্টান মেডিকেল কলেজে ভাইরাস নিয়ে গবেষণারত ডক্টর গগনদীপ কাং বলেছেন, ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ জেনেটিক প্রচেষ্টাকে বাস্তব বিশ্বের তথ্যের সাথে মেলায় এবং ভাইরাসের সংক্রমণ কাকে কতটা খারাপভাবে অসুস্থ করে, তা ট্র্যাক এবং ট্রেস করার জন্য আরও টেকসই প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তাকে নির্দেশ করে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি
গতকালকে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ২০৩ জনে। একই সময়ে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫২১ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৯০ হাজার ৩৭৫ জনে।
২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১১০৫ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ১৪ হাজার ৩১৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া তিনজনই ঢাকার। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী।
তবে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা কমলেও বেড়েছে শনাক্তের হার। গতকালকের তথ্যানুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এরআগের ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ওইদিন পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণের হার ছিল প্রায় ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারির বর্তমান অবস্থাকে ‘চতুর্থ ঢেউ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, করোনার চতুর্থ ঢেউ মোকাবিলায় লকডাউনের মতো পদক্ষেপ প্রয়োজন পরবে না। তবে বেপরোয়াভাবে চলাচল বা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করা যাবে না। সব সময় মাস্ক পরতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, করোরাভাইরাসের নতুন ধরণ দ্রুত ও ব্যাপকভাবে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায় ১০ জনকে সংক্রমিত করে। তবে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সবার প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। যেসব স্বাস্থ্যবিধি আছে, তা যথাযথভাবে মেনে চলুন।’
ইমেরিটাস অধ্যাপক বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে শুরুতে লকডাউনসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। পরে লকডাউন আর না থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়।
তিনি বলেন, কিন্তু টিকাদানসহ নানা কারণে সংক্রমণের হার কমে আসার পর স্বাস্থ্যবিধি পালনে মানুষের উদাসিনতাও এখন লক্ষ্যণীয়। তবে সংক্রমণ ফের বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাস্ক বাধ্যতামূলক থাকার কথা আবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৪৫
আপনার মতামত জানানঃ