একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ডাইনোসর নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। আগ্রহের শেষ নেই বিজ্ঞানী ও গবেষকদেরও।
সম্প্রতি ভারতের মধ্যপ্রদেশে আবিষ্কৃত ডাইনোসরের ডিম নিয়ে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ সেখানে আবিষ্কৃত ডিমের ভেতরেও ডিম রয়েছে। এই ধরনের ডাইনোসরের ডিম সম্ভবত জীবাশ্মের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আবিষ্কৃত হয়েছে।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি দল ডিমগুলো আবিষ্কার করেছেন।
মধ্যপ্রদেশের ডাইনোসর ফসিল ন্যাশনাল পার্কে ডিমগুলো আবিষ্কার করা হয়। ডিমগুলো দিয়েছে টাইটানোসর, যা সৌরোপড ডাইনোসরের একটি বিচিত্র রূপ।
আবিষ্কারটি সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা এই প্রথম ডাইনোসরের ডিমের মধ্যে ডিম দেখতে পান। যা শুধু পাখিদের মধ্যেই ঘটতে দেখা যায়। সরীসৃপের মধ্যে কখনই হয়নি।
জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, এই আবিষ্কার এটা বুঝায় যে, তাদের ডিম্বাণু আকারবিদ্যা পাখিদের মতোই যা এই সৌরোপড ডাইনোসরের ডিম পাড়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। এই নতুন আবিষ্কারে একথা স্পষ্ট যে ডিম্বাণু-ইন-ওভো (ডিমের মধ্যে ডিম) প্যাথলজি পাখিদের জন্য আলাদা কিছু নয়।
ডাইনোসরের জীবাশ্মের জন্য পরিচিত মধ্য ভারতের ক্রিটেসিয়াস ল্যামেটা গঠন। বিজ্ঞানীদের দলটি জাতীয় উদ্যানের কাছে টাইটানোসরের সৌরোপডের ৫২টি বাসা খুঁজে পায় যার একটির মধ্যে ১০টি ডিম রয়েছে। এর মধ্যে এই ডিমগুলো পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞানীরা এই প্রথম ডাইনোসরের ডিমের মধ্যে ডিম দেখতে পান। যা শুধু পাখিদের মধ্যেই ঘটতে দেখা যায়। সরীসৃপের মধ্যে কখনই হয়নি।
গবেষকরা বলছেন, ডিমের অস্বাভাবিকতার মধ্যে রয়েছে এর মাল্টি-খোলস বৈশিষ্ট্য যা অত্যন্ত মোটা।
তারা আশা করছেন, ডাইনোসরের প্রজনন জীববিজ্ঞানে কচ্ছপ, টিকটিকি বা কুমির এবং পাখির মতো ছিল কিনা তা এই ডিমগুলো প্রকাশ করতে পারে।
সাড়ে ছয় কোটি বছর আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে বিশাল দেহের বিভিন্ন প্রজাতির এক একটি ডাইনোসর। ডাইনোসর নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই জনমনে। বিজ্ঞানীরাও এ নিয়ে দিনের পর দিন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে ডাইনোসরের জীবাশ্ম। উন্মোক্ত হয়েছে অনেক রহস্য। তবে মানুষ যে তাদের সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জেনে উঠতে পারেনি, তা প্রমাণিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বিশাল শরীর আর দাপুটে মেজাজ নিয়ে প্রায় ১৭ কোটি বছর পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে ডাইনোসর। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী এবং বৈজ্ঞানিকদের অনুমান প্রভাবশালী প্রাণী এরা। প্রথম ডাইনোসরের বিবর্তন হয়েছিল আনুমানিক ২৩ কোটি বছর পূর্বে। কোটি কোটি বছর আগে তা বিলুপ্তও হয়ে গিয়েছে।
ধারণা করা হয়, ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে অন্তত ১০-১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত গ্রহাণুর আঘাতের পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু গত বছর যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং ও ব্রিস্টলের বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের ফসিলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, ওই উল্কাপাত বা গ্রহাণুর আঘাতের অন্তত ৫ কোটি বছর আগেই ডাইনোসরদের বিলুপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। গ্রহাণুর আঘাতে সেটি শেষ হয় মাত্র। পরিবর্তিত পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার কারণেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল বলে তারা মনে করেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাইনোসরের জন্মের সময় পৃথিবী ছিল উষ্ণ। কিন্তু দিনে দিনে পৃথিবী শীতল হয়ে আসতে শুরু করে। সমুদ্রের পানির উচ্চতাও নেমে যেতে শুরু করে। এর ফলেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হতে শুরু করে। ডাইনোসরের সঙ্গে স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্ম অনেকটা একই সময়ে হলেও স্তন্যপায়ী প্রাণীরা শীতল পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০৬
আপনার মতামত জানানঃ