পদ্মা সেতু নিয়ে টিকটকে অপপ্রচার করার অভিযোগে হেলাল উদ্দিন ঢালী (২৩) নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ মে) শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন থানার উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিন। সন্ধ্যায় তাকে আদালতের মাধ্যমে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে সোমবার বিকালে সেতুর নিরাপত্তায় নিয়োজিত শেখ রাসেল সেনানিবাসের সেনাসদস্যরা পশ্চিম নাওডোবা এলাকা থেকে তাকে আটক করেছিল। আটক হেলাল উদ্দিন ঢালী (২৩) জাজিরা উপজেলার বিকেনগর পূর্ব কাজীকান্দি গ্রামের সিরাজ ঢালীর ছেলে। তিনি পদ্মা সেতুর নদীশাসন প্রকল্পের স্থানীয় শ্রমিক। মঙ্গলবার তার বিরুদ্ধে জাজিরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, হেলাল পদ্মা সেতুর নদীশাসন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রোতে শ্রমিকের কাজ করতেন। সোমবার বিকেলে সেতুর নিরাপত্তায় নিয়োজিত শেখ রাসেল সেনানিবাসের সেনাসদস্যরা পশ্চিম নাওডোবা এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন। তারা দেখতে পান সেতুর ৪২ নন্বর পিলারের কাছে হেলাল উদ্দিন টিকটক ভিডিও বানাচ্ছেন। তখন তাকে আটক করা হয়। জব্দ করা হয় দুটি মুঠোফোন। মুঠোফোনে পদ্মা সেতু নিয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারণার টিকটক ভিডিও পাওয়া যায়। পরে সেনাসদস্যরা হেলালকে জাজিরায় নিয়ে যান। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসা দিয়ে মঙ্গলবার হেলাল উদ্দিনকে জাজিরা থানায় হস্তান্তর করেন সেনাসদস্যরা। জাজিরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে হেলালের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। এ মামলায় সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির করা হয়। বিচারক আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে হেলালকে জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে এসআই জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, হেলাল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে সেতুর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অপপ্রচারমূলক ভিডিও বানাচ্ছিলেন। সেই ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছিলেন। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে এসব অভিযোগ স্বীকার করেছেন হেলাল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে কালো আইনের মাধ্যমে সরকার তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। কেউ যেন এই সরকারের নানা দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারে, সেই জন্যই এই সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তৈরি করে মানুষের মুখ বন্ধ রাখতে চায়।
তারা বলেন, আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা— এটা সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। যে অধিকার আইন করেও খর্ব করা যায় না। দুর্ভাগ্যবশত আজকে স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তী উদযাপন করার পরও আমরা এই স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি।
তারা বলেন, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার যেখানে স্বীকৃত, সেখানে তার অপব্যবহার হতেও পারে। তবু সেই অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের কথা স্মরণ করতে পারি: ‘জনগণের ইচ্ছাই যেকোনো সরকারের একমাত্র বৈধ ভিত্তি; আর আমাদের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করা।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭০৪
আপনার মতামত জানানঃ