বিজেপির প্রাক্তন নেত্রী নূপুর শর্মার মন্তব্যের জেরে দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দেয়। উদয়পুরে নৃশংশভাবে দর্জি কানহাইয়া লালকে খুন হতে হয়। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে নবী সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগ করা হয়েছে নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে। এবার ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে হিন্দু দেব-দেবীদের ছবি দেওয়া কাগজ মুড়ে মাংস বিক্রির অভিযোগ উঠল উত্তরপ্রদেশের এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে। পুলিশ ইতিমধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত বরিবার এই ঘটনাটি ঘটেছিল।
জানা যায়, তালিব হুসেন নামে এক ব্যক্তি তার দোকানে হিন্দু দেব-দেবীর ছবি সম্বলিত একাধিক কাগজে করে মুরগির মাংস বিক্রি করছিল। যা নিয়ে স্থানীয় বেশ কয়েকজন অভিযোগ তুলেছিল। তারই ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ
তদন্তের কারণে স্থানীয় পুলিশ কর্মীরা হুসেনের দোকানে গিয়েছিল। কিন্তু হুসেন তখন তাদের দিকে মাংস কাটার ছুরি নিয়ে এগিয়ে আসে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের অভিযোগ হুসেন কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের খুন করার চেষ্টা করেছিল। তারপরই তালিব হুসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার সকাল থেকে উত্তরপ্রদেশে সম্বল থেকে একাধিক অভিযোগ আসে। অভিযোগে জানানো হয়, এক ব্যক্তি হিন্দুদের দেব-দেবীর ছবি দেওয়া কাগজে মুড়ে মুরগির মাংস বিক্রি করছে। এই ঘটনা তাদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করছে বলে অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়ার পরেই সম্বলের পুলিশ তালিব হুসেনের দোকানে অভিযান চালায়। পুলিশ দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে যান অভিযুক্ত মাংস বিক্রেতা তালিব। মাংস কাটার ছুড়ি নিয়ে পুলিশের ওপর অভিযুক্ত মাংস বিক্রেতা হামলা করে বলে অভিযোগ। তালিব হুসেনের বিরুদ্ধে পুলিশ ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত, খুনের চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গিয়েছে।
হুসেনের ছেলে জানিয়েছে, তার পরিবারের সদস্যরা ধর্মীয় সম্প্রীতির পক্ষেই রয়েছে। কিন্তু তার বাবার কোনও ভুল হয়েছিল। কারণ অন্যান্য দিনের মতই খাবার বিক্রির জন্য বাড়ি থেকে পুরনো খবরের কাগজ নিয়ে গিয়েছিল। তারমধ্যে যে ঠাকুর দেবতার ছবি রয়েছে তা হয়তো খেয়াল করেননি তার বাবা তালিব। গোটা ঘটনাটি তার ও তাদের পরিবারের কাছে ধোঁয়াশার মত। কারণ দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তারা দোকান চালাচ্ছেন। মুসলিম ক্রেতাদের পাশাপাশি হিন্দু ক্রেতাও রয়েছে। কোনও দিনও সমস্যা হয়নি।
তালিব হুসেন নামে এক ব্যক্তি তার দোকানে হিন্দু দেব-দেবীর ছবি সম্বলিত একাধিক কাগজে করে মুরগির মাংস বিক্রি করছিল। যা নিয়ে স্থানীয় বেশ কয়েকজন অভিযোগ তুলেছিল। তারই ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ
হুসেনের ছেলে আরও বলেছেন, খাবার প্যাকেট করার জন্য বাজার থেকেই তারা পুরনো কাগজ কমদামে কেনে।
হুসেনের আইনজীবী জানিয়েছে, তার মক্কেলকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তালিবের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগই ভিত্তিহীন।
চলতি বছরের জুন মাসের শুরুর থেকে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার নবীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ দেখানো হয়। কোথাও কোথাও সেই বিক্ষোভ হিংসার আকার ধারণ করে। বিক্ষোভের সময় একাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। কোথাও কোথাও বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দোকান লুঠ হয়েছে। বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়েন প্রাক্তন বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মা।
দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার আগুন জ্বালানোর জন্য সুপ্রিম কোর্ট তাকে দায়ী করে। তার প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও সুপ্রিম কোর্ট জানায়। বিশ্বের ২০টির বেশি দেশ নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ভারতের সমালোচনা করেছে।
নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যকে সমর্থন করার জন্য খুন হতে হয়েছে উদয়পুররে দর্জি কানহাইয়া লালকে। নূপুর শর্মার মন্তব্যকে সমর্থন করে ফেসবুকে একটি মন্তব্য করেন। তারপর থেকেই তিনি প্রাণহানির হুমকি পাচ্ছিলেন। তিনি নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তার অভিযোগ গুরুত্ব দেয়নি। কানহাইয়া লালকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
অভিযুক্তদের একজন কুপিয়ে হত্যা করে কানহাইয়া লালকে। অন্যজন তার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে। সেখানে তারা কানহাইয়া লালকে খুনের কথা স্বীকার করে নেয়।
ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কারণে লোকজনের ওপর হামলা ও উপাসনালয় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেড়েছে। ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ২০২১ সালজুড়ে হত্যা, হেনস্তা, হুমকিসহ নানা ধরনের হামলার শিকার হয়েছে।
বিশিষ্টরা বলছেন, বিজেপি শাসিত দেশটিতে ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়াবহতা বেড়েছে। সবসময় আতঙ্কে থাকে সংখ্যালঘুরা। প্রায় প্রতিদিনই দেশটির কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘু নির্যাতনের এই দৃশ্য দেখা যায়। দেশটিতে সংখ্যালঘুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানের উত্তাল পরিস্থিতিতে ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি আরও উত্তেজিত করে তুলেছে। আর এসবের দায় বিজেপি সরকারের ঘাড়েই দিতে চান বিশিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৫৭
আপনার মতামত জানানঃ