প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে টিকটক ভিডিও তৈরি করার অভিযোগে তোফায়েল আহমদ হুমায়ুন (২৫) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত যুবক তোফায়েল আহমদ সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের খোজারগাঁও গ্রামের আব্দুল কাদের এর ছেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গতকাল সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের কালারবাজার এলাকায় সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াছিনুল হক ও পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মশিউর রহমানের নেতৃত্বে সাদা পোশাকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় মৌলভীবাজার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর আহমদ বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
ওই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত যুবক তোফায়েল আহমদ হুমায়ুনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, অভিযুক্ত যুবক তোফায়েল আহমদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ব্যবহৃত s k. Tufayel Ahmed নামের আইডি থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে টিকটক ভিডিও তৈরি করে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে লোকজন পুলিশকে অবহিত করলে ওই বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। পরবর্তীতে তাকে আটকের পর থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এসব করেছে বলে স্বীকার করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের নিশ্চিত করে মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াছিনুল হক জানান, আটক যুবককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখম মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে এ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ এ আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়রানির এবং অপব্যহারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসবের মধ্যেই প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।
এ আইনে প্রতি মাসে গড়ে ৩৪টি মামলায় ৮৬ জনের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও লেখক আলী রীয়াজ। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘অন্তহীন দুঃস্বপ্ন-বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৮’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে মুখ্য আলোচকের আলোচনায় তিনি এই তথ্য জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘আমাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা নানাভাবে খর্ব হচ্ছে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা কী মানুষের আছে? রাজনৈতিক দলের নেতারাই যদি কথা বলতে না পারেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কথা বলবে কীভাবে? ডিএসএর ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। মুক্তভাবে তথ্য, কথা আদান-প্রদানের যে জায়গা ছিল, তা সংকুচিত হয়ে গেছে।
তারা বলেন, সরকারের সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। এই আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের যেসব ঘটনা ঘটছে, পরিষ্কারভাবে তা গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি।
তারা বলেন, যে নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছে, সে আইন নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে— এ আইন কার জন্য করা হয়েছে? আইন তো তৈরি করা হয় সাধারণ জনগণের জন্য। এই আইন আসলে কার নিরাপত্তা দিচ্ছে? এ আইনে যারা বাদী হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের কর্মী, এমপি, মন্ত্রী ও প্রশাসনের লোকজন। আর যারা আইনের শিকার হয়েছেন তারা সাংবাদিক, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট। আমাদের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের সাহস গড়ে তোলেন একজন লেখক, সাহিত্য, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক। তারা যেন মুক্তভাবে কথা বলতে পারে সেজন্য তাদের সমর্থন করুন। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি নিপীড়নমূলক আইন গণতন্ত্রের দেশে থাকতে পারে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫১
আপনার মতামত জানানঃ