বাংলাদেশে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমছে। গত কয়েক বছরে শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ছিনতাই, ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, মিথ্যা মামলায় সাধারণ মানুষকে ফাঁসিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
এদিকে ফেনীতে ধর্ষণের অভিযোগে এক পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক তরুণী।
গতকাল মঙ্গলবার(২৪ মে) সন্ধ্যায় ওই তরুণী নিজেই বাদী হয়ে ফেনী সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এ মামলা করেন।
অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল শরীফ উদ্দিন বাবলু (২৬) ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার জামতলা চৌধুরী বাড়ির জামাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি বর্তমানে খাগড়াছড়ি পুলিশ লাইনসে কর্মরত।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ উপজেলার ওই তরুণীকে ফেনী পৌর শহরের মহিপাল এলাকায় একটি হোটেলে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন পুলিশ কনস্টেবল শরীফ। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই তরুণী মামলা করেন।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তরুণীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কনস্টেবল শরীফ উদ্দিন বাবলুর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা রুজু হয়েছে। এ বিষয়ে শিগগির আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে খুলনায় কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে পিবিআই পরিদর্শক মঞ্জুরুল আহসান মাসুদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত পিবিআই পরিদর্শক পলাতক রয়েছেন।
কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি পিবিআই ইন্সপেক্টর মঞ্জুরুল আহসান মাসুদকে চাকুরি হতে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করেছে কর্তৃপক্ষ। তাকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে এটা বলবো না৷ বলা উচিত এই প্রবণতা আগেও ছিল, এখনো আছে৷ আগে সেভাবে গণমাধ্যমে আসত না, এখন আসছে৷
পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফফিকুর রহমান জানান, গত ১৫ মে নগরীর ছোট মির্জাপুরের একটি বাড়ির নীচতলায় বিএল কলেজের এক শিক্ষার্থীকে পিবিআই ইন্সপেক্টর মঞ্জুরুল আহসান মাসুদ ধর্ষণ করেন— এই মর্মে সদর থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে মাসুদ পলাতক রয়েছে। পলাতক থাকা এবং মামলার আসামি হওয়ায় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি আরও জানান এলাকার সিসি ক্যামেরায় ফুটেজ থেকে পরিদর্শক মঞ্জুরুল আহসান মাসুদ এবং ছাত্রীটি ঐ বাড়ীতে একত্রে যাওয়া এবং অনেক পরে বের হয়ে আসার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ছাত্রীটি এর আগেও পিবিআই অফিসে মাসুদের সাথে দেখা করেছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুলিশের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে এটা বলবো না৷ বলা উচিত এই প্রবণতা আগেও ছিল, এখনো আছে৷ আগে সেভাবে গণমাধ্যমে আসত না, এখন আসছে৷ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও আগে সেভাবে খেয়াল রাখত না, এখন রাখছে৷ ফলে বিষয়টি সামনে চলে এসেছে৷
তারা মনে করেন, পুলিশের মধ্যে কোন পরিবর্তন হয়নি৷ তাদের কিছু বিভাগ বেড়েছে সত্যি, কিন্তু সেই ব্রিটিশ নিয়মেই তারা চলে৷ আর এই সংস্কারটা হচ্ছে না এর কারণ পুলিশকে অনেক বেশি রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হয়৷ পুলিশের মধ্যে এমন কোন ক্যারিশমেটিক নেতা আসেনি যে তারা নিজের উদ্যোগেই সংস্কার করবে৷ আর আমাদের অর্থনীতি যেভাবে বেড়েছে তাতে পুলিশের মধ্যে এই দিকে ধাবিত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে৷ অনেকেই অল্প দিনে ধনী হতে চান ফলে তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে। ফলে দেশে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনের খড়্গ চালানোর আগে পুলিশের ওপর চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, আগে পুলিশকে অপরাধমুক্তের চরিত্র অর্জন করতে হবে। নইলে সন্ত্রাসীদের নিকট পুলিশের যে ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, এতে পুলিশ আর সন্তাসীদের মধ্যকার তফাৎ ঘুচে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯২৩
আপনার মতামত জানানঃ