প্রাকৃতিক দুর্যোগে বা নানা কারণে হারিয়ে যাওয়া বা ডুবে যাওয়া জাহাজের অনেক গুপ্তধন রয়েছে সমুদ্রতলে। এসব হারিয়ে যাওয়া মণি-মানিক্যের খোঁজে আজও চলে রোমাঞ্চকর অভিযান।
এমনই হারিয়ে যাওয়া গুপ্তধনের খোঁজ মিলেছে ডুবে যাওয়া এক জাহাজে।
তিন শতাব্দীর পুরানো জাহাজে গুপ্তধন। কলম্বিয়ায় সমুদ্রের তলদেশে জাহাজে মিলল বিপুল স্বর্ণমুদ্রা। যার বর্তমান বাজার মূল্য কয়েক বিলিয়ন ডলার। দ্য নিউজউইক সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এসব জিনিস জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য সংরক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইভান ডুক।
ডুবে যাওয়া বিখ্যাত জাহাজ সান জোসের ধ্বংসাবশেষের কাছে জাহাজটির সন্ধান পাওয়া গেছে।
নুড়ি পাথর আর বালুর আস্তরণে ঢাকা পড়েছে উজ্জ্বলতা। ক্যামেরার সাহায্য চলছে পর্যবেক্ষণ। অভিযানে সন্ধান মিলল তিন শতাব্দীর পুরোনো গুপ্তধনের। এমনই দৃশ্য ধরা পড়ে কলম্বিয়ার বোগাতার সমুদ্র তলদেশে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেট্রোর খবরে বলা হয়, গভীর সমুদ্রের তলদেশ থেকে সান জোস গ্যালিয়ন নামের একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ থেকে সম্প্রতি বেশ কিছু মূল্যবান স্বর্ণের মুদ্রার সন্ধান পেয়েছে কলম্বিয়ার নৌ কর্তৃপক্ষ। ধারণা করা হচ্ছে, ৩০০ বছর আগের অর্থাৎ ১৭০৮ সালে দেশটির বন্দরের কাছে ডুবে যাওয়া জাহাজ এটি।
একটি দূর নিয়ন্ত্রিত যানের মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশের ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। দূর নিয়ন্ত্রণ যানটিকে প্রায় ৩ হাজার ১০০ ফুট গভীরে পাঠানো হয়েছিল।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, নীল ও সবুজ রঙের ছবিতে সমুদ্রের তলদেশে সোনার মুদ্রা, মৃৎপাত্র ও অক্ষত চীনামাটির কাপ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
প্রাপ্ত মুদ্রাগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট ইভান ডুক। মুদ্রার পাশাপাশি বেশ কিছু ক্রোকারিজ এবং ফুলদানিও পাওয়া গেছে। ডুবে যাওয়া জাহাজটির কাছে আরেকটি স্প্যানিস ঔপনিবেশিক যুগের জাহাজেরও সন্ধান মিলেছে। সেই জাহাজের নাম নুয়েস্ট্রা সেনোরা দে আটোশা।
আমেরিকার ফ্লোরিডায় অবস্থিত একটি দ্বীপ শহর হল ‘কি ওয়েস্ট’। ১৬২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। নুয়েস্ট্রা সেনোরা দে আটোশা, সান্তা মার্গারিটা, দ্য স্প্যানিশ গ্যালন্স নামের তিনটি স্প্যানিশ জাহাজ কিউবা থেকে স্পেনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। জাহাজ তিনটিতে ছিল প্রচুর সোনা-রুপা, মহামূল্যবান হীরে সমেত প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারেরও অধিক সম্পদ।
৬ সেপ্টেম্বর কি ওয়েস্ট উপকূলের কাছে এসে জাহাজগুলো এক ভয়ানক ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়। সেখানে সব জাহাজই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং সমুদ্রে ডুবে যায়। এর প্রায় সাড়ে তিনশ বছর পর ১৯৮৫ সালে মেল ফিসার নামের এক ধনী গুপ্তধন সন্ধানী সেই গুপ্তধনের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। মেল ফিসার সমুদ্রের অন্তত ৬০০ ফুট নিচে একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান।
আচমকা স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। ১৬২২ সালে সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল যে স্প্যানিশ জাহাজ আটোশা— এ কি সেই আটোশা! যদি তা-ই হয়, তাহলে…! মেল ফিসার তার হৃৎপিণ্ডের প্রতিটি হৃদস্পন্দন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছেন। সেই দপদপানি শুনতে শুনতেই তিনি মনস্থির করে ফেললেন।
তিনি এই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ঢুকলেন। ১৯৮৫ সালের ২০ জুলাই মেল ফিসার সত্যিই তার স্বপ্নকে হাতের মুঠোয় ধরেছিলেন।
বুকের ভেতরে তাল-তাল সোনা, রুপো, হীরে আর পান্না নিয়েই আটোশা সত্যিই এতদিন সমুদ্রের তলদেশে নিশ্চুপ হয়ে পড়েছিল। সাড়ে তিনশ বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে।
মেল ফিসার আটোশাকে নিয়ে এলেন আবারও পৃথিবীর আলোয়। মেল ফিসারের দাবি, তিনি প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ সম্পদের সন্ধান পেয়েছেন।
এর মধ্যে ৪০ টন সিলভার ও সোনার বার, ১ লাখ স্প্যানিশ রৌপ্য মুদ্রা, সোনা ও রুপার হস্তনির্মিত সামগ্রী এবং নানা মণি-মুক্তা। কিন্তু অন্যান্য জাহাজের বেঁচে যাওয়া ক্যাপ্টেন ও নাবিকদের কথা অনুযায়ী আরও প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ ছিল অন্য জাহাজগুলোতে, যা এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যে ছিল প্রায় ১৭ টন রুপার বার, ১ লাখ ২৮ হাজার বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা, ২৭ কেজি পান্না এবং ৩৫টি স্বর্ণের বাক্স। এর খোঁজ এখনও চলছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেগুলো অধরাই রয়ে গেছে।
ইভান ডুক বলেন, আমরা দুটি জাহাজের সন্ধান পেয়েছি। একটি জাহাজ ঔপনিবেশিক সময়ের। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মনে হচ্ছে অন্যটি আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এ ছাড়াও আরও অনেকগুলো নৌকার সন্ধান পেয়েছে নৌ বাহিনীর সদস্যরা।
ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত জিনিসগুলো জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য সংরক্ষণ করা হতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫৫
আপনার মতামত জানানঃ