ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে পুরস্কৃত হন। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই বাংলার সাহিত্যপ্রেমিরা প্রবল আপত্তি সহকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা ও বাংলা একাডেমি নিয়ে ট্রল করেন। সে তালিকায় ছিলেন প্যারোডি গায়ক, ইউটিউবার রোদ্দুর রায়। এ অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ভারতের গোয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রোদ্দুর রায়কে। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি ২৪ ঘণ্টাসহ বেশ কয়েটি সংবাদমাধ্যম খবরটি নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, ট্রানজিট রিমান্ডে গোয়ার এক আদালতে তোলা হবে রোদ্দুর রায়কে। তারপর তাকে নেয়া হবে কলকাতায়।
কলকাতার পাটুলিসহ আরও কয়েকটি থানায় রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। যার মধ্যে জামিন অযোগ্য ধারায় একাধিক মামলাও রয়েছে।
জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাডেমি পুরস্কার পাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন রোদ্দুর রায়। সে সময় তার নামে একাধিক থানায় এফআইআর করা হয়েছিল।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার কলকাতার নজরুল মঞ্চে এক অনুষ্ঠানের পর হঠাৎ প্রয়াত হন বলিউডের গায়ক কে কে। মাত্র ৫৪ বছর বয়সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তার। এই মৃত্যু ঘিরে রয়েছে নানা বিতর্ক। নজরুল মঞ্চে দর্শক আসনের চেয়ে বেশিসংখ্যক দর্শকের উপস্থিতি, এসি না চলা, মঞ্চে ভিড় করাসহ একাধিক প্রসঙ্গ উঠে এসেছে এই ঘটনায়।
ফেসবুক লাইভে এসে রূপঙ্কর বাগচীর মন্তব্য থেকে শুরু করে সেদিন নজরুল মঞ্চে উপস্থিত থাকা তৃণমূল নেতা মদন মিত্রকে নিয়েও রোদ্দুর রায় নিজের ধরণে কথা বলেন। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না নিয়ে তাকে ‘দিদি’ সম্বোধন করে মন্তব্য করেন রোদ্দুর রায়। শুধু নজরুল মঞ্চের ঘটনাই নয়, মমতার প্রশাসনিক বৈঠক নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ও দুর্নীতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিযুক্ত করেন রোদ্দুর রায়।
এরপরই তার নামে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে ও তার জেরেই হয় একাধিক মামলা।
৩ জুন তৃণমূল নেতা ঋজু দত্ত চিৎপুর থানায় অভিযোগ করেন রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে।
এর আগে ১২ মে নিজেদের তৃণমূলের কর্মী হিসেবে দাবি করে রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন দুই ব্যক্তি। রোদ্দুর রায়ের নামে পাটুলি থানা ও লালবাজার সাইবার সেলে অভিযোগ করা হয়েছিল।
পাটুলি থানায় অভিযোগ করেছেন অরিত্র সাহা, সাইবার সেলে অভিযোগ করেন বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। দুজনেরই দাবি, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর সম্মানহানি করা হয়েছে তার বাংলা আকাডেমি পুরস্কার পাওয়ার পর। এই অপরাধে রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির দাবি জানান দুজনই। জামিন অযোগ্য ধারায় একাধিকবার এফআইআর করার পর অবশেষে গ্রেপ্তার হলেন রোদ্দুর রায়।
আনন্দবাজার অনলাইন প্রতিবেদনে জানায়, শনিবার রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযোগ হয়। পরে আনন্দবাজার অনলাইন তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি পুলিশি অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান। এছাড়া বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফেসবুকে লাইভ করেন রোদ্দুর রায়। ৩৭ মিনিটের সেই লাইভে তিনি বলেছেন, দুই বছর আগে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছিল। একই লাইভে তিনি মমতা ব্যানার্জির লেখা একটি কবিতার প্যারোডি করেন।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করার যে অভিযোগ উঠেছে সেটি গায়ক রুপঙ্কর বাগচি এবং অকালপ্রয়াত গায়ক কেকে সংক্রান্ত বিতর্কের সূত্র ধরে। কয়েক মিনিটের ওই ফেসবুক লাইভে রোদ্দুর রায় মমতা ব্যানার্জি সম্পর্কে ‘প্রচলিত কিছু শব্দ’ ব্যবহার করেছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা— এটা সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। যে অধিকার আইন করেও খর্ব করা যায় না। দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশে এই স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২২১০
আপনার মতামত জানানঃ