জলবায়ু বিরূপ প্রভাবে চিলির বিশাল হ্রদ শুকানোর দৃশ্য দেখা গেছে কদিন আগে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলছে পৃথিবীর মোট শিশুর প্রায় অর্ধেক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের কারণে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। গর্ভবতী নারীরাও সমান ঝুঁকিতে রয়েছে। বাদ যায়নি বন্যপ্রাণিরাও। সম্প্রতি পানির অভাবে মারা যাচ্ছে ইরাকের বন্যপ্রাণি গ্যাজেল।
বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে রেহাই পায়নি ইরাক। এতে অন্য সব প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের মতো ক্ষতির শিকার হয়েছে গ্যাজেল নামে হরিণের এক প্রজাতি। খাদ্যাভাবে অপুষ্টির শিকার এসব হরিণের খুব অযত্নও হয় বলে অভিযোগ। ফলে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে এরা।
জানা গেছে, এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে দক্ষিণ ইরাকের সাওয়া রিজার্ভে সরু শিংওয়ালা গ্যাজেলের সংখ্যা ১৪৮ থেকে ৮৭ তে নেমে এসেছে।
আর্থিক ফান্ডের পাশাপাশি ইরাকে রয়েছে বৃষ্টির ঘাটতি। এতে যথেষ্ট খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রাণীগুলো। দেশটির লেক ও কৃষিজমি শুকিয়ে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বারহাম সালেহ সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা ইরাকের জন্য একটি জাতীয় অগ্রাধিকার হতে হবে। কারণ এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি অস্তিত্বের হুমকি।
রিম গ্যাজেল নামেও পরিচিত শান্ত স্বভাবের প্রাণিগুলো তাদের আলতো বাঁকা শিং এবং বালির রঙের আবরণের কারণে বিখ্যাত। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার এই প্রাণিদের বিপন্নপ্রায় প্রাণির লাল তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে।
ইরাকের সংরক্ষণের বাইরে এদের বেশিরভাগই লিবিয়া, মিশর এবং আলজেরিয়ার মরুভূমিতে পাওয়া যায়। তবে লাল তালিকা অনুসারে সেসব জায়গায় এদের সংখ্যা কয়েক শতাধিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ইরাকের সাওয়া রিজার্ভের পরিচালক তুর্কি আল-জায়াশি বলেন, মে মাসের শেষের দিকে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে সেখানকার গ্যাজেলের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। তাদের আর খাবারের সরবরাহ নেই কারণ আমরা প্রয়োজনীয় তহবিল পাইনি। জলবায়ু দৃঢ়ভাবে গ্যাজেলগুলিকেও প্রভাবিত করেছে।
আর্থিক ফান্ডের পাশাপাশি ইরাকে রয়েছে বৃষ্টির ঘাটতি। এতে যথেষ্ট খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রাণীগুলো। দেশটির লেক ও কৃষিজমি শুকিয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সাবেক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, দেশটির উত্তরে আরো তিনটি রিজার্ভ থেকে গত তিন বছরে রিম গ্যাজেলের সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমে ২২৪-এ দাঁড়িয়েছে। বাগদাদের নিকটবর্তী ‘আল-মাদাইন’ এবং ‘দিয়ালা ও কিরকুক’ রিজার্ভে সরকারি অর্থায়নের অভাবের জন্য মজুদ হ্রাসকে দায়ী করেছেন তিনি।
২০০৭ সালে দক্ষিণের শহর সামাওয়াহের কাছে স্থাপিত সাওয়া রিজার্ভের প্রাণীরা সূর্যের প্রখর তাপে হাঁপাচ্ছে। সেখানে মাটিতে অনেক গ্যাজেলকে লুটিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
গ্রীষ্ম এখনও শুরু হয়নি কিন্তু দেশের কিছু অংশে তাপমাত্রা ইতিমধ্যে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পৌঁছেছে। তুরস্ক ও ইরানের উজানে বাঁধ এবং উপনদীতে কিছু নদীর স্তর নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ার কারণে খরার প্রভাব আরও জটিল হয়েছে।
গ্যাজেল একটি চমৎকার প্রাণী, যারা রিম গ্যাজেল নামেও পরিচিত। এদের আলতো বাঁকা শিং ও বালির রঙের আবরণ রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার প্রাণীটিকে বিপন্ন হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। ইরাকের রিজার্ভ ছাড়া এগুলো লিবিয়া, মিশর ও আলজেরিয়ার মরু অঞ্চলে অল্প সংখ্যায় পাওয়া যায়।
সাওয়া রিজার্ভের পরিচালক তুর্কি আল-জায়াশি বলেছেন, মে মাসের শেষ দিকে মাত্র এক মাসে সেখানে গ্যাজেলের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের ফান্ডের ঘাটতি রয়ছে। ফলে এখানে যথেষ্ট খাবারের সরবরাহ নেই। মূলত সরকার এখানে অর্থসহায়তা দিয়ে থাকে। দীর্ঘ যুদ্ধের পর দেশটি চরম অর্থসংকটে ভুগছে। ইরাকের কৃষি ও অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন।
ইরাক এবং সিরিয়ায় ভয়াবহ সংকটে দিন কাটাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। সিরিয়া ও ইরাকে ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ পানি, খাদ্য ও বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সম্প্রতি মানবিক সহায়তা বিষয়ক ১৩টি সংগঠনের সমন্বয়ে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।
তীব্র খরায় সিরিয়া-ইরাকে জলবায়ু পরিবর্তনে মধ্য প্রাচ্যের একাধিক দেশে আবহাওয়ার চরম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এমন শঙ্কার কথা শুনিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা জানিয়েছেন, ইরাক এবং সিরিয়ায় নেমে আসতে চলেছে তীব্র খরা। ভয়ঙ্কর হবে সেই খরা পরিস্থিতি। ১২ কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হবে। তীব্র খাদ্য সংকট তৈরি হবে সেসব জায়গায়। অনাবৃষ্টির কারণে তীব্র জল সংকট দেখা দেবে। তার জেরেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হবে। জল সংকট দেখা দেওয়ায় একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও কাজ করবে না। যার জেরে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দেবে। তার প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও। একাধিক চিকিৎসা পরিকাঠামো ভেঙে পড়বে বিদ্যুতের অভাবে। এমনই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখে পড়তে চলেছে ইরাক-সিরিয়া।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন থামানো বা এর গতিকে ধীর করে দেওয়ার জন্য অনেক কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কথাবার্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আসছে নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হবে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ–২৬)। এই সম্মেলনেও আগের ধারাবাহিকতা চালু থাকবে।
তারা বলেন, জলবায়ু সম্মেলনগুলোর মূল সুরে সমস্যা সমাধানের কোনো ব্যাপার থাকে না। কারণ, এর মধ্য দিয়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। কিন্তু এমন একটা ভাব করা হয় যে সমস্যাটি আমলে নেওয়া হয়েছে। কথা হচ্ছে, দুনিয়ার উন্নয়নের মডেল যেন প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা না করে প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাটি যেমন পরিবেশগত, তেমনি একই সঙ্গে তা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকও বটে। উন্নত দেশগুলোর কারণেই এই জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, ফলে তাদের কার্বন উদ্গিরণ হ্রাসে বাধ্য করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা, কার্যকর কূটনীতি ও রাজনীতি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫০০
আপনার মতামত জানানঃ